নজরকাড়া ডিজাইন আর দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের স্যামসাং গ্যালাক্সি ফোল্ডেবল ফোন
১৯৭৩ সালে ড. মার্টিন কুপারের বাজারে আনা প্রথম হাতে বহনযোগ্য মোবাইল ফোন থেকে বর্তমান যুগের আধুনিক ফিচারসম্পন্ন স্মার্টফোন—সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মুঠোফোনের বিবর্তন হয়েছে সমান তালে। এখন, মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য ও ট্রেন্ডের কথা মাথায় রেখে প্রতিনিয়তই নানাবিধ উদ্ভাবনী ডিজাইনের স্মার্টফোন বাজারে নিয়ে আসছে বড় বড় স্মার্টফোন নির্মাতারা। এর মধ্যে ডিজাইন, বহন করার ক্ষেত্রে সুবিধা ও পারফরমেন্সের দিক দিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সারা বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে ফোল্ডেবল ফোন। এক্ষেত্রে, দক্ষিণ কোরীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্যামসাংয়ের ফোল্ডেবল ফোনগুলো প্রথম থেকেই বাজারে এগিয়ে রয়েছে।
২০১৩ সাল থেকেই ফোল্ডেবল স্মার্টফোন বাজারে আনার তোড়জোড় শুরু করে স্যামসাং। অবশেষে, ২০১৯ সালে প্রথম ফোল্ডেবল স্মার্টফোন বাজারে আনার মাধ্যমে মানুষকে ফোল্ডেবলের স্মার্ট দুনিয়ার অভিজ্ঞতা দেয় শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি। এ বছর তৃতীয় প্রজন্মের ফোল্ডেবল স্মার্টফোন গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ৩ ফাইভজি ও জেড ফোল্ড৩ ফাইভজি বাজারে নিয়ে আসে স্যামসাং। ফোন দুটি উন্মোচনের পর থেকেই এগুলোর প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ ও স্টাইল প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছে। ব্যবহারকারীদের ফ্ল্যাগশিপের উদ্ভাবনী ফিচারের সঙ্গে কাজ করার, ভিডিও কনটেন্ট দেখার এবং গেম খেলার সব সুবিধা প্রদান করবে ডিভাইসগুলো। এরই মধ্যে, গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ৩ ফাইভজি-কে ‘২০২১ সালের সেরা ১০০ উদ্ভাবন’-এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে টাইম ম্যাগাজিন।
গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড৩ ফাইভজি’র প্রথম যে বিষয়টি যে কারও নজর কাড়বে, তা হচ্ছে—এর অভিনব স্টাইলিশ ডিজাইন। আপনি যদি একই সঙ্গে ফ্যাশন সচেতন ও প্রযুক্তিপ্রেমী হয়ে থাকেন, তবে নিঃসন্দেহে এই ফোল্ডেবল সেটটি হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ। একটি কফি কাপের (৩২০-৩৫০ গ্রাম) চেয়েও হালকা ওজনের হওয়ায় এই আর্মার অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেমের ফোনটি সহজেই বহন ও ব্যবহার করা যায়। ডিভাইসটির সামনে ও পেছনে গরিলা গ্লাস ভিক্টাস ব্যবহার করা হয়েছে, যা একে আরও টেকসই করে তুলেছে। আইপিএক্স৮ রেটিংযুক্ত এই স্মার্টফোনটি বিশ্বের প্রথম ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট ফোল্ডেবল ফোন।
ঝকঝকে ছবি তুলতে ডিভাইসটিতে রয়েছে ১২ মেগাপিক্সেল মেইন ওয়াইড ক্যামেরা, ১২ মেগাপিক্সেল আল্ট্রা ওয়াইড ক্যামেরা, ১২ মেগাপিক্সেল টেলিফটো ক্যামেরা। এ ছাড়াও, এতে ১০ মেগাপিক্সেল কভার ক্যামেরা ও চার মেগাপিক্সেল আন্ডার ডিসপ্লে ক্যামেরা থাকায় সেলফি তোলার পাশাপাশি ভিডিও কল বা ভিডিও কনফারেন্সের অভিজ্ঞতা হবে আরও চমৎকার।
গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড৩ ফাইভজিতে রয়েছে ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেটযুক্ত ৭.৬ ইঞ্চির ডায়নামিক অ্যামোলেড ২x ইনিফিনিটি ফ্লেক্সের সুবিশাল মেইন স্ক্রিন এবং ৬.২ ইঞ্চির ডায়নামিক অ্যামোলেড ২x ইনফিনিটি ও কভার স্ক্রিন। ফ্লেক্স মোড প্যানেল করে আরও সুবিধাজনকভাবে যেখানে-সেখানে মিটিং বা ভিডিও কলে কথা বলা যাবে আর মুভি দেখা যাবে। এ ছাড়াও, ফ্লেক্স মোডে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে। স্ক্রিনের আন্ডার ডিসপ্লে ক্যামেরা দিয়ে লাইভে যেয়ে নিচের স্ক্রিনে দেখা যাবে ফলোয়ারদের কমেন্ট। ফোনটিতে টাস্কবার পিনিং, মাল্টি অ্যাক্টিভ উইন্ডো, অ্যাপ কন্টিনিউটি, অ্যাডজাস্টেবল অ্যাসপেক্ট রেশিও থাকায় অফিসের কাজ আরও সহজে ও স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে করা যাবে।
বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির র্যাম এলপিডিডিআর৫ এর সঙ্গে ফোনে মাল্টিটাস্কিং কিংবা গেম খেলা হবে আরও উপভোগ্য ও ঝামেলাহীনভাবে। এতে সর্বাধুনিক কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৮৮ ৫জি ৫ ন্যানোমিটার চিপসেট ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে, এই ফোনে যেকোনো কাজ করা যাবে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। আর হাইপারফাস্ট ফাইভজি’র সঙ্গে স্ট্রিমিং ও গেমিংয়ে বাফারিংয়ের ঝামেলা পোহাতে হবে না।
ডিভাইসটিতে ৪,৪০০ মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি থাকায় ব্যবহারকারীদের ফোনের চার্জ নিয়ে চিন্তায় পড়তে হবে না। ২৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সুবিধা থাকায় ব্যবহারকারীরা মাত্র এক ঘণ্টায় ফোনটি ফুল চার্জ করতে পারবেন। ডিভাইস থেকে ডিভাইসে ওয়্যারলেস পাওয়ার শেয়ার ফিচার থাকায় অন্য ফোন থেকেও ফোনটি সহজে চার্জ দেওয়া যাবে। ফোল্ডেবল ফোনের সঙ্গে প্রথমবারের মতো স্যামসাং দিচ্ছে বিশেষ এস পেন। এই এস পেন ক্লাস কিংবা মিটিংয়ে নোট নেওয়ার অভিজ্ঞতায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।
অন্যদিকে, আপনার ফ্যাশন চয়েস যদি একটু ভিন্ন হয়, তবে স্যামসাং গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ৩ ফাইভজি ফোনটি হবে আপনার জন্য সেরা। গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ৩ ফাইভজি ফোনটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা পকেটে সহজে বহন করা যায় আর হাতের তালুতে রেখে অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। আকর্ষণীয় ডিজাইনের স্টাইলিশ এই ফোনটি শহুরে লাইফস্টাইলের সঙ্গে অত্যন্ত মানানসই।
জেড ফোল্ড৩ ফাইভজি’র মতো জেড ফ্লিপ৩ ৫জি-তেও আর্মার অ্যালুমিনিয়াম ফ্রেম ও সামনে-পেছনে গরিলা গ্লাস ভিক্টাস ব্যবহার করা হয়েছে এবং এটি আইপিএক্স৮ রেটিং যুক্ত ওয়াটার রেসিস্ট্যান্ট। এতে ১২০ হার্জ অ্যাডাপ্টিভ রিফ্রেশ রেটযুক্ত ৬.৭ ইঞ্চির ডায়নামিক অ্যামোলেড ২x ইনফিনিটি ফ্লেক্স মেইন স্ক্রিন ও ৬০ হার্জ রিফ্রেশ রেটযুক্ত ১.৯ ইঞ্চির এসঅ্যামোলেড কভার স্ক্রিন। ২২.৯ আসপেক্ট রেশিওতে যেকোনো ভিডিও কনটেন্ট আরও পরিষ্কারভাবে দেখা যাবে এবং ডলবি অ্যাটমস থাকায় গান শোনা ও মুভি দেখার অভিজ্ঞতা হবে আরও অসাধারণ। ফোনটির কভার স্ক্রিন নিজের সুবিধামতো কাস্টমাইজ করা যাবে। অ্যাপ কন্টিনিউটি ফিচার থাকায় কল এলে কভার স্ক্রিনে তা দেখে রিসিভ করা যাবে এবং কভার স্ক্রিনে নোটিফিকেশন দেখে ফোন আনফোল্ড করে সহজে অ্যাপ ওপেন করা যাবে।
দিন-রাত যেকোনো সময় স্পষ্ট ছবি তুলতে ডিভাইসটিতে রয়েছে ১২ মেগাপিক্সেল ওয়াইড, ১২ মেগাপিক্সেল আল্ট্রা ওয়াইড ও ১০ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ক্যামেরা। ফোনটি ফোল্ড থাকা অবস্থায় যেমন ছবি তোলা যাবে, তেমনই হাত ব্যবহার না করে ফ্লেক্স মোডেও অনায়াসে ছবি তোলা যাবে।
১৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিংয়ের সঙ্গে ৩,৩০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি থাকায় ঘরের বাইরে সারাদিন চার্জ নিয়ে ভাবতে হবে না। গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড৩-এর মতো এই ফোনটিতেও বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির র্যাম এলপিডিডিআর৫ ও চিপসেট হিসেবে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৮৮ ৫জি ৫ ন্যানোমিটার ব্যবহার করা হয়েছে, যা কাজে এনে দেবে দুর্দান্ত গতি। আর ফাইভজি’র সঙ্গে এই ফোনে নির্বিঘ্নে স্ট্রিমিংও করা যাবে।
গ্যালাক্সি জেড ফোল্ড৩ ৫জি ও গ্যালাক্সি জেড ফ্লিপ৩ ৫জি’র বাজারদর যথাক্রমে এক লাখ ৮৪ হাজার ৯৯৯ টাকা ও এক লাখ নয় হাজার ৯৯৯ টাকা। স্যামসাংয়ের ডিসেম্বর অফারে দুটি ফোনের সঙ্গেই উপহার হিসেবে থাকছে গ্যালাক্সি বাডস প্লাস। ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের গ্রাহকেরা ফোন দুটি বিনাসুদে ২৪ মাসের ইএমআই সুবিধায় কিনতে পারবেন। এক্ষেত্রে, ইবিএল গ্রাহকেরা তিন হাজার টাকা ক্যাশব্যাকও উপভোগ করতে পারবেন।