বিশ্বসেরা ১০০ বই
টনি মরিসনের ‘বিলাভড’
১৯৮৭ সালের উপন্যাস ‘বিলাভড’। এটি লিখেছিলেন মার্কিন লেখিকা টনি মরিসন। ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকার গৃহযুদ্ধ পরবর্তী পটভূমিতে রচিত হয়েছে উপন্যাসটি। আফ্রিকান-আমেরিকান ক্রীতদাস মার্গারেট গার্নারের জীবনী দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা হয়েছিল উপন্যাসটি।
১৯৮৮ সালে ফিকশনের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার জেতে ‘বিলাভড’। ১৯৯৮ সালে উপন্যাসটি নিয়ে একই নামের একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এতে অভিনয় করেছিলেন বিখ্যাত টেলিভিশন উপস্থাপিকা অপরাহ উইনফ্রে।
কাহিনী সংক্ষেপ
উপন্যাসের মূল চরিত্র সেথ একজন নারী ক্রীতদাস। মালিকের অত্যাচার থেকে বাঁচতে সে পালিয়ে যায়। কিন্তু ২৮ দিন পর সে ধরা পড়ে। এ সময় তাকে ও তার দুই বছর বয়সী বাচ্চাকে জোর করে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায় সেথের মালিক। কিন্তু ফিরে যেতে চায় না সেথ। আর তাই নিজের দুই বছর বয়সী মেয়েকে মেরে ফেলে সে।
১৮৭৩ সালে অহিওর সিনসিনাতির পরিপ্রেক্ষিতে রচিত হয় উপন্যাস ‘বিলাভড’। সেথ তার ১৮ বছর বয়সী মেয়ে ডেনভারের সঙ্গে থাকে। সেথের শ্বাশুড়ি বেবি সাগস আট বছর আগে মারা গেছে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে সেথের সঙ্গেই থাকত।
সেথের দুই ছেলে হাওয়ার্ড ও বাগলার তাঁদের দাদি সাগের মৃত্যুর আগেই বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। সেথের ধারণা তাদের বাড়িতে অশুভ আত্মা রয়েছে বলেই তার দুই ছেলে ভয়ে পালিয়ে গেছে। সবার ধারণা সেথের মৃত মেয়ের আত্মা ঘুরে বেড়ায় তাদের বাড়িতে। যে কি না খুন হয়েছিল সেথের হাতেই।
উপন্যাসটি শুরু হয় যেদিন সেথের বাসায় পল ডি আসে। ২০ বছর আগে পল আর সেথ একসঙ্গে ক্রীতদাস হিসেবে কাজ করত মিস্টার গার্নারের কেন্টাকির বাড়িতে। পল আসার পর থেকেই পুরোনো দিনের কথা আলোচনা করতে থাকে সেথ।
পুরোনো দিনের কথা আলাপ করতে করতে সেথের মনে পড়ে যায় তার জীবনের অনেক কথা, যা এত দিন সে ভুলে ছিল। সেথের মা ছিলেন একজন আফ্রিকান। যদিও কোনদিন মায়ের দেখা পায়নি সে। ১৩ বছর বয়সে সেথকে দাসী হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
সেথের মালিক গার্নার ছিল দয়াবান মানুষ। তার বাড়িতেই ক্রীতদাসী হিসেবে কাজ শুরু করে সেথ। সেখানেই তার সঙ্গে পরিচয় হয় অন্য ক্রীতদাসদের।
সিক্সো, পল ডি, পল এ, পল এফ এবং হাল সবাই একসঙ্গে গার্নারের বাড়িতে দাস হিসেবে কাজ করত তখন। সিক্সোকে বিয়ে করে সেথ। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে হয়।
গার্নার মারা যাওয়ার পর মিসেস গার্নারের অনুরোধে ফার্মের দায়িত্ব নেয় গার্নারের ভাই। দাসদের কাছে সে পরিচিত ‘স্কুল টিচার’ নামে। সে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দাসদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। গার্নারের ভাই ও ভাতিজাদের নির্যাতন থেকে বাচতে পালিয়ে যায় সেথ, পল ডি ও সিক্সো।
পল ডিকে খুঁজে বের করে ধরে নিয়ে আসে গার্নারের দুই ভাতিজা আর সেথের স্বামী সিক্সোকে মেরে ফেলা হয়। সেথকে ধরে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে গার্নারের ভাতিজা।
বাচ্চাদের আগেই শাশুড়ির কাছে সিনসিনাতিতে পাঠিয়ে দিয়েছিল সেথ। ধর্ষণের পর সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়ে সেথ। সেখান থেকে আবারও পালিয়ে যায় সেথ। অ্যামি ডেনভার নামের এক শ্বেতাঙ্গ নারী সেথকে জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করায়। সেখানেই জন্ম নেয় সেথের মেয়ে। অ্যামির প্রতি কৃতজ্ঞতা থেকে মেয়ের নাম ডেনভার রাখে সেথ।
সিনসিনাতিতে ২৮ দিন থাকার পর সেথকে নিতে আসে গার্নারের ভাই। কিন্তু নিজের মতো সন্তানদেরও দাস হিসেবে গড়ে তুলতে চায় না সেথ। তাই সে নিজ হাতে সন্তানদের মেরে ফেলতে চায়। নিজের তৃতীয় সন্তান ও প্রথম মেয়ের গলা কেটে হত্যা করে সেথ। মেয়েকে হত্যার অপরাধে সেথকে জেলে যেতে হয়। সে সময় তার সাথে তার ছোট মেয়ে ডেনভারও ছিল।
জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার শাশুড়ির কাছে ফিরে যায় সেথ। তত দিনে হতাশায় জর্জরিত বেবি সাগসকে একঘরে করেছে এলাকার সবাই।
সেখানেই সন্তান ও শাশুড়িকে নিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করে সেথ।
লেখক পরিচিতি
টনি মরিসনের আসল নাম ক্লো আর্দেলিয়া উফোর্ড। ১৯৩১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিনি একজন ঔপন্যাসিক ও সম্পাদক। এ ছাড়া প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ইমেরিটাস তিনি।
মহাকাব্যিক বিষয়বস্তু, প্রাণবন্ত সংলাপ এবং চরিত্রগুলোর বিস্তারিত বর্ণনার কারণে তাঁর উপন্যাসগুলো পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে।
টনি মরিসনের লেখা বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ‘দ্য ব্লুয়েস্ট আই’ (১৯৭০), ‘সুলা’ (১৯৭৩), ‘সং অব সলোমন’ (১৯৭৭) ও ‘বিলাভড’ (১৯৮৭)।
‘বিলাভড’ উপন্যাসের জন্য ১৯৮৮ সালে ‘পুলিৎজার’ ও ‘আমেরিকান বুক অ্যাওয়ার্ড’ পান টনি মরিসন। ১৯৯৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান টনি মরিসন।
২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’ পান তিনি।
** বিশ্বসেরা ১০০ বইয়ের তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত তালিকা অবলম্বনে। এ তালিকা তৈরি করেছে ‘নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস’। বিশ্বের ৫৪টি দেশের ১০০ লেখকের কাছে তাঁদের চোখে সেরা ১০টি বই ও লেখকের নাম চেয়েছিল নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস। ১০০ জন লেখকের দেওয়া সেই তালিকার ভিত্তিতেই যাচাই-বাছাই করে তৈরি করা হয়েছে এই তালিকা।