বন্দিশিবিরে অভিবাসীদের রাখা হয় পশুর খাঁচায়!
দাসপ্রথার সময় এমন দৃশ্য অনেক দেখেছে মানুষ। তখন দাসদের খাঁচায় পুরে রাখত সভ্য নামধারী মানুষরাই। দাসপ্রথা বিলোপের এতকাল পরে এসে একই নৃশংসতা দেখছে বিশ্ববাসী। গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারকারীদের বেশ কয়েকটি বন্দিশিবিরের খোঁজ পাওয়া যায়, যেখানে অভিবাসনপ্রত্যাশী মানুষদের পুরে রাখা হতো।
আজ শুক্রবার মালয়েশিয়ার দ্য সান ডেইলিতে এ-সংক্রান্ত একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটির শিরোনাম করা হয়েছে ‘সীমান্তে আরো আতঙ্ক’।
মালয়েশিয়া পুলিশের বরাতে প্রতিবেদনের তথ্যগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, মালয়েশিয়ার সঙ্গে থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী এলাকা কেদা, পেরাক ও কেলানতানে গত কয়েকদিনের অভিযানে ভয়ংকর সব মানবপাচারের বন্দিশিবির (ক্যাম্প) ও গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। অবহেলায় পড়ে থাকা নির্জন, অচিহ্নিত কবরগুলোতে শুয়ে আছেন সেই সব হতভাগ্য অভিবাসী, মৃত্যুর আগে যাঁদের সঙ্গে পশুর মতো ব্যবহার করা হয়েছে। তাঁরা এসেছিলেন সমৃদ্ধ জীবনের আশায়, সেই মানুষদের রাখা হতো পশুর জন্য তৈরি খাঁচায়। এর মধ্য থেকে কিছু ‘ভাগ্যবান’কে বিক্রি করে দেওয়া হতো এক মানবপাচারকারী থেকে আরেক পাচারকারীর কাছে, আর যাঁদের বিক্রি করা যেত না, তাঁদের করুণ মৃত্যু হতো খাঁচাতেই।
মানবপাচারের ক্যাম্পে এমন খাঁচা আবিষ্কার করার পর চমকে যান মালয়েশিয়ার পুলিশের কর্মকর্তারা। গত কয়েকদিনে মালয়েশিয়ায় থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে কেদান, পেরাক ও কেলানতান এলাকায় শতাধিক পরিত্যক্ত ক্যাম্প আবিষ্কৃত হয়েছে, যাতে মানুষ বন্দী করে রাখার একাধিক খাঁচা ছিল।
এর আগে গত সপ্তাহে এক অভিযানে মালয়েশিয়া ও থাই সীমান্তের বুকিত জেনটিং পিরাহ ও পুকিত ওয়াং বার্মা এলাকায় আরো ১৩৯টি কবর ও ২৮টি ক্যাম্পের খোঁজ পাওয়ার পর পুলিশের উচ্চপর্যায় থেকে ওই এলাকায় অভিযান চালানোর নির্দেশ আসে। এরপরই পুলিশি অভিযানে আরো গণকবর ও অভিবাসীদের বন্দী ক্যাম্পে এ ধরনের মানুষ রাখার খাঁচার খোঁজ মেলে।
গত সপ্তাহের শনিবার পার্লিস সীমান্ত এলাকায় প্রথম এ ধরনের ক্যাম্প ও কবরের সন্ধান পাওয়া যায় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।
দ্য সান ডেইলি জানায়, এসব অবৈধ অভিবাসী মিয়ানমার ও বাংলাদেশের। এক বছরের বেশি সময় আগে তাদের থাইল্যান্ডের জলসীমা দিয়ে পাচার করে এনে ক্যাম্পগুলোতে রাখা হয়েছিল। পাচারকারীরা এই অভিবাসীদের দক্ষিণ থাইল্যান্ড থেকে কিনে এনেছিল বলেও জানায় সংবাদমাধ্যমটি।
অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সরেজমিন দেখার পর বোঝা গেছে, বন্দীদের মূলত খাঁচায় রাখা হতো। এরপর ক্যাম্প থেকে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে মুক্তিপণের বিষয়ে দরদাম করা হতো। মুক্তিপণ না তাঁদের অন্য পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করা হতো অথবা মেরে ফেলা হতো। কারণ তখন পাচারকারীদের কাছে ওই হতভাগ্য অভিবাসীদের দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো রাস্তাই খোলা থাকত না।
কবর থেকে ওঠানো কিছু লাশ পরীক্ষা করে জানা যায়, অভিবাসীদের বেশির ভাগই অনাহারে বা রোগাক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। কিছু মারা যায় গুলি খেয়ে অথবা ছুরি কিংবা ভারী কিছুর আঘাতে।
দুর্গম ওই এলাকায় অভিযান চালানো মালয়েশিয়ার পুলিশ ও ফরেনসিক বিভাগের জন্য ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়েছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এমন দুর্গম এলাকায় এত অভিবাসীকে কীভাবে আনা হয়েছিল সেটা একটা রহস্য। সীমান্তরক্ষী ও নৌ টহল বাহিনীর দৃষ্টি এড়িয়ে এখানে আনা অসম্ভবই বলা চলে।’
গত কয়েকদিনের অভিযানে বৈরী আবহাওয়া ও পরিবেশে পুলিশের বেশ কিছু সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়েন। পুলিশের সূত্র জানায়, এসব জঙ্গলে মশা ও বিষাক্ত জীবাণুর উপদ্রব রয়েছে। শতমিটার ওপর থেকে নিচে পড়ে যাওয়া ঠেকাতে একজনকে আরেকজনের শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখতে হয়।