‘রাজনীতিকেরা আমাকে ভুয়া তথ্য ছড়াতে নিয়োগ দিয়েছেন’
রাজনৈতিক অঙ্গণে একের পর এক মিথ্যাচার এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা ও ভুয়া তথ্যের ছড়াছড়ির মধ্যেই আগামীকাল সোমবার ফিলিপাইনের ভোটারেরা দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন। খবর সংবাদমাধ্যম বিবিসির।
জন (ছদ্মনাম) নামের এক ব্যক্তি নিজেকে ফিলিপাইনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মার্কেটিং পরামর্শক বলে দাবি করে বলেন, ‘আমি নিজেকে ট্রল হিসেবে বিবেচনা করি, কিংবা রাজনৈতিকভাবে বলতে গেলে—আমি একজন সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং পরামর্শদাতা।’
জন এমন একটি কাজের অংশ, যেটি ফিলিপাইনের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
জন জানান, তিনি বেশির ভাগ দিন ছয় ঘণ্টা করে কাজ করে আসছেন। পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ফিলিপাইনের একাধিক রাজনীতিবিদের নির্বাচনি প্রচারণার জন্য শত শত ফেসবুক পেজ এবং ভুয়া প্রোফাইল দেখভাল করেন জন।
জনের দাবি—তাঁর গ্রাহকদের মধ্যে রয়েছেন গভর্নর, কংগ্রেস সদস্য এমনকি মেয়রও।
আগামীকাল, ফিলিপিনো ভোটারেরা দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেবেন। একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি দপ্তরের প্রার্থীদের ভোটাভুটিতেও অংশ নেবেন ভোটারেরা। ২০১৬ সালে রদ্রিগো দুতের্তের বিজয়ের পর আবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে দেশটিতে। অভিযোগ রয়েছে—রদ্রিগো গত নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি ও ভুয়া খবরের আশ্রয় নিয়ে জয় পেয়েছিলেন।
নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য বিশ্লেষকেরা বলছেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনের পর থেকে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি, বরং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
অপতথ্য ব্যবস্থাপনা
জন ফিলিপাইনে অপতথ্য ছড়ানোর জালের একটি অংশ। তিনি জানান, তাঁর অধীনে প্রায় ৩০টি ‘ট্রল’ সরাসরি কাজ করছে। এসব ‘ট্রল’-এর উদ্দেশ্য হলো—গ্রাহকের প্রতি সমর্থন বাড়ানো; সেটি হতে পারে মিথ্যা কিংবা ভুয়া খবর বা তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমেও। জন জানান, তিনি বছরের পর বছর ধরে এসব কাজ করে আসছেন।
জন বলেন, ‘২০১৩ সালে আমি যেসব প্রদেশ নিয়ে কাজ করেছিলাম, তার একটিতে আমরা ভুয়া খবর ছড়িয়েছিলাম।’
জন কীভাবে তাঁর ক্লায়েন্টের প্রতিপক্ষকে ফাঁদে ফেলেছিলেন, তার বর্ণনা দেন এভাবে—‘আমরা শীর্ষস্থানীয় ওই রাজনীতিকের মোবাইলফোন নম্বর হাতে পেয়ে যাই। এরপর নম্বরটি ফটোশপ করে লোকজনের মুঠোফোনে ভুয়া বার্তা ছড়িয়ে দিই যে, ওই রাজনীতিক একজন রক্ষিতা খুঁজছেন। ঘটনাক্রমে, আমি যাঁর হয়ে কাজ করেছিলাম, সেই রাজনীতিক নির্বাচনে জিতে যান।’
জন তাঁর দাবির সত্যতা প্রমাণের জন্য, বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা একাধিক ভিডিও বিবিসিকে পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
এ ছাড়া জন তাঁর নিয়োগকারীদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ চালাচালির স্ক্রিনশটসহ ব্যাংক স্লিপ, ভুয়া আইডি এবং ফেসবুক যাচাইকরণ প্রক্রিয়াকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত একাধিক সিমকার্ডও বিবিসিকে পাঠিয়েছে।
নিরাপত্তা-সংক্রান্ত কারণে জনের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করেনি বিবিসি।
আরেকটি কৌশল জন ব্যবহার করেছিলেন বলেও জানান। তিনি রাজনৈতিক প্রচারণাকে মোকাবিলার জন্য ফেসবুকে বিভিন্ন অরাজনৈতিক পেজ ও গ্রুপ তৈরি করেছিলেন।
ফেসবুকের মালিক সংস্থা মেটা বলছে—ফিলিপাইনে তারা এমন বেশ কয়েকটি নেটওয়ার্ক মুছে দিয়েছে, যেগুলো লোকজনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিল। মেটা জানিয়েছে, এসব নেটওয়ার্কের মধ্যে চার শতাধিক বেশি অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ ছিল, যেগুলো মেটার নীতিমালা লঙ্ঘন করেছিল৷
‘ওপেন সিক্রেট’
ফিলিপাইনের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে অপতথ্যের কারসাজি যে প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে অনেক প্রার্থীই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ফিলিপাইনের একটি নিউজ চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাত্কারে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী লেনি রব্রেদো বলেছেন, ভুয়া খবরের সমস্যাগুলো তিনি প্রাথমিকভাবে উপেক্ষা করেছিলেন। কিন্তু, তাতে ‘কাজ হয়নি।’
লেনি রব্রেদো বলেন, ‘মিথ্যা বারবার বলতে থাকলে তা-ই সত্য হয়ে ওঠে।’
আরেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী সাবেক মুষ্টিযোদ্ধা ম্যানি প্যাকিয়াও ভুয়া খবর ও অপতথ্য ‘নিয়ন্ত্রণের’ প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সরব হয়েছেন।