আকাশি-সাদায় আর কি পারবেন মেসি?
আকাশি-সাদা জার্সি গায়ে আর কতদূর যেতে পারবেন মেসি? এ প্রশ্ন যেন সবারই। বয়সের বাধায় একদিন মাঠ ছেড়ে তো যেতেই হবে। তবে তিনি কি শিরোপা ছাড়াই থাকবেন? এই শিরোপার জন্য কত প্রশ্ন, কত আলোচনা-সমালোচনা। আর এত সব প্রশ্নের ভার যেন পড়েছে মেসির ঘাড়েই।
কারণ, বিশ্বসেরা ফুটবলারদের পাশে রয়েছে তাঁর নাম। সেইসঙ্গে আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি ফুটবলার ডিয়েগো ম্যারাডোনার যোগ্য উত্তরসূরি তিনি। ম্যারাডোনা পেরেছেন, মেসিও পারবেন, সে আশাতেই যত অপেক্ষা।
সেই ২০০৬ সালে যখন প্রথম বিশ্বকাপের মঞ্চ মাতাতে মাঠে নামেন, তখন থেকেই যেন দর্শক-সমর্থকদের নজর কাড়তে শুরু করেন মেসি। আর্জেন্টিনা সমর্থকদের আশা জন্মাতে লাগল, ম্যারাডোনার পর এই যুবকই একদিন আর্জেন্টিনার ঘর আলোকিত করবে।
সেই থেকে যাত্রা শুরু মেসির। এর আগেই ফুটবলের অন্যতম সেরা ক্লাব বার্সেলোনার হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন তিনি। আশা ছিল, আকাশি-সাদাতেও অনন্য হবেন তিনি। কিন্তু সে আশাতেই যত গুড়ে বালি। আর শিরোপা পেতেও তো কম চেষ্টা করেননি মেসি।
২০০৫ সালে আর্জেন্টিনার অনূর্ধ্ব-২০ দলের হয়ে যুব বিশ্বকাপ অর্জন করেছিলেন মেসি। হয়েছিলেন টুর্নামেন্ট-সেরা খেলোয়াড়। করেছিলেন সর্বোচ্চ গোল। তবে বয়স বিশের অধিক না হতেই ডাক পান জাতীয় দলে। এরপর একের পর এক সময় পার হয়েছে, শিরোপার খুব কাছে গিয়েও ব্যর্থ হতে হয়েছে অনেকবার। সেইসঙ্গে হতাশার আরেক নাম যেন হয়ে যায় লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।
তবে বার্সেলোনার জার্সি গায়ে দুহাত ভরে সাফল্য পেয়েছেন মেসি। শুধু জাতীয় দলের জার্সি গায়েই শেষটা দেখা হয়নি তাঁর। অনেকের মতে, ক্লাব ফুটবলের জন্যই মেসির জন্ম, জাতীয় দলের হয়ে নয়। তবে জাতীয় দলের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা কিন্তু এই মেসিই। আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে মোট ৬৮টি গোল তাঁর। বোঝাই যায়, জাতীয় দলে মেসিকে নিষ্প্রভ বলা হলেও চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেননি তিনি। কিন্তু শেষে এসেই খেতে হয় হোঁচট। থাকতে হয় মুকুটবিহীন রাজপুত্র হয়েই।
২০১৪ সালের বিশ্বকাপ যেন সারা জীবন মনে রাখবেন মেসি ভক্তরা। জার্মানির বিপক্ষে সেই হাতাশার ম্যাচ। শেষ সময়ের গোটজে ম্যাজিক তছনছ করে দেয় মেসিদের স্বপ্ন।
সেইসঙ্গে যোগ হয় কোপা আমেরিকা। হতাশার যেন শেষ নেই। এর আগে শেষ দুই কোপা আমেরিকার ফাইনালে উঠেও হারতে হয় টাইব্রেকার ভাগ্যে। দুবারই চিলির কাছে শিরোপা খোয়াতে হয় মেসিদের।
আর ২০১৬ সালে সেই চিলির কাছে হেরেই তো ফুটবল থেকে বিদায় নিয়েছিলেন মেসি। হতাশায় ডুবে যান সারা বিশ্বের মেসিভক্তরা। তবে ভক্ত ও সমর্থকদের কল্যাণে আবারও ফুটবলে ফেরেন এই আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।
এরপর আসে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে খেলা হবে কি না সেই দুর্ভাবনাতেই কাটে আর্জেন্টিনার সময়। তবে মেসির নৈপুণ্যে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের টিকেট পায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু অমন নড়বড়ে দল নিয়ে কী আর বিশ্বকাপ জেতা যায়? তাও যেন আশা ছাড়ে না ভক্তরা। শেষ পর্যন্ত দেখে যেতে চায় আর্জেন্টিনার ম্যাচ। দৈবাৎ যদি কিছু হয়ে যায়!
তবে এত সব শঙ্কা কাটিয়ে আবারও শিরোপা হাতছানি দিতে থাকে আর্জেন্টিনার ঘরে। কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে উঠে যায় আর্জেন্টিনা। তবে তা কি এতটাই সহজ? সামনে বর্তমান সময়ের সেরা দল ব্রাজিল। সব সমীকরণ বের করে যেন কোপা আমেরিকায় আর্জেন্টিনার ভাগ্যের থলেটা একটু বেশিই ভারি। আর গত দুবার তো কোপার ফাইনালও খেলেছিল আর্জেন্টিনা। এত সব সমীকরণ আর্জেন্টিনা সমর্থকদের আশা জাগাতে শুরু করে। কিন্তু সেই আশার পথ আরো দীর্ঘ করে ব্রাজিলের কাছে হারতে হয় ২-০ গোলে।
দলগতভাবে আর্জেন্টিনা খুব একটা শক্ত না হলেও খেলার সময় সবার চোখ যেন মেসির দিকেই থাকে। কারণ, অসম্ভব কিছু করে দেখানোর ক্ষমতা রয়েছে তাঁরই। কিন্তু আবারও ব্যর্থতায় মেসির শিরোপার খরা আরও দীর্ঘ হয়ে যায়। বাড়তে থাকে মেসির বয়সও।
সেই তরুণ কি আর রয়েছেন মেসি? দেখতে দেখতে কতটা সময় পার হয়ে গেছে, তা যেন বুঝতেই দেননি তিনি। খেলার নৈপুণ্যতায় নিজের বয়সও যেন আটকে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে তিনি আর তরুণটি নয়। মাঠ ছাড়তে হবে তাঁকেও। কিন্তু ফুটবলপ্রেমীদের প্রশ্ন, মেসি কি মুকুটবিহীন রাজা হয়েই বিদায় জানাবেন ফুটবলকে?