রম্য
পাশের বাসার মেয়েটির জন্য
১
“যাসির! আজকে না তোমার রেজাল্ট দেওয়ার কথা ছিল? রেজাল্ট কার্ড কই?” হুংকার ছুঁড়লেন মিসেস সালমা ছেলের উদ্দেশে।
ভাইবারে কথা বলছিল যাসির, মায়ের হুংকার শুনে মোবাইল প্রায় হাত থেকে পড়ে যাচ্ছিল তার। এত কোমলমতি একটা মহিলা অথচ রেজাল্টের দিন এতটা হিংস্র কী করে হয়ে যান যাসির সেটা এখনো ঠাওর করতে পারে না। আর তার রেজাল্ট? সেটা তো হয়েছে বরাবরের মতোই! আল্লাহ জানেন আজকে কপালে কী আছে। আশপাশে কোনো অস্ত্র আছে কি না খেয়াল করে নিচ্ছে যাসির, আশপাশে অস্ত্র মানে কোনো কাঠের স্কেল বা কিছু থাকলে এখন রেজাল্ট কার্ড নিয়ে মায়ের সামনে না যাওয়াই ভালো, আর মা কোথায় আছেন তাও খেয়াল করে নিচ্ছে, কারণ মা যদি রান্নাঘরে থাকেন তাহলে যাওয়া যাবে না, না হলে রুটি বানানোর বেলন তার পিঠের ওপর ভাঙ্গার চান্সই বেশি, গতবার তো তাই হয়েছিল।
সব নওশিনের দোষ, এই নওশিন মেয়েটির জন্য তার জীবন একেবারে তেজপাতা হয়ে যাচ্ছে। নওশিন হলো তাদের পাশের বাসার মেয়ে, তার সাথে একই কলেজে পড়ে এবং প্রতিটি পরীক্ষায়ই তার চেয়ে পঞ্চাশ ষাট নম্বর করে বেশি পায়। নিশ্চই ঘরে ফেরার সময় নওশিনের মায়ের সাথে তার মায়ের দেখা হয়েছে, আর নওশিনের মা নিশ্চই তার মেয়ের রেজাল্টের কথা তার মাকে বলেছেন।
২.
দুরুদুরু বুকে রেজাল্ট কার্ড নিয়ে মায়ের কাছে গেল যাসির, মনে মনে যত প্রার্থনা আছে সব করে নিল সে।
রেজাল্ট কার্ড দিতেই আবার বাঘিনীর মতো হুংকার দিয়ে উঠলেন মিসেস সালমা।
‘হ্যাঁ! এ কি রেজাল্ট? আমার মান-সম্মান তো তুমি তোমার পরীক্ষার খাতায় ধুয়ে মুছে ছারখার করে দিয়ে এসেছ? এটা কোনো রেজাল্ট না রেজাল্টের জাত? পাশের বাসার নওশিনকে দেখ, ওরও দুটো কান, দুটো চোখ, দুটো হাত, দুটো পা, একটা মাথা আছে, তোমারও আছে, ওর বাবা-মা ওকে যা খেতে দেয় আমরাও তোমাকে তাই দেই।’ যাসির ভাবতে শুরু করল হাত-পা আর খাবারের সাথে রেজাল্টের সম্পর্ক কী! ওদিকে মিসেস সালমা ঝড়ের বেগে হুংকার দিয়ে চলছেন, ‘নওশিনের রেজাল্ট এত ভালো তোমার খারাপ কেন? ওর কি এমন আছে তোমার যা নেই? সারা দিন তো আছ খালি এক মোবাইল আর ল্যাপটপ নিয়ে, কী আছে ওই মোবাইল আর ল্যাপটপে? উত্তর দাও যাসির না হয় আজকে তোমার একদিন কি আমার একদিন! তোমার হাড্ডি দিয়ে যদি আজকে আমি ঘুড়ি না বানিয়েছি! কী কর তুমি সারাদিন? কী কারণে তোমার রেজাল্টের এই হাল? তোমাকে আজ বলতে হবে, সারাটা দিন তুমি কর কী?’
যাসির বরাবরের মতোই কোনো উত্তর দিতে পারল না। আর তারই ধারাবাহিকতায় যা হওয়ার তাই হলো। কিছুক্ষণ ওই রুম থেকে ধুমধাম কিছু আওয়াজ শোনা গেল, তারপর আবার সব চুপ।
৩.
যাসির আর নওশিন এক রিকশায়, নওশিনের রেজাল্ট ভালো হয়েছে এই উপলক্ষে তারা দুজন ঘুরতে বেরিয়েছে, যাসির আবার তার জন্য ফুল নিয়ে এসেছে তাকে অভিনন্দন জানাতে, নওশিন ফুল পেয়ে অনেক খুশি। সে যাসিরের সাথে বেশ কয়েকটা সেলফিও তুলল। তবে সেলফি তোলার সময় সে দেখল যাসিরের মন খারাপ। সে জিজ্ঞেস করল, ‘কি যাসির! তুমি আমার সাথে বাইরে এসেছে তাও তোমার মন খারাপ কেন?’
-কই না তো! মন খারাপ হবে কেন?
-তাহলে মুখ ওমন বাংলার পাঁচের মতো করে সেলফি তুলছ কেন? হাসি দাও।
যাসির হাসি দিয়ে সেলফি তুলল। নওশিন অনেক খুশি হাসিমুখে সেলফি তুলতে পেরে। যাসির মনে মনে ভাবছে, তার মা যদি আসলে জানত কী কারণে তার রেজাল্ট খারাপ হয়...