পদত্যাগ করছেন না মুগাবে
দলপ্রধানের পদ থেকে বহিষ্কারের পর জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার জন্য রবার্ট মুগাবের প্রতি আহ্বান জানানো হলেও তিনি পদ ছাড়ছেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।
গতকাল রোববার প্রথমে নিজের দল জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন-পেট্রিয়টিক ফ্রন্ট (জানু-পিএফ) মুগাবেকে সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানায়। পদত্যাগ না করলে অভিসংশনের মতো পথে যাওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন দলের উর্ধ্বতন নেতারা।
যদিও তার কিছু পরেই রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে ৯৩ বছর বয়সী মুগাবে জানিয়ে দেন, তিনি পদত্যাগ করছেন না।
মুগাবে জাতির উদ্দেশে বলেন, ‘আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই (ডিসেম্বরে) জানু-পিএফ দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। আমি তাতে সভাপতিত্ব করব।’
২০ মিনিটের এই ভাষণে মুগাবে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। এ ব্যাপারে তিনি শুধু বলেছেন, সেনাবাহিনী কেন এই ধরনের অভিযানে গেল, বাহিনীর প্রধান হিসেবে এর খুঁটিনাটি সবকিছুই তিনি অবগত।
জানু-পিএফের পদত্যাগের আহ্বান এবং মুগাবের ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার বক্তব্যের আগে বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে পদত্যাগে রাজি করানো এবং তাঁর ‘ভবিষ্যৎ’ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে সেনাবাহিনী। মুগাবে ও সেনাবাহিনীর মধ্যে আলোচনার মধ্যস্থতা করছেন একজন ক্যাথলিক যাজক।
জানু-পিএফের পক্ষ থেকে একই সঙ্গে বহিষ্কার করা হয়েছে মুগাবের দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে, যিনি দলের মধ্যে ‘জেনারেশন-৪০’ নামে একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন। তিনি দলটির নারী শাখারও প্রধান। আর বরার্ট মুগাবের স্থানে বরখাস্ত হওয়া ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন এমন্যাঙ্গাগুয়াকে দলীয়প্রধানের পদ দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় মুগাবে পদত্যাগে রাজি না হওয়ায় ফের জনতা রাজপথে চলে আসতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন এমন্যাঙ্গাগুয়াকে বরখাস্ত করে অর্ধেকের কম বয়সী স্ত্রী গ্রেসকে উত্তরসূরি করা নিয়ে মুগাবের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় ক্ষমতাসীন দলের। আর সেই সুযোগে ভাইস প্রেসিডেন্টের পক্ষ নিয়ে সেনাবাহিনী চলে আসে ক্ষমতার কেন্দ্রে।
বিবিসির প্রতিনিধি জিম্বাবুয়ের ক্ষমতার রাজনীতির এই সময়টাকে ‘সন্ধিক্ষণ’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, মুগাবে পদত্যাগ করতে চাইবেন না, এটাই স্বাভাবিক। আবার আন্তর্জাতিক বিশ্বও চায় না, সেখানে সেনাবাহিনী সংবিধানবহির্ভূতভাবে ক্ষমতায় আসুক। ফলে সেনাবাহিনী একজন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য মুগাবেকে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করবে।
সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় দেখতে চান না দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা মরগান সভাঙ্গিরাইও। নিজেকে গণতন্ত্রপন্থী বলে দাবি করে তিনি বলেন, অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতার দখল তিনি কোনোভাবেই সমর্থন করেন না। জিম্বাবুয়ের বর্তমান সংকট কাটাতে হলে সবাইকে নিয়ে সংবিধান অনুযায়ী শাসনক্ষমতা চালাতে হবে।
সভাঙ্গিরাই আরো বলেন, দেশে অভ্যুত্থান হলেও সেনাবাহিনী সরকার চালাচ্ছে না। জিম্বাবুয়েতে বর্তমানে একটি বৈধ প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা প্রয়োজন। আর জনগণের ভোটের মাধ্যমেই সেটা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৮০ সালে জিম্বাবুয়েকে স্বাধীন করেছিলেন মুগাবে। তখন থেকেই তিনি দেশটির ক্ষমতায় আছেন। এ সময়ে ‘আফ্রিকার রুটির ঝুড়ি’ হিসেবে খ্যাত দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়ে, সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে। এর জন্য স্বল্পসংখ্যক শ্বেতাঙ্গের হাতে থাকা দেশটির বৃহৎ জমি সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার ‘ভূমি-নীতি’কে দায়ী করা হয়।
গত বুধবার এক ‘রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের’ মধ্য দিয়ে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ‘মুগাবেকে ঘিরে থাকা অপরাধীদের’ বিরুদ্ধেই এ অভিযান বলেও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তখন থেকেই তিনি গৃহবন্দি থাকলেও গত শুক্রবার প্রথমবারের মতো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আচার্য হিসেবে যোগ দেন মুগাবে।