উৎসবে মেতেছেন রুশরা
উৎসবমুখর পরিবেশ ও আনন্দঘন আয়োজনের মধ্যদিয়ে রাশিয়ায় পালিত হচ্ছে ফ্যাসিবাদবিরোধী যুদ্ধ জয়ের ৭০তম বার্ষিকী। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ যুদ্ধ রাশিয়ায় ‘পিতৃভূমি রক্ষা যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। মহান এ বিজয় অর্জন উপলক্ষে প্রতিবছর ৯ মে নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করা হয় রাশিয়াতে।
রুশবাসীরা আজ ভাসছেন উৎসবের আনন্দে। রাশিয়ার প্রতিটি ঘরে যেন বইছে বিজয়ের উল্লাস। বলা হয়ে থাকে রাশিয়ার এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে পরিবারের কেউ না কেই এ যুদ্ধে মারা যায়নি; তাই এই দিনটি তাদের জন্য বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ একটি দিন । ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মানুষ ভুলতে পারেনি সেই দিনগুলো।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে এই দিনে প্রচণ্ড লড়াইয়ে সোভিয়েত বাহিনীর (রেড আর্মি) কাছে জার্মানির নাৎসি বাহিনী পরাজিত হয়েছিল। হিটলারের কোয়ালিশন বাহিনীর বিরুদ্ধে মহান পিতৃভূমি রক্ষা যুদ্ধ দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল যা পরবর্তী সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের জনগণের স্বাধীনতা বয়ে আনতে সহায়তা করেছিল ।
নয় লাখ সেনা নিয়ে গড়া সোভিয়েত বাহিনীর মুখোমুখি হয়েছিল ৯০ হাজারের জার্মান বাহিনী। এই ভয়াবহ যুদ্ধে আনুমানিক ছয় কোটি ২০ লাখ মানুষ মারা যায় এবং যাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ছিল সোভিয়েত নাগরিক। নিহতের এই বিশাল সংখ্যার মূল কারণ ছিল গণহত্যা আর অস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার।
আর যখন সময় গড়িয়ে একটি জাতি তাদের পিতৃভূমি রক্ষা যুদ্ধের ৭০তম বার্ষিকী উদযাপন করার সুযোগ পায় সেই আনন্দের বাঁধতো সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়াই উচিত। ঠিক সেই নিজ দেশের সীমানা ছাড়িয়েই বিশ্বের অন্তত ৩০টি দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউনেস্কো ও ইউরোপীয় কাউন্সিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিচালকরা এখন অবস্থান করছেন রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে।
বিজয়ের ৭০তম বার্ষিকী উদযাপনে যোগ দিতে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের আমন্ত্রণে যাঁরা মস্কোয় এসেছেন তাঁদের মধ্যে আছেন ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জি, কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনসহ আরো অনেকে।
যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে উপস্থিত হয়েছেন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য নিকোলাস সোমাস৷ তিনি সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের নাতি৷রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় সবকটি দেশকে আমন্ত্রণ জানালেও মাত্র চার-পাঁচটি দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত হয়েছেন৷
এদিকে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ১০ মে মস্কো সফরে আসবেন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে একত্রে যুদ্ধে নিহত মস্কোর নাম না জানা সেনাদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন৷ মূলত রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে মস্কো সফরে আসা বিদেশি অতিথিরা এই সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে থাকেন৷ দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় বার্লিন অভিযানে যেসব সোভিয়েত সৈন্য প্রাণ হারিয়েছিলেন, তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই গড়ে তোলা হয়েছিল এটি৷
বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের মধ্যে থাকে পিতৃভূমি রক্ষা যুদ্ধে অংশ নেওয়া যোদ্ধাদের সাথে সাক্ষাৎকার, রেড স্কায়ারে নজরকাড়া সামরিক কুঁচকাওয়াজ ও নিহত সৈন্যদের আত্মার শান্তিকামনা করে বিশেষ প্রার্থনা৷
সাধারণত রাজধানীবাসী এইদিনটি মস্কোর রেড স্কায়ার, বিজয় উদ্যানসহ যুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করেন৷ বিকেলে থাকবে রেড স্কায়ারে উন্মুক্ত কনসার্ট আর রাতের আকাশে চোখ জুড়ানো আতশবাজির নানা রঙের আলোকচ্ছটা৷
রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ হওয়ায় সময়ের তারতম্যের কারণে এক এক অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন স্থানীয় সময়ে বিজয় দিবস পালিত হয়৷ রাশিয়ায় বিজয় দিবস সবার প্রথম উদযাপিত হয়েছে দূর প্রাচ্যে৷ এ উপলক্ষে দূর প্রাচ্যের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে ঐতিহ্যবাহী পতাকা উত্তোলন করা হয়৷ বিজয় দিবসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় সামরিক কুঁচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয় মস্কোতে৷ মস্কোর রেড স্কোয়ারে স্ট্র্যাটেজিক রকেট টোপোল- এম ও সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক প্রদর্শন করা হয়৷ মস্কোর আকাশে উড্ডয়ন করে জঙ্গি বিমান ও হেলিকপ্টার। কুচকাওয়াজে এবারই প্রথম রাশিয়ার সবচেয়ে অত্যাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম প্রদর্শন করা হয়৷