দেশে কৃষক, বিদেশে পাচক
জীবিকা নির্বাহে মানুষ প্রতিনিয়তই যুদ্ধ করে চলছে। ভাগ্য পরিবর্তনে ভিটেমাটি বিক্রি করে অজপাড়াগাঁয়ের লোকজনও ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি জমান প্রবাসে। অদক্ষ শ্রমিক হিসেবেই শুরু হয় তাঁদের প্রবাস জীবন।
সেই অদক্ষতা কাটিয়ে অনেকে আবার নিজেকে তোলেন সাফল্যের সিঁড়িতে। তেমনই একজন মোহাম্মদ আবু জাফর (৪০)। মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা একসময়ের এই কৃষক এখন কুয়েতের নামী রেস্তোরাঁর পাচক (বাবুর্চি)।
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখান থানার লতুবদির গয়াতলা গ্রামের প্রয়াত আবদুল হামিদ বেপারীর ছেলে মোহাম্মদ আবু জাফর। সাত ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি নবম। মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছিলেন কিছুটা।
জাফরের কর্মজীবন শুরু হয় মালয়েশিয়ায়। তেমন সুবিধা করতে পারেননি সেখানে। দেশে ফিরে এসে শুরু করেন কৃষিকাজ। কিন্তু তাতে সংসারের অসচ্ছলতা ঘোচাতে পারছিলেন না।
সংসারে সচ্ছলতা আনতে ২০০২ সালে কুয়েতে পাড়ি জমান জাফর। এক লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে শ্রমিক ভিসায় একটি কৃষিখামারে কাজ শুরু করেন। দ্বিতীয় ধাপে প্রবাসে সাফল্যের চেষ্টার শুরু তখন থেকেই। এভাবেই চলে তিন-চার বছর। এরই মধ্যে সংসারের খরচের পাশাপাশি কিছুটা পুঁজিও জমা করেন আবু জাফর।
মালয়েশিয়ায় থাকা অবস্থায় আবু জাফর রান্নার কলাকৌশল কিছুটা আয়ত্ত করেছিলেন। সেই মেধা কাজে লাগিয়ে তিনি কুয়েতের চেবদি এলাকায় কৃষি অঞ্চলে ছোট আকারের একটি রেস্তোরাঁ খোলেন। আর এর মধ্য দিয়ে সফলতার সিঁড়ি বাইতে শুরু করেন তিনি। তবে কিছুদিনের মধ্যেই আবার হতাশ হতে হয় তাঁকে। ব্যবসায় প্রতিযোগীদের প্রতিহিংসার শিকার হন তিনি।
২০০৬ সালে দেশে ফেরেন আবু জাফর। সেই বছর মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থানার শীলপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা নজরুল শেখের বড় মেয়ে মরিয়মকে জীবনসঙ্গী করেন।
এর পর কয়েক মাস দেশে থেকে আবার কুয়েত চলে যান আবু জাফর। চাকরি খুঁজতে থাকেন। কিছুদিনের মধ্যেই একটি মুদির দোকানে কাজ পান তিনি।
মুদির দোকানে চাকরি করা অবস্থায়ই আবু জাফর একটি রেস্তোরাঁয় কাজের সুযোগ পান। পরে ওই রেস্তোরাঁয় প্রধান পাচকের সহকারী হন তিনি। সেখান থেকেই চায়নিজ খাবার তৈরি শেখেন তিনি।
কাউসার আহম্মেদ নামের আরেক বাংলাদেশি ছিলেন ওই রেস্তোরাঁর প্রধান পাচক। কাউসারই হাতে ধরে চায়নিজ খাবার তৈরির কাজটা শেখান জাফরকে।
বর্তমানে কুয়েতের নামী চায়নিজ রেস্তোরাঁ ‘সাংহাই চায়নিজ রেস্টুরেন্ট’-এর গ্রিল শেফ ও কাস্টমার সার্ভিসের দায়িত্বে আছেন আবু জাফর। এ চাকরির সুবাদে পাল্টে গেছে তাঁর জীবন।
জাফরের দেড় বছর বয়সী এক ছেলে আছে। তাঁর ইচ্ছা, দেশে ভালো একটি চায়নিজ রেস্তোরাঁ খোলা।