বিশ্বসেরা ১০০ বই
আলফ্রেড ডোবলিনের বার্লিন আলেক্সান্দারপ্লাটজ
আলফ্রেড ডোবলিনের (Alfred Döblin) লেখা ১৯২৯ সালের উপন্যাস ‘বার্লিন আলেক্সান্দেরপ্লাটজ’ (Berlin Alexanderplatz )। প্রকাশিত উপন্যাসটিকে এখনো অন্যতম সেরা ও গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস হিসেবে গণ্য করা হয়।
ফ্রানৎস বিবেরকফ নামের এক ছোটখাটো অপরাধীর গল্প বলা হয়েছে এতে। জেল খেটে বের হয়ে যে পতিতার কাছে ফ্রানৎস আশ্রয় খুঁজতে চাচ্ছিলেন সেই পতিতাকে খুন করে ফ্রানৎসেরই গুরু, বলা বাহুল্য এই গুরুও অপরাধ জগতেরই মানুষ। সুপথে যেতে চাইলেও অপরাধ জগতের সঙ্গেই জড়িয়ে পড়ে ফ্রানৎস এবং বুঝতে পারে এখান থেকে তার আর মুক্তি নেই।
১৯২০-এর দশকের বার্লিনের শ্রমজীবী সম্প্রদায়ের জীবনধারা উঠে এসেছে উপন্যাসটিতে। অবশ্য এর আখ্যান শৈলী আইরিশ ঔপন্যাসিক জেমস জয়েসের লেখার সাথে মিলে যায় বলে অনেক সমালোচক সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন।
ডোবলিনের এই উপন্যাস নিয়ে দুইবার কাহিনীচিত্র নির্মাণ করা হয়েছে, এরমধ্যে একটি চলচ্চিত্র এবং আরেকটি টেলিভিশন সিরিয়াল।
১৯৩১ সালে পরিচালক পিয়েল জুটজি উপন্যাসটি অবলম্বনে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ডোবলিন নিজেও সেই চিত্রনাট্য তৈরিতে কাজ করেছিলেন কার্ল হেইনজ মার্টিন ও হান্স উইলহেমের সাথে।
‘বার্লিন আলেক্সান্দারপ্লাটজ’ উপন্যাসটি অবলম্বনে ১৯৮০ সালে টেলিভিশনের জন্য সিরিয়াল নির্মাণ করেছিলেন রেইনার ভার্নার ফাসবাইন্ডার। টেলিভিশনের পাশাপাশি এটা সিনেমা হলেও প্রদর্শিত হয়েছিল। তবে তা ছিল দীর্ঘ সাড়ে ১৫ ঘণ্টার প্রদর্শনী!
নিউইয়র্কের সিনেমা হলে যখন ছবিটি ছাড়া হয়েছিল তখন দর্শকরা পরপর তিন রাত ধরে সম্পূর্ণ ছবিটি দেখেছিলেন।
কাহিনী সংক্ষেপ
ফ্রানৎস বিবেরকোফের জীবনের ১৮ মাসের ঘটনা উঠে এসেছে বার্লিন আলেক্সাদেরপ্লাটজ উপন্যাসে। কাহিনী শুরু হয় ফ্রানৎস তেগেল জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে। নিজের রক্ষিতাকে খুন করার অপরাধে চার বছর জেল খাটে ফ্রানৎস। জেল থেকে বের হয়ে সে ভাবে এবার নিজের জীবনটাকে গুছিয়ে নেবে।
বাড়িওয়ালি ও বান্ধবী গোত্তালিয়েব মেকের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করে ফ্রানৎস। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে টুকিটাকি জিনিস ফেরি করে বেড়ায় সে। একটু একটু করে পয়সা জমায়, কাজ করে সেলসম্যান হিসেবে। জীবনে নিশ্চয়তা ও স্বচ্ছন্দ্য ফিরে পেয়ে পোলিশ মেয়ে লিনাকে বিয়ে করে ফ্রানৎস।
তবে এরই মধ্যে আবারো সে জড়িয়ে পড়তে থাকে অপরাধ জগতের সাথে। অপরাধীদের সঙ্গে উঠাবসা শুরু করে। ফ্রানৎসের বন্ধু রেইনহোল্ড তাকে আবারো নিয়ে যায় অপরাধ জগতে। যদিও ফ্রানৎসের পরিবার ও অন্যরা তাকে পরামর্শ দেয় রেইনহোল্ডের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু ফ্রানৎস ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়তে থাকে অপরাধের সঙ্গে।
লেখক পরিচিতি
পুরো নাম ব্রুনো আলফ্রেড ডবলিন। জন্ম ১৮৭৮ সালের ১০ আগস্ট তৎকালীন স্টেটিন ( স্টেচিন) অঞ্চলে। বর্তমানে শহরটি পোল্যান্ডের অন্তর্গত। মা-বাবার বিচ্ছেদের পর ১০ বছর বয়সে মা ও ভাইবোনদের সঙ্গে জার্মানির বার্লিনে চলে যান ডবলিন।
একইসঙ্গে ডবলিন একজন ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও চিকিৎসক ছিলেন। জার্মান সাহিত্যে আধুনিকতাবাদের অন্যতম লেখক তিনি। ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে তিনি যেমন উপন্যাস লিখেছেন তেমনি লিখেছেন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ও অপরাধ জগত নিয়ে। উপন্যাসের পাশাপাশি মঞ্চ ও রেডিওর জন্য চিত্রনাট্য লিখেছেন।
ডবলিনের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস ছিল ‘দ্য থ্রি লিপস অব ওয়াং লুন’। এটি প্রকাশিত হয় ১৯১৫ সালে।
১৯২৯ সালে প্রকাশিত হয় ডবলিনের বিখ্যাত উপন্যাস ‘বার্লিন আলেক্সান্দারপ্লাটজ’ (Berlin Alexanderplatz)। নাৎসি স্বৈরতন্ত্রের উত্থানের ফলে নির্বাসনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। ১৯৩৩ থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সে নির্বাসিত জীবন কাটান ডবলিন।
আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ডবলিনকে দেশ ছাড়তে হয়। তখন তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে। জীবনের শেষ দিনগুলোতে অর্থাভাবে ও রোগে ভুগে মারা যান তিনি।
** বিশ্বসেরা ১০০ বইয়ের তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত তালিকা অবলম্বনে। এ তালিকা তৈরি করেছে ‘নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস’। বিশ্বের ৫৪টি দেশের ১০০ লেখকের কাছে তাঁদের চোখে সেরা ১০টি বই ও লেখকের নাম চেয়েছিল নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস। ১০০ জন লেখকের দেওয়া সেই তালিকার ভিত্তিতেই যাচাই-বাছাই করে তৈরি করা হয়েছে এই তালিকা।