ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে জিম্বাবুয়ের নির্বাচনে বিরোধী দলের বিজয় দাবি
জিম্বাবুয়েরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে এমারসন মানানগাগওয়ার পুননির্বাচনের ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী দলের নেতা নেলসন চামিসা দাবি করেছেন এই নির্বাচনে বিরোধী দল জয় লাভ করেছে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে নির্বাচনটি গণতান্ত্রিক মান পূরণ করতে পারেনি।
জিম্বাবুয়ে ইলেকটোরাল কমিশন গত শনিবার নির্বাচনের ফলাফলে ঘোষণা করে ৮০ বছর বয়সী মানানগাগোয়া ৫২.৬ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য জয়লাভ করেছেন। নির্বাচনে তার প্রতিপক্ষ ৪৫ বছর বয়সী চামিসা ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বলে জানানো হয়।
তবে, এই ফলাফলকে ‘মিথ্যা’ হিসেবে অভিহিত করে বিরোধী দল সিটিজেন কোয়ালিশন ফর চেঞ্জ (সিসিসি) তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
পেশায় আইনজীবী সিসিসি’র নেতৃত্ব দেওয়া চামিসা রাজধানী হারারেতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা এই নির্বাচনে জয়লাভ করেছি। আমরাই নেতা। আমরা আশ্চর্য হচ্ছি কেন মানানগাওয়াকে নেতা হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হলো।’
গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার জিম্বাবুয়ের অধিবাসীরা প্রেসিডেন্ট ও নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভোট দেয়। তবে এই নির্বাচনে দেরিতে ভোট গ্রহণ, জালিয়াতি ও ভোটারদের ওপর শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ আনে বিরোধী দল।
চামিসা বলেন, ‘আমরা জানতাম যে একটি ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের দিকে যাচ্ছি। এতে ছিল ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা ও সীমানা নির্ধারণী তালিকা। পাশিপাশি ছিল ত্রুটিপূর্ণ ব্যালট। পুরো নির্বাচনী পরিবেশটিই ছিল ত্রুটিপূর্ণ।’
এদিকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপরই এক বার্তায় মানানগাগওয়া তার পুননির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রতিপক্ষকে আদালতে যেতে বলেন। প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস থেকে তিনি বলেন, ‘যারা মনে করছেন এই নির্বাচনী দৌড় যথাযথভাবে হয়নি তাদের জানা থাকা উচিত কোথায় যেতে হয়।’
গত ৪৩ বছর ধরে জিম্বাবুয়ের ক্ষমতায় থাকা জানু-পিএফ পার্টির জন্য এই নির্বাচনকে দেশ চালানোর জন্য একটি পরীক্ষা হিসেবেই দেখা হচ্ছে। তবে দলটির শাসনামলে মৃতপ্রায় অর্থনীতি আর কর্তৃত্ববাদের অভিযোগ তাদের যাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
এদিকে, রোববার জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস নির্বাচনে পর্যবেক্ষকদের গ্রেপ্তার, ভোটারদের ভয় দেখানো, সংঘাতের হুমকি, হয়রানি ও জবরদস্তির জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এক বার্তায় গুতেরেস সব পক্ষকে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সহায়তায় সমস্যার সমাধানেরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জনগণের ইচ্ছার সত্য প্রতিফলন হয় এমন সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও তড়িৎ প্রক্রিয়া ওপর গুরত্ব আরোপ করেন তিনি।
অন্যদিকে, বিদেশি পর্যবেক্ষকরা শুক্রবার ঘোষণা করে যে, এই নির্বাচন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মান পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
২০১৭ সালে এক সামরিক অভ্যত্থানের মাধ্যমে সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসেন ‘ক্রোকোডাইল’ নামে পরিচিত মানানগাগওয়া। এর এক বছর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি চামিসাকে খুব অল্প ব্যবধানে পরাজিত করেন। যদিও সেই নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধী নেতা। পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধীদের ওপর চালানো হয় ব্যাপক দমনপীড়ন।
এবার, এই নির্বাচন দ্বিতীয় দিনে গড়ায় ব্যালট পেপার ছাপানোর সঙ্কটের কারণে। নির্বাচনের দিনে ব্যালট পেপার সঙ্কটে পড়ে বিরোধী দলের শক্ত ঘাঁটি রাজধানী হারারেসহ আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা।
দীর্ঘ গেরিলা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৮০ সালে জিম্বাবুয়ে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। তবে স্বাধীন দেশটির প্রথম নেতা মুগাবের শাসনামলে গণতান্ত্রিক চর্চার পরিবর্তে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে পড়ে যায় দেশটি।
এদিকে এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ পার্টি পার্লামেন্টেও সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়েছে বলে ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে ২১০ টি আসনের মধ্যে জানু-পিএফ পায় ১৩৬ টি আসন আর বিরোধী দল পায় ৭৩টি আসন। একটি আসনে ভোট হয়নি প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে। এছাড়া পার্লামেন্টর ৬০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে।