রম্য
প্রেমবার্ষিকী বনাম বিবাহবার্ষিকী
প্রেমবার্ষিকী
কাল মোখলেস আর সখিনার প্রেমবার্ষিকী, মোখলেস কখন ১২টা বাজবে তার জন্য অপেক্ষা করছে। ১২টা বাজলেই সে সখিনাকে ফোন করে উইশ করবে। তার সাথে আবার সখিনার মান অভিমান চলছে। সখিনা নাকি খবর পেয়েছে মোখলেস মর্জিনা নামের অন্য একটি মেয়ের সাথে দুষ্টুমি করছে। অথচ মোখলেস দাবি করছে সে মর্জিনাকে চেনেই না। মোখলেস তাই অপেক্ষায় আছে, আজ রাত ১২টা বাজলে ফোনে সব ঠিকঠাক করে নিবে। সে গিটার হাতে নিয়ে বসে আছে। ফোন করে ‘এতটা ভালোবাসি’ গানটা শোনাবে। কাল সকাল ৭টা বাজেই ঘুম থেকে উঠতে হবে তাকে। সারাদিন সখিনাকে নিয়ে তার অনেক পরিকল্পনা। তারা সারাদিন একসাথে ঘুরবে, তারপর বিকেলের দিকে তাদের যত তম প্রেমবার্ষিকী তাকে দশ দিয়ে গুণ করে ততটা মোম দিয়ে কেক কাটবে। ১০ দিয়ে গুণ করার কারণ তাদের প্রেম অনেক গভীর তা বোঝানো। তারপর সন্ধ্যায় শপিং করে বাসায় ফিরবে।
সব পরিকল্পনা মতোই হলো, সন্ধ্যায় কেক কেটে খুশি মনে, হাসি মুখে শপিং করতে গেল তারা। শপিং শেষে মোখলেস আর সখিনা বাড়ি ফিরল। তারা দুজনই ভীষণ খুশি। তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক যেন মধুর মতো।
সখিনা তাকে মর্জিনার সাথে দুষ্টুমির জন্যও মাফ করে দিল। আবেগাপ্লুত হয়ে জিজ্ঞেস করল ফেরার সময়, ‘ওগো! আমাদের এ প্রেমবার্ষিকী প্রতিবছর তুমি এভাবেই উদযাপন করবে তো?’ মোখলেস উত্তর দিল, ‘এই দিনটা সবসময় এভাবেই উদযাপন করতে তারা এই দিনেই বিয়ে করবে।’ মোখলেসের উত্তরে সখিনা খুশি হলো। এরপর তাদের এক একটা প্রেমবার্ষিকীর জন্য দুজনেই অপেক্ষা করে থাকে, একসাথে উদযাপন করে।
গঙ্গার জল অনেকদূর গড়াল, অনেক চড়াই উতরাই পার করে মোখলেস আর সখিনার বিয়ে হলো। মোখলেস কথা রেখেছিল, তারা তাদের প্রেমবার্ষিকীকেই বিবাহবার্ষিকী বানাবার জন্য এই দিনটাতেই বিয়ে করল।
বিবাহবার্ষিকী
কাল মোখলেস আর সখিনার বিবাহবার্ষিকী। অবশ্য তাদের কারোই মনে নেই সেটা। ওদিকে আবার সখিনা মোখলেসের সেই মর্জিনার সাথে একটা গোপন দুষ্টুমির আভাস পেয়েছে, এটা নিয়ে তাদের মাঝে তিনদিন ধরে ঝগড়া। সখিনা এটাকে কোনোভাবেই মাফ করবে না। কিন্তু মোখলেস এখনো দাবি করছে সে মর্জিনাকে চেনেই না। তিনদিন ধরে রাঁন্নাবান্না করছে না সখিনা বাসায়, এটাতে অবশ্য মোখলেসের সুবিধে হচ্ছে, বাজারে যেতে হচ্ছে না সাতসকালে। রাতে সখিনা খাটে শুয়ে আর মোখলেস সোফায়, এটাতেও অবশ্য তার তেমন আপত্তি নেই। কাল সকালে যদি একটু বেলা করে ঘুমানো যায় তাতেই হবে।
দুপুর ১২টায় সখিনার চিৎকার চ্যাঁচামেচিতে ঘুম ভাঙল মোখলেসের। ঘরে কারেন্ট নেই, তাই দশটা মোম আনতে পাঠাল তাকে সখিনা। মোম কিনে এনে সে ‘আমায় ভাসাইলিরে আমায় ডুবাইলিরে’- গানটা গাইছিল আনমনে। শেষ রক্ষা হলো না, সখিনা তার পূর্বপুরুষদের নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করে তাকে বাজার করতে পাঠাল। মোখলেস বিমর্ষ মনে, দুঃখিত মুখে বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাজার করে ফিরে এলো।
এরপর আবার রাতের বেলা তাদের গত রাতের মতো কেটে গেল।
কিছুই পরিকল্পনামতো হলো না, মোখলেস আর সকিনা দুজনেই দারুণ অখুশি। বিবাহবার্ষিকী কখন যাচ্ছে আর আসছে কেউ টেরই পাচ্ছে না।