বড়দিনেও রক্তাক্ত যিশুর জন্মস্থান বেথেলহাম
খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব বড়দিন আজ সোমবার (২৫ ডিসেম্বর)। আজকের এই দিনে খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট অধিকৃত পশ্চিম তীরের বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন। এমন এক দিনেও পশ্চিম তীরে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। জেনিন শরণার্থী শিবিরে হামলা ও বেশ কয়েকটি গ্রেপ্তারের মধ্যে দিয়ে বড়দিন পালন করছে তারা। খবর আল-জাজিরার।
প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, আজ সকালে ফিলিস্তিনের অন্যান্য অঞ্চলের মতো পশ্চিম তীরে বোমা হামলা ও অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর মধ্যে দুটি বোমা আঘাত হেনেছে খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তকের শহর বেথেলহামে। এ ছাড়া কয়েক ডজনকে গেপ্তারের পাশাপাশি ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরকে গুলি করে হত্যা করেছে তারা।
ইসরায়েলের দখলদারিত্বের প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে পরিচিত জেনিন। গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে এই শহরকে বারবার লক্ষ্যবস্তু করছে ইসরায়েলি বাহিনী। আজ জেনিনভিত্তিক ফ্রিডম থিয়েটার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে জেনিন শরণার্থী শিবিরে হামলার কথা জানিয়েছে। ওই পোস্টে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলাকে ফ্লেয়ার বোমা বলে আখ্যা দিয়েছে শান্তি ও আশার প্রতীক হিসেবে দেখা ফ্রিডম থিয়েটার।
জেনিনে থাকা আল-জাজিরার সাংবাদিক ইমরান খান জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী অন্তত ১০টি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। তারা ফিলিস্তিনিদের গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজছে। ইমরান খান বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বেরিয়ে আসতে এবং আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু, তা হয়নি। বাসিন্দারা আমাদের বলছেন, এটি নিছক হয়রানিমূলক প্রচারণা।’
আল-জাজিরার এই সাংবাদিক আরও বলেন, ‘অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবির বার বার অভিযানের শিকার হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী শিবিরটির শান্তি বা জাতীয়তাবাদের যে কোনো প্রতীক ধ্বংস করছে।’
জেনিন শহর ও শরাণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি অভিযান বন্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইমরান খান। তবে, শহরটির উত্তরাঞ্চলের আল-জালামা গ্রামের ৯ যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আল জাজিরার হামদাহ সালহুত জানিয়েছেন, নাবলুস, জেরিকো, রামাল্লা ও বেথেলহামেও অভিযান এবং হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। পশ্চিম তীরের উত্তর-পশ্চিমে থাকা নাবলুস শহরের বুরাক শহরে অভিযানে ২০ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে বেশ কয়েকজন বৃদ্ধও আছেন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এরপর থেকেই গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে অনবরত হামলা চালিয়েছে আসছে ইসরায়েলি বাহিনী। পাশাপাশি ফিলিস্তিনি গ্রেপ্তারের সংখ্যাও আগের তুলনায় বেড়েছে।
হামাস নিয়ন্ত্রণাধীন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইসরায়েলি বাহিনীর আকাশ, নৌ ও স্থলপথে চালানো হামলায় ফিলিস্তিনে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। যার মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু।
এদিকে, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি হামলা বড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের হামলাও। অন্তত সাত লাখ ইসরায়েলি অবৈধভাবে পশ্চিম তীর ও জেরুজালেমে বাস করে। তারা যেসব ভূমি দখল করেছে সেগুলোর বেশিরভাগই ফিলিস্তিনিদের।
আল-জাজিরা বলছে, গত তিন মাসে হামলা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গুলি, ছুরিকাঘাত, ঢিল নিক্ষেপ ও মারধর। একইসঙ্গে বাড়িঘর ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ এবং কৃষি জমির ক্ষতি করছে তারা।
এক নোটে জাতিসংঘ বলছে, বসতি স্থাপনকারীদের হামলার প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রেই ইসরায়েলি বাহিনীর সায় ছিল। আক্রমণের সময় সক্রিয়ভাবে থেকে সমর্থন করছে তারা।