নওগাঁয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সোমপুর বৌদ্ধবিহার
ভাবতে পারেন নওগাঁয় দেখার মতো কী আছে? হঠাৎ মনে পড়ে যেতে পারে আপনার স্কুলের কথা। কেননা আপনি স্কুলে পড়েছেন ‘সোমপুর বৌদ্ধবিহার’। মন ভরে দেখার মতো বাংলাদেশে যত ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে, সোমপুর বিহার তার মধ্যে অন্যতম। এমন দর্শনীয় স্থান না দেখে এত কাছ থেকে ঘুরে যাবেন তা কি হয়? তাই বৌদ্ধবিহার দেখার প্লান করতে করতে আপনি সোমপুর বিহারসহ নওগাঁর ঐতিহাসিক জায়গা ঘুরে আসতে পারেন।
ব্যস্ততার কারণে যাওয়া হয় না আপনার অনেক জায়গা। হয়তো আপনাকে অফিসের কাজে বগুড়া যেতে হলো। তাই আপনার কলা বেচার ফাঁকে রথ দেখাটাও সেরে নিতে পারেন, মন্দ হয় না। বগুড়া থেকে নওগাঁ এক ঘণ্টার রাস্তা। কাজ শেষ করে নওগাঁর বাসে চেপে বসতে পারেন। নওগাঁর মহাদেবপুর পৌঁছাতে পারেন রাতে। এরপর ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে আপনি একটু ঘুমিয়ে নিতে পারেন আরামে।
খুব ভোরে ভূরিভোজ সেরে আপনি যাতায়াতের প্রয়োজনীয় তথ্য নিতে পারেন। রেকর্ড সংখ্যক টেম্পো, আটো, বাস বদলে যখন সোমপুর বিহারে উপস্থিত হবেন তখন সূর্যমামা মাঝগগনে পূর্ণ যৌবনে তাপ ছড়াবে হয়তো বা।
মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করতে সামনে পাবেন জাদুঘর। জাদুঘর থেকে মন্দিরে যেতে খানিকটা হাঁটতে হবে আপনাকে। স্থাপনা এলাকায় প্রবেশ করতেই চোখ ধাঁধানোর দৃশ্য। সোনালি ইটের ওপর রোদের আলো ঝলমল করছে। প্রবেশমুখ থেকে মূল মন্দিরে যেতে পথের দুই পাশে দেশি ফুলের বাগান আপনাকে মোহিত করবে, যা পুরাকীর্তিটির সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। ছবি তুলতে তুলতে মন্দিরের দিকে এগুতে থাকেন। বিশাল এলাকাজুড়ে পুরোনো দিনের ছোট ছোট ইট দিয়ে নির্মিত প্রশস্ত দেয়াল। দেয়ালের ধ্বংসাবশেষে বসে ছবি না তুললেই নয়। তাই আপনি ছবি তুলতে পারেন।
তিন-চার মিনিট হেঁটে পৌঁছাতে পারেন আপনি মূল মন্দিরে। মন্দিরের গায়ে অসংখ্য প্রাণীর ছবি আঁকা। আপনার কেন জানি মনে হতে পারে দেয়ালের প্রত্যেকটি ছবির অর্থ আছে। প্রাচীন মিসরীয় ভাষা হায়ারোগ্লিফের মতো। মন্দিরটি অনেক পুরোনো হওয়ায় ভেতরে প্রবেশের রাস্তাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। কেমন ভুতুড়ে পরিবেশ। পুরোনো ভাঙা ইটের ফাঁকে পা রেখে মন্দিরের চুড়ায় ওঠার চেষ্টা করতে পারেন। প্রায় চূড়ায় ওঠে গিয়েছেন এমন সময় চারদিক থেকে বিকট শব্দে প্রহরীরা বাঁশির শব্দ শুনতে পারেন। তার মানে আপনি বিপদ সীমায় উঠে পড়েছেন। এখন আপনাকে নেমে যেতে হবে। সেখানকার আনসারের নিকট জানতে পারবেন, একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল অনেক আগে। সেই থেকে কাউকে ওপরে উঠতে দেওয়া হয় না। পুরো মন্দির এলাকা ঘুরতে দুই ঘণ্টার মতো সময় লাগবে আপনার।
মন্দিরের চারপাশে কার্পেটের মতো সবুজ ঘাস। নরম ঘাসে হাঁটার অনুভূতি অসাধারণ। এলাকাটা পুরু দেয়াল দিয়ে ঘেরা। ভেতর থেকে সে দেয়ালে বসা যায়। হাঁটা যায়। মন্দিরের দক্ষিণ পাশে সেকালে অতিথিদের বসে গল্পের আসর জমানোর জন্য বসার ব্যবস্থা ছিল। ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও এখনো বসা যায়। আপনিও বসতে পারেন। তবে পুরোনো ইটের আসন বলে উঠতে হবে সাবধানে।
বিহার ও মন্দির দেখে এবার চলে যেতে পারেন জাদুঘরে। জাদুঘরে দেখতে পাবেন তাম্র শাসনের শিলালিপি, ব্রোঞ্জ ও পাথরের মূর্তি, পোড়ামাটির ফলক, সিলমোহর, রঙিন পাথরের গুটি, ছোট ছোট মাটির প্রদীপ, হাতিয়ার, বুদ্ধের মাথার মূর্তি, স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রা ইত্যাদি।
এতক্ষণে বুঝতেই পারবেন আপনার পেটে টান পড়েছে। দ্রুত বাসায় ফিরতে হবে। আবার টেম্পো, অটো, বাস, ভ্যানবদলের রেকর্ড।
অবস্থান
পাহাড়পুরের অবস্থান নওগাঁর বদলগাছি থানার পাহাড়পুর ইউনিয়নে। নওগাঁ মূলত সমতলভূমি এলাকা। তারপরও এই এলাকার নাম শুনে অপনার মনে কৌতূহল জাগতেই পারে। পাহাড় ছাড়া কীভাবে হলো পাহাড়পুর। অষ্টম শতাব্দী থেকে দশম শতাব্দী পর্যন্ত বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের শাসন ছিল। ১২ শতকের শেষের দিকে বৌদ্ধধর্ম একরকম উঠেই যায়।
আয়তন : পাহাড়পুরের পুরাকীর্তি এলাকাটির আয়তন ৪০ একর। তবে বিহার অঙ্গনের আয়তন ২৭ একর।
কীভাবে যাবেন : পাহাড়পুর নওগাঁ জেলা সদর থেকে ৩৪ কিলোমিটার উত্তরে পাহাড়পুর অবস্থিত। ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু ব্রিজ হয়ে বাসে ২৫০ টাকায় জয়পুরহাট যাবেন। জয়পুরহাট হতে বাস বা টেম্পোতে ১০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়পুর বাজারে নেমে পূর্বদিকে ৪০০ মিটার যাবেন।
কোথায় থাকবেন : জয়পুরহাটে থাকলেই আপনার জন্য ভালো হবে। তবে পাহাড়পুরে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি রেস্টহাউস আছে।
তবে ওখানে থাকতে হলে প্রত্নতত্ত্ব অফিস বগুড়া অথবা ঢাকা থেকে অনুমতি নিতে হবে। এ ছাড়া নওগাঁ ও জয়পুরহাটে অবস্থিত অনেক হোটেল আছে, তাতেও থাকতে পারবেন সীমিত খরচে।
কী খাবেন : নওগাঁ জেলার খাবারদাবার দেশের অনন্য জেলার মানুষের মতোই। প্রায় সব হোটেলেই ভাত, ডাল মাছ, মাংস পাওয়া যায়। রুটি, পরেটা, সবজিও পাওয়া যায় সকালের নাশতা হিসেবে।
নওগাঁ জেলা চাল উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের জন্য বিখ্যাত। পোলাও, পায়েস বা বিরিয়ানির জন্য কম দামে ভালো মানের চাল নিয়ে আসতে পারেন। তাই আর দেরি না করে প্ল্যান করে চলে যেতে পারেন সোমপুর বিহারসহ নওগাঁর ঐতিহাসিক জায়গায়। আর এমন দর্শনীয় স্থান দেখে আপনি মুগ্ধ হয়ে ঢাকায় ফিরে আসতে পারেন এক ভিন্নরকম স্মৃতি নিয়ে।