ছিটমহল বিনিময় কমিটি এখন নাগরিক অধিকার কমিটি
ছিটমহলে ৬৮ বছরের অবরুদ্ধ জীবন এখন কেবল ইতিহাস। সম্প্রতি ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এক ঐতিহাসিক চুক্তির ফলশ্রুতিতে গত ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ছিটমহলের বিলুপ্তি ঘটেছে। একসময় অনিশ্চিত জীবনকে সঙ্গিীকরে ছিটমহলে থাকা মানুষ আজ পেয়েছে নতুন রাষ্ট্র, মুক্ত জীবনে বেঁচে থাকার স্বাধীনতা। তাঁদের কেউ আজ বাংলাদেশের বাসিন্দা, কেউ আবার ভারতের।
ছিটমহলের অবসান ঘটার পর আজ রবিবার অবসান ঘটল ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে ছিটমহলবাসীর অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া এই কমিটি রবিবার থেকে ইতিহাসের পাতায় স্থান নিল। এমনটাই জানিয়েছেন ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সদ্য সাবেক সহ সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে আর ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি বলে কিছু থাকছে না। এই কমিটির লক্ষ্য পূরণ হয়ে গেছে।’
দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, রাষ্ট্রবিহীন এক মানুষের অধিকার অর্জনের লক্ষমাত্রা নিয়ে আজ থেকে ২২ বছর আগে ছিটমহলের বুকে গঠিত হয়েছিল ‘ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি।’ ছিটমহলবাসীকে সঙ্গে নিয়ে লাগাতার আন্দোলন আর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রহীন মানুষগুলোর মাথার ওপর রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়ে গেছে। ফলে এখন থেকে ওই কমিটির আর প্রয়োজন নেই। তার পরিবর্তে এখন থেকে গঠিত হলো নাগরিক অধিকার সমন্বয় কমিটি। নতুন ভাবে গঠিত এই কমিটি এখন থেকে ভারত ও বাংলাদেশে আগের ছিটমহলবাসীর (যারা বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশের নাগরিক) জন্য কাজ করবে। নতুন গঠিত হওয়া এই কমিটির মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মুখ্য সমন্বয় সাধন করবেন দীপ্তিমান সেনগুপ্ত নিজে।
এ ছাড়া এই কমিটির বাংলাদেশের অংশে আহ্বায়ক হয়েছেন মইনুল হক। আর ভারত অংশে কমিটির আহ্বায়ক সৌমেন দাস। দীপ্তিমান সেনগুপ্ত জানান, এই কমিটি মূলত ভারত ও বাংলাদেশে যারা এতদিনকার ছিটমহলের তকমা হারিয়ে দুই দেশের নাগরিকত্ব পেয়েছে তাদের নাগরিক অধিকার নিয়েই কাজ করবে। সেই সঙ্গে মানবাধিকারসহ নানা বিষয়ের ওপরও লক্ষ্য রাখবে এই কমিটি।
তবে সিটিজেন রাইট কো-অর্ডিনেশন কমিটির মূল কাজ হবে, নাগরিকদের নিজ নিজ রাষ্ট্রে নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা। দুই দেশের নাগরিকদের কোনো সমস্যা হলেই এই কমিটির প্রতিনিধিরা তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাবেন। মূলত ভারত ও বাংলাদেশের সরকারিভাবে প্রদত্ত সব সু্যোগ-সুবিধা থেকে যাতে কোনোভাবেই নাগরিকরা বঞ্চিত না হয়, সেটা দেখভাল করাই এই নতুন কমিটির অন্যতম লক্ষ্য হবে বলেই জানান তিনি।
উল্লেখ্য, এর আগে ‘ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে ভারত ও বাংলাদেশে যুক্ত হয়ে যাওয়া নাগরিকদের জমি জায়গা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে দুই দেশে তৈরি করা হয়েছে লিগ্যাল সেল। এই সেলের মাধ্যমে আইনি পরামর্শ এবং আইনি সহায়তা দেওয়া হবে ভারত ও বাংলাদেশে যুক্ত হয়ে যাওয়া আগের ছিটমহলের নাগরিকদের। যে আইনি সেলের ভারতীয় অংশের আইনি উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন আইনজীবী আহসান হাবিব এবং বাংলাদেশ অংশের আইনি উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন আইনজীবী আব্রাহাম লিঙ্কন।