তারেক রহমানের ব্যাপারে অভিযোগ পেলে ‘দেখবে’ ইসি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে লড়াই করতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন লন্ডনে অবস্থানরত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দণ্ডিত ও পলাতক আসামি হিসেবে তারেক রহমান নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন কি না, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গণমাধ্যমের উদ্দেশে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা বলেছেন, আমরা শুনেছি। আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো কিছুকে মনিটরিং করার নিজস্ব ক্যাপাসিটিও আমাদের নাই।’
‘যদি কেউ তথ্য-প্রমাণসহ আমাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন, তাহলে পরে আমরা আইনের মধ্যে থেকে যদি কিছু থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বলব। আর যদি আইনের ভেতর কিছু না থাকে, তাহলে আমরা নিজেরা কমিশন বসে কী করতে পারি, সেটা পর্যালোচনা করে দেখে তার পরে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব,’ যোগ করেন রফিকুল ইসলাম।
আজ রোববার সকাল থেকে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শুরু হয়। মনোনয়ন বোর্ডে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লন্ডন থেকে সংযুক্ত হয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি প্রার্থীদের আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ, দলের জন্য অবদান ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করছেন।
এর পর দুপুরে সচিবালয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমি জাতির কাছে বিচার চাইছি, আরেকটা হচ্ছে ইলেকশন কমিশনের কাছেও, কারাদণ্ডে দণ্ডিত একজন ফিউজিটিভ, পলাতক, বিদেশে আছে এ রকম কেউ এভাবে ভিডিও কনফারেন্স করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন কি না, এ ব্যাপারে ইলেকশন কমিশনেরও আমরা দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
এর পরই গণমাধ্যমকর্মী বিষয়টি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলামের দৃষ্টিতে আনেন। তখন তিনি বলেন, ‘যদি কেউ তথ্য-প্রমাণসহ আমাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন, তাহলে পরে আমরা আইনের মধ্য থেকে যদি কিছু থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বলব।’
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘যদি কেউ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হন, তাহলে অবশ্যই তার জেলে বা পলাতক থাকার কথা। কেউ জেলে থাকলে এই ধরনের কাজ করার কথা না। জেল থেকে যদি উনি জামিনে আসতেন, তাহলে করলে পরে কোনো অসুবিধা ছিল না। কিন্তু এ ক্ষেত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আইনের কাভারেজ কতটুকু কী আছে, এগুলো দেখে আমরা একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’
‘গ্রেপ্তার বন্ধে নির্দেশ দেবে ইসি’
তফসিল ঘোষণার পরও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও মামলার আসামি করা হচ্ছে—এমন একটি তালিকা ইসিতে দিয়েছে বিএনপি। আজ বেলা ১১টার দিকে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে এই তালিকা জমা দেয় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মামলা ও তথ্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন খানের নেতৃত্বে দুই সদস্যের প্রতিনিধিদল।
ইসির কাছে অভিযোগ করে বিএনপি বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে মামলার তালিকা দেওয়া হয়েছে; কিন্তু তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি অব্যাহত আছে।
সেইসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ উপেক্ষা করে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলেও অভিযোগ করে দলটি। তালিকা অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭৭৩ জন বিএনপির নেতাকর্মী।
এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, 'বিএনপির দেওয়া তালিকাটি আমি এখনো দেখিনি। তবে সত্যিকারের অর্থে যদি কোনো হয়রানিমূলক মামলা হয়ে থাকে, তাহলে আমরা অবশ্যই পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেব, যেন হয়রানিমূলক মামলা না করে। কারণ হয়রানিমূলক মামলা করলে নির্বাচনের পরিবেশ কিছুটা হলেও বিনষ্ট হবে। সুতরাং, কমিশন নির্দেশনা দেবে এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য।’
প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ফোন নিয়ে হরয়ানির বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘কমিশন থেকে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি। যদি কেউ এ ধরনের কাজ করেন, তাহলে অতি উৎসাহী হয়ে করছেন। নির্বাচন কমিশন এর প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেবে।’
নির্বাচনী প্রচার সম্পর্কে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজ রোববারের মধ্যে আগাম সব ধরনের নির্বাচনী প্রচার সরিয়ে ফেলতে হবে। যদি কেউ সরিয়ে না ফেলেন, তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’