‘ভবিষ্যৎ’ নিয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে দরবারে মুগাবে
জিম্বাবুয়ের ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ সেনাবাহিনী হাতে নেওয়ার পর প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে পদত্যাগে রাজি করানো এবং তাঁর ‘ভবিষ্যৎ’ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, মুগাবে ও সেনাবাহিনীর মধ্যে আলোচনার মধ্যস্থতা করছেন একজন ক্যাথলিক যাজক।
মুগাবের নিজের দল জিম্বাবুয়ে আফ্রিকান ন্যাশনাল ইউনিয়ন-পেট্রিয়টিক ফ্রন্ট (জানু-পিএফ) ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পদত্যাগের আহ্বানের মধ্যেই সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জনগণকে আশ্বস্ত করা হয়েছে, এ ব্যাপারে ‘অগ্রগতি যত দ্রুত সম্ভব’ জানানো হবে।
বিবিসির প্রতিনিধি জিম্বাবুয়ের ক্ষমতার রাজনীতির এই সময়টাকে ‘সন্ধিক্ষণ’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, মুগাবে পদত্যাগ করতে চাইবেন না, এটাই স্বাভাবিক। আবার আন্তর্জাতিক বিশ্বও চায় না, সেখানে সেনাবাহিনী সংবিধানবহির্ভূতভাবে ক্ষমতায় আসুক। ফলে সেনাবাহিনী একজন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্টের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য মুগাবেকে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করবে।
সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় দেখতে চান না দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা মরগান সভাঙ্গিরাইও। নিজেকে গণতন্ত্রপন্থী বলে দাবি করে তিনি বলেন, অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতার দখল তিনি কোনোভাবেই সমর্থন করেন না। জিম্বাবুয়ের বর্তমান সংকট কাটাতে হলে সবাইকে নিয়ে সংবিধান অনুযায়ী শাসনক্ষমতা চালাতে হবে।
সভাঙ্গিরাই আরো বলেন, দেশে অভ্যুত্থান হলেও সেনাবাহিনী সরকার চালাচ্ছে না। জিম্বাবুয়েতে বর্তমানে একটি বৈধ প্রশাসনের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা প্রয়োজন। আর জনগণের ভোটের মাধ্যোমেই সেটা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মুগাবেকে তাঁর দলের সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা খুব শিগগির বর্ধিত সভায় বসতে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির অন্তত দুটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
গতকাল শনিবার জিম্বাবুয়ের রাজধানীর হারারেতে হাজার হাজার মানুষ মুগাবের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। এ সময় তারা সেনাবাহিনীর অভিযানের পক্ষেও স্লোগান দেয়। জনতা সেনাপ্রধানের ছবি নিয়ে মিছিলে অংশ নেয়।
মুগাবের পদত্যাগের দাবিতে আয়োজিত এই সমাবেশে তাঁর নিজের দলের নেতারা অংশ নিলেও এর পেছনে সেনাবাহিনী রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। গত শুক্রবার জিম্বাবুয়ের ডিফেন্স ফোর্সের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে একে একটি ‘সংহতি সমাবেশ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এক বছর আগেও যেসব নেতা ৩৭ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা রবার্ট মুগাবের ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাঁরাই এখন ‘প্রেসিডেন্টকে অবশ্যই ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর’ আওয়াজ তুলছেন।
ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৮০ সালে জিম্বাবুয়েকে স্বাধীন করেছিলেন মুগাবে। তখন থেকেই তিনি দেশটির ক্ষমতায় আছেন। এ সময়ে ‘আফ্রিকার রুটির ঝুড়ি’ হিসেবে খ্যাত দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়ে, সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে। এর জন্য স্বল্পসংখ্যক শ্বেতাঙ্গের হাতে থাকা দেশটির বৃহৎ জমি সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষ্ণাঙ্গদের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার ‘ভূমি-নীতি’কে দায়ী করা হয়।
গত বুধবার এক ‘রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের’ মধ্য দিয়ে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার ঘোষণা দেয় দেশটির সেনাবাহিনী। ‘মুগাবেকে ঘিরে থাকা অপরাধীদের’ বিরুদ্ধেই এ অভিযান বলেও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। তখন থেকেই তিনি গৃহবন্দি থাকলেও গত শুক্রবার প্রথমবারের মতো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আচার্য হিসেবে যোগ দেন মুগাবে।
জানু-পিএফের পক্ষ থেকে একই সঙ্গে দল থেকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে মুগাবের দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে, যিনি দলের মধ্যে ‘জেনারেশন-৪০’ নামে একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন। তিনি দলটির নারী শাখারও প্রধান। দলের নেতারা বরখাস্ত হওয়া ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন এমন্যাঙ্গাগুয়াকে দলীয় পদে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান।
ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন এমন্যাঙ্গাগুয়াকে বরখাস্ত করে অর্ধেকের কম বয়সী স্ত্রী গ্রেসকে উত্তরসূরি করা নিয়ে মুগাবের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় ক্ষমতাসীন দলের। আর সেই সুযোগে ভাইস প্রেসিডেন্টের পক্ষ নিয়ে সেনাবাহিনী চলে আসে ক্ষমতার কেন্দ্রে।