বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা ফিলিপাইনের জুয়ার বাজারে!
নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে লোপাট হওয়া দশ কোটি ডলারের যে অংশ ফিলিপাইনে পাচার হয়েছে তা ক্যাসিনোসহ (জুয়া খেলার স্থান) বিভিন্ন হাত ঘুরে চলে গেছে অন্য দেশে। ফিলিপাইনের ইংরেজি দৈনিক ইনকোয়ারারে এমন তথ্যই প্রকাশিত হয়েছে।
বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, চুরি হওয়া অর্থ কীভাবে নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে ফিলিপাইনের ব্যাংকিং সিস্টেমে ঢুকল, সেখান থেকে কীভাবে নানা হাত বদল হয়ে তা বিভিন্ন জায়গায় চলে গেল-এ সম্পর্কে ফিলিপাইনে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত রয়েছে। এ নিয়ে সবচেয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বেরিয়েছে ফিলিপাইন দৈনিক ইনকোয়ারারে।
পত্রিকাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিপাইনের ব্যাংকিং ইতিহাসে এত বড় মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা এটাই প্রথম। দেশটির স্থানীয় একটি ব্যাংক রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং সিস্টেম এই অর্থ লেনদেনের ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, গত মাসের পাঁচ তারিখে প্রথম ৮১ মিলিয়ন ডলার ট্রান্সফার করা হয়। নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে প্রথম অর্থ যায় যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি ব্যাংকে। এই ব্যাংকগুলো হচ্ছে ব্যাংক অব নিউইয়র্ক, সিটি ব্যাংক এবং ওয়েলস ফার্গো ব্যাংকে। তারা এই অর্থ পাঠায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকে।
ফিলিপাইনের মাকাটি শহরের যে শাখায় এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আসে, সেই শাখার প্রধান কর্মকর্তা বিষয়টি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। এই লেনদেনের প্রত্যেকটি ধাপ সম্পর্কে এই ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আগাগোড়াই জানতেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু ব্যাংকটির প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লোরেনযো ট্যান এই অভিযোগ অস্বীকার করছেন।
ব্যাংকের তরফ থেকে দেওয়া এক বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে ফিলিপাইনের পত্রপত্রিকায়। তাতে ব্যাংকটি এই অর্থপাচারের ঘটনার তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছে।
পুরো ঘটনাটি এখন তদন্ত করে দেখছে ফিলিপাইনের সেনেট, ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এবং ফিলিপাইনের ‘এমিউজমেন্ট অ্যান্ড গেমিং কর্পোরেশন’ যারা সেখানকার জুয়ার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে।
ফিলিপাইনের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এই অর্থ কোথায় গেছে?
এই চুরি যাওয়া অর্থ কীভাবে হাত বদল হয়েছে, তার একটা মোটামুটি চিত্র দিয়েছে ফিলিপাইনের ডেইলি ইনকোয়ারার পত্রিকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে এই অর্থ তাদের ক্লায়েন্টদের মাধ্যমে চলে যায় স্থানীয় এক ফরেন এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীর কাছে। ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার স্থানীয় মুদ্রায় বিনিময়ের পর এই পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৭০ কোটি পেসোতে। এরপর এই অর্থ চলে যায় তিনটি বড় ক্যাসিনোতে। এগুলো হচ্ছে সোলারি রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনো, সিটি অব ড্রিমস ও মাইডাস।
পুরো অর্থ খরচ করে সেখানে জুয়া খেলার জন্য চিপস কেনা হয়েছে। এরপর জুয়া খেলে এই চিপস আবার ফিলিপিনো মুদ্রায় কনভার্ট করা হয়েছে। এরপর সেই অর্থ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে হংকংয়ের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে। এই ঘটনা এত দেরিতে জানা গেল কেন সেটি এক বিরাট রহস্য। এত বড় একটা কেলেংকারি, এত বিশাল অঙ্কের অর্থ চুরি হলো বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে, অথচ তা জানা গেছে মাত্র গত কদিন আগে। এবং তাও ফিলিপাইনের বিভিন্ন পত্রিকায় এ নিয়ে খবর বেরুনোর পর।
ফিলিপাইনের পত্রিকাগুলোতে বলা বলছে, অর্থ চুরি হওয়ার পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা এরই মধ্যে ফিলিপাইনে গিয়ে সেখানকার সেন্ট্রাল ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা পাচার হওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এসবই কিন্তু ঘটেছে পুরো বিষয়টি বাংলাদেশের গণমাধ্যমের নজরে আসার আগে।