কিশোরগঞ্জের হাওরে বাড়ছে পানি, আতঙ্কে কৃষক
কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা ইটনায় প্রবাহিত ধনু, বৌলাই ও কালনী নদীর পানি কয়েকদিন ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে কৃষকদের মধ্যে নতুন করে ফসলের ক্ষতির আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অনেকে বাধ্য হয়ে জমির আধাপাকা বোরো ধান কেটে আনছেন। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে, গতকাল সোমবার রাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হাওর এলাকার নদ-নদীগুলোতে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে কিশোরগঞ্জের হাওরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি পেলেও কিছুদিন স্থিতিশীল ছিল। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কয়েকদিন ধরে আবারও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুই দফায় এরই মধ্যে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির আধাপাকা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। চলতি বছরে জেলায় এক লাখ ৬৪ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাওরের ৩৫ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে আশি ভাগ ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
তবে, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে রছরের একমাত্র ফসল বোরো ধান কেটে ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকেরা। কারণ, কিশোরগঞ্জের হাওর অধ্যুষিত চারটি উপজেলার কৃষকদের সারা বছরের একমাত্র ফসল বোরো ধান। এ ধান বিক্রির অর্থ দিয়ে কৃষকেরা পরিবারের সারা বছরের ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন।
ইটনার দীনেশপুর গ্রামের কৃষক হরিলাল দাস এনটিভি অনলাইনকে জানান, হাওরে শঙ্কা নিয়েই ধান কাটা শুরু হয়েছে। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে এবার নালুয়া হাওরে পাঁচ একর জমিতে ধান চাষ করেছিলেন তিনি। উজানের ঢলে সব হারিয়ে এখন তাঁর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। এবার ফসল নষ্ট হলে ঋণের বোঝা বাড়বে, আর না খেয়ে উপোস থাকতে হবে।
এলংজুড়ি গ্রামের আবদুল কাদির এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ধান কাটার লোক পাচ্ছি না। ধান কিছুটা পাকলে হয়তো এসব ধান আমাদের কাজে লাগতো। পানি আরও বাড়তে থাকলে আমাদের বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হবে। কারণ, আমরা অনেকেই বর্গা নিয়ে এবং ঋণ করে ধান চাষ করেছি।’
ইটনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোহাগ মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অন্য বছর এ সময় হাওরের কৃষকেরা খলা ও গোলা তৈরিসহ ধান কাটার প্রস্তুতি নেওয়াতে ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু, এবার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলহানির জন্য কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ছাইফুল আলম বলেন, ‘এখনও পুরোদমে ধান কাটা শুরু হতে সপ্তাহখানেক বাকি আছে। তবে, পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকায় আশি ভাগ পাকলেই ধান কেটে ফেলার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
ছাইফুল আলম জানান, ধান কাটার জন্য কৃষকদের এ পর্যন্ত ২২৮টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার ও ২২টি রিপার মেশিন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে হাওরের ৩৫ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। সপ্তাহখানেক সময় পেলে সব ধান কেটে ফেলা যাবে।
তবে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান বলেছেন, ‘আমাদের বাঁধগুলো এখনও অক্ষুণ্ণ থাকায় মূল হাওরে পানি ঢোকেনি। পানি বাড়তে থাকলেও এখনও বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচে আছে। সীমানার ওপারে বৃষ্টি না হওয়ায় আজ থেকে পানি কমার সম্ভাবনা আছে।’