গাড়ি চলবে আকাশে
সকালবেলা বেরোচ্ছেন অফিসে যাবেন বলে। হাতে সময় ১৫ মিনিট, দূরত্ব ধরুন ১০ মাইল। চিন্তার কোনো কারণ নেই! কেন? কারণ আপনার গাড়িটি তো কেবল রাজপথে নয়, আকাশ এমনকি জলপথেও দিব্যি চলতে পারে তুফান-বেগে!
না, এটা কোনো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর ফ্যান্টাসি নয়। নেহাতই আসন্ন ভবিষ্যতের অনুমান। ব্যক্তিগত উড়ালযানের দিন আসতে আর বেশি দেরি নেই। এমনকি, এ জন্য নির্মাণগত বিশাল ঝক্কি পোহাতে হবে না বলেও ধারণা করছেন মিসি কামিংস! পেশায় তিনি এমআইটির (ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) অ্যারোনটিকস অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। বিবিসির প্রযুক্তিবিষয়ক অনলাইন পাতায় প্রকাশ করা হয়েছে আকাশপথের এই গাড়ির খবরটি।
পরিকল্পনাকারী মিসি মনে করছেন, ‘এমন দিন আসতে দেরি নেই যখন আমাদের ব্যক্তিগত গাড়িটি একই সাথে গাড়ি আর প্লেনের কাজ সারতে পারবে। এটি মূলত একটি রোবটচালিত গাড়ির সাথে ড্রোনের যুতসই সংযোগের মাধ্যমেই করা হবে। এতে করে আপনার গাড়িটিই হবে আপনার উড়োযান, কিংবা উড়োযানটিই গাড়ি! সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এ বাহনটিতে আপনার চালকের ভূমিকাও পালন করতে হবে না!’
কামিংস এ বিষয়ে আরো জানান, গণমাধ্যমে ড্রোনের ভাবমূর্তি কিছুটা বিতর্কিত; কারণ একে কার্যকরভাবে গোয়েন্দার ভূমিকাতেই বেশি দেখা গেছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এ বিষয়টি ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না যে বিমানে চড়ার সময় তাঁরা প্রকৃতপক্ষে একটি ড্রোনেই উঠে বসেন! এমনকি এয়ারবাস আর বিভিন্ন বোয়িং বিমানেও অবিকল ড্রোনের প্রযুক্তিই ব্যবহার করা হয়।’
ভবিষ্যতের জন্য ড্রোনই নিরাপদ মাধ্যম, কারণ চালক হিসেবে মানুষকে বিশেষ সুবিধার নয় বলে মনে করেন তিনি। তিনি এভাবে বলেন, যান চালানোর সময়ে যেকোনো প্রয়োজনীয় প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে মানুষ আধা সেকেন্ড আটকে থাকে। এই সামান্য আধ সেকেন্ডের মধ্যেই কিন্তু জীবন আর মৃত্যুর হিসাবনিকাশ হয়ে যেতে পারে! কম্পিউটার কিংবা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার এই সমস্যা নেই, কারণ তাদের কাজকর্মের হিসাব চলে মাইক্রোসেকেন্ডে! এ কারণেই আমাদের আগামী দিনের পরিবহন, তা আকাশপথেই হোক বা স্থলপথে; অনেক নিরাপদ হয়ে উঠবে যদি এটি মানব-নিয়ন্ত্রিত না হয়ে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত হয়।
উড়ন্ত গাড়ি নির্মাণ পরিকল্পনার পথে প্রযুক্তিগত কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই বলে মনে করেন অধ্যাপক কামিংস। তাঁর মতে, ব্যক্তিগত উড়ুক্কু গাড়ি বানাতে কোনো নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দরকার একদমই নেই। মূল প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে মানসিক আর সাংস্কৃতিক। উৎপাদনের মান বৃদ্ধি আর উৎপাদনের খরচ কমাতে হবে, আর এ জন্য প্রয়োজন আরো অনেক বেশি রোবট। এটা আসলে এমন এক প্রক্রিয়া, যেখানে আমাদের রোবট দিয়ে আরো রোবট বানাতে হবে; যাতে করে রোবটের দাম আরো কমে।
যান্ত্রিকশক্তির এই উত্থান নিয়ে কি চিন্তিত হওয়ার কিছু আছে? কামিংস কিন্তু এ রকম কিছু নিয়ে একদম চিন্তিত নন। তিনি বরং শঙ্কিত হ্যাকার আর সন্ত্রাসীদের নিয়ে। এ জন্যই তিনি বর্তমানে একটি বিশেষ প্রযুক্তির উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছেন। এই প্রযুক্তি যেকোনো উড়ন্ত রোবটের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে এবং জিপিএস বা অন্য কোনো সিগন্যাল ছাড়াই চলাফেরার সক্ষমতা দেবে।
কামিংস তো বলছেন, স্বপ্ন সত্যি হতে দেরি নেই। এখন শুধু অপেক্ষার পালা!