‘পরিবার জানে না এসিডদগ্ধ, জানে জ্বর হয়েছে’
‘পরিবারের কেউ জানে না, আমি এসিডদগ্ধ। সবাই জানে, আমার জ্বর হয়েছে। তাই ছুটি নিয়ে বাসায় আছি। কারণ, আমার বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান যদি কেউ জানে, তবে তারা আমার থেকে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বে। আমার বাড়ি অজপাড়া গ্রামে। সেখানকার মানুষ তেমন পত্রিকা, টিভির খবর দেখে না। তাই এখন পর্যন্ত কেউ জানতে পারে নাই।’
কাতর স্বরে এনটিভি অনলাইনকে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর বংশাল থানা এলাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে দুর্বৃত্তের ছোড়া এসিডে দগ্ধ কনস্টেবল রফিকুল ইসলাম। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি।
রফিকুল ইসলাম জানান, ৩১ জানুয়ারি রাত ১০টার সময় তিনিসহ চার পুলিশ সদস্য মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে পুলিশের নিয়মিত তল্লাশিচৌকি বসিয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। রাত ১২টার দিকে একটি মোটরসাইকেলে করে তিনজন ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের প্রত্যেকের মুখে কাপড় বাঁধা ছিল এবং হাতে ছিল টর্চলাইট। সে কারণে তাদের দেখে সন্দেহ হলে দাঁড়ানোর জন্য সামনে থেকে সংকেত দেওয়া হয়। এর সঙ্গে সঙ্গেই ওই চারজনের একজন একটি বোতল থেকে কিছু একটা ছুড়ে মারে তাদের ওপর।
‘এর পর শুধু মুখ জ্বলছিল আর মনে হচ্ছিল যেন কোনো বোমা বা ককটেল মারা হয়েছে আমার ওপর। মুখে হাত দিয়ে আমি চিৎকার করছিলাম। অনেক সময় পর বুঝতে পারলাম আমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে আনা হয়েছে’, বলেন রফিকুল।
পুলিশের এই কনস্টেবল জানান, তাঁর মুখে এসিড ছুড়ে মেরে পালানোর সময় পুলিশ ওই মোটরসাইকেলের দিকে গুলি ছোড়ে। এর পর তিনজনের মধ্যে একজন মাটিতে পড়ে যায়। তাকে আটক করা হয়েছে। বাকিরা পালিয়ে গেছে।
রফিকুল জানান, ১৯৯১ সালে তাঁর চাকরিজীবন শুরু হয়। এ পর্যন্ত দুবার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার স্বীকার হলেন তিনি। ২০০৯ সালে মোহাম্মদপুর থানায় থাকাকালে এক আসামি ধরতে গিয়ে ধস্তাধস্তির সময় তাঁর ডান হাত ভেঙে গিয়েছিল। আর এখন বংশাল থানায় থাকাকালে এসিড ছোড়া হলো তাঁর মুখে।
রফিকুল ইসলাম জানান, তাঁর গ্রামের বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা থানায়। তাঁর এক ছেলে ও দুই মেয়ে আছে। হামলার শিকার হওয়ার পর পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা নিয়মিত তাঁর খোঁজখবর নিচ্ছেন।
রফিকুলের চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেক হাসপাতালের আবাসিক সার্জন পার্থ শঙ্কর পাল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দগ্ধ পুলিশ সদস্য রফিকুল ইসলাম এখন সুস্থ রয়েছেন। তাঁর শরীরের ৪ শতাংশ অংশ পুড়ে গেছে। দু-একদিনের মধ্যেই তাঁকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হবে। ’
এ বিষয়ে বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিক এনটিভি অনলাইনকে জানান, ওই ঘটনায় সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নুরুজ্জামান ও কনস্টেবল রফিকুল এসিড দগ্ধ হয়েছেন।
ওসি আরো জানান, ঘটনার পর একজনকে আটক করা হয়েছে এবং মোটরসাইকেলটিও জব্দ করা হয়েছে। আটক ব্যক্তির নাম মো. জুবায়ের। তিনি এখন পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ বিষয়ে আরো তদন্ত চলছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।