রক্তক্ষয়ী বিক্ষোভ ও সেনা অভ্যুত্থান প্রশ্নে বিভক্ত মিয়ানমারের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা
মিয়ানমারে চলমান রক্তক্ষয়ী জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ প্রশ্নে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। ৯০ শতাংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষের দেশ মিয়ানমারের রাজনীতিতে ভিক্ষুদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। কিছু কিছু ভিক্ষুর রয়েছে বিপুল সংখ্যক ভক্ত-অনুসারী।
ভিক্ষুদের অনেকেই সামরিক বাহিনীর পক্ষ নিয়েছেন। আবার অনেকে কথা বলছেন বিক্ষোভকারীদের অধিকারের পক্ষে। আন্দোলনেও অংশ নিচ্ছেন বহু বৌদ্ধ ভিক্ষু। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
উ পার মাউক খা এবং উ সান্দার থিরি নামের দুই পক্ষের দুজন ভিক্ষুর সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। সামরিক বাহিনীর পক্ষ নেওয়া উ পার মাউক খা বলেন, ‘আমি মনে করি, সামরিক বাহিনী সংবিধান অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছে।’
মগওয়ে মনাস্টারি চীফ হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জান্তাপন্থি ভিক্ষু উ পার মাউক খা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে ভোটের অনিয়ম ও ত্রুটিগুলো শুধরে নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু, কমিশন তাতে সাড়া না দেওয়ায় সেনা প্রধান উদ্যোগ নিয়েছেন।’
অভ্যুত্থানের পরপরই এক বছরের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এই একটা বছর তাঁদের সময় দিয়ে অপেক্ষা করার আহ্বান জানান ভিক্ষু উ পার মাউক খা।
তবে বিক্ষোভে দমনপীড়ন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে জান্তাপন্থি এই ভিক্ষু বলেন, ‘সামরিক সরকার তো আইন জারি করে তা প্রকাশ করে দিয়েছে। কিন্তু বিক্ষোভকারী সগক অবরোধ করছে, পাথর ছুড়ছে এবং গুলতি ব্যবহার করছে।’
পৈত ভিক্ষু নামে পরিচিত জান্তা বিরোধী ভিক্ষু উ সান্দার থিরি বিবিসিকে বলেন, ‘সামরিক স্বৈরাচারী সরকারের হাতে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। সামরিক বাহিনীর অনেকগুলো অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। এসব স্বার্থ রক্ষায় তাকে ক্ষমতায় থাকতেই হবে। এজন্য তারা সেনা অভ্যুত্থানকে যৌক্তিক প্রমাণে ভোটে অনিয়মের অভিযোগকে ব্যবহার করেছে। যদিও সেসব অভিযোগ সত্য নয়।’
জান্তা বিরোধী অবস্থান নেওয়া এই ভিক্ষু বিক্ষোভ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। আটক করা হচ্ছে এবং বেধড়ক পেটানো হচ্ছে। জনগণের ওপর ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করছে নিরাপত্তা বাহিনী।’
মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশটির বেসামরিক নেত্রী অং সান সুচিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে বন্দি করে। এরপর থেকে সেখানে চলছে জান্তাবিরোধী রক্তক্ষয়ী প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। এতে সাধারণ আন্দোলনকারীদের রক্ত ঝরার মাত্রা বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন এবং তাঁদের এক-চতুর্থাংশের মাথায় গুলি করা হয়েছিল। আটক করা হয়েছে তিন হাজারের বেশি মানুষকে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারসের (এএপিপি) এসব তথ্য জানিয়েছে।