‘পচা’ গমের দায় একমাত্র মহাপরিচালকের!
ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম প্রসঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ বলেছেন, ‘দায়িত্বটা হলো একমাত্র মহাপরিচালকের (ডিজি)। এখানে মন্ত্রণালয়ের কোনোরকম দায়-দায়িত্ব নাই।’
আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে দশম জাতীয় সংসদের খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির নবম বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মো. আবদুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তবে তিনি এ কথাও বলেন, ‘মহাপরিচালক ক্রয় করবে, দরপত্র আহ্বান করবে, অর্থ পরিশোধ করবে, কিন্তু যেহেতু মহাপরিচালক মন্ত্রণালয়ের অধীনে তাই মন্ত্রণালয় দায়িত্বকে অস্বীকার করতে পারে না।’
আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকের প্রতি এ প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে মন্ত্রীকে জড়ানো হচ্ছে। অবশ্য মন্ত্রী দায় অস্বীকার করতে পারেন না। কারণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে অধিদপ্তর। পুরো দায়-দায়িত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের ওপরে বর্তায়। আমরা মহাপরিচালককেও প্রশ্নের সম্মুখীন করেছি।’
আমদানির আগে মন্ত্রী এই গম সম্পর্কে জানতেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘মন্ত্রীর অজ্ঞাতসারে সম্ভব এই কারণে যে, মন্ত্রণালয় একটা আদেশ দেয়। আমরা এই পরিমাণ গম এবার ক্রয় করতে চাই। এর দায়-দায়িত্ব সম্পূর্ণ অধিদপ্তরের ওপরে বর্তায়।’
সভায় বিভিন্ন আলোচ্য বিষয় থাকলেও ব্রাজিলের গমের বিষয়টা সামনে চলে আসে জানিয়ে আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘আমরা জানতে চেয়েছি, এ রকম আলোচনা হচ্ছে কেন? মন্ত্রণালয়ের জবাব আমাদের কাছে ঠিক আছে মনে হয়েছে।’
আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা কোম্পানির মাধ্যমে যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই গম আমদানি করা হয়েছে উল্লেখ করে ওয়াদুদ বলেন, ‘লাল রঙের গম আমাদের দেশের মানুষ একটু কম পছন্দ করে, সাদা রঙের গমই মানুষ বেশি পছন্দ করে। পঁচা বলার ক্ষেত্রে এটিও একটা কারণ হতে পারে। কিন্তু এর সব উপাদান ঠিক আছে।’
বৈঠকে সংসদীয় কমিটি সাব-কমিটি গঠন করেছে কি না জানতে চাইলে সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘এখনো কোনো কমিটি আমরা করার সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে তাঁদের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজ এবং ক্রয় করার সব কাগজ আমরা চেয়েছি। আগামী বৈঠকে আমরা পরীক্ষা করে দেখবৱ, এত আলোচনা কেন হচ্ছে? কোথা থেকে সূত্রপাত? কেন হচ্ছে- সেটি আমাদের দেখা দরকার। কারণ সরকারের ভাবমূর্তিতে প্রভাব পড়ে।’
আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘সরকারের ভাবমূর্তির জন্য গণমাধ্যম বিরাট একটা ভূমিকা রাখে। গণমাধ্যমে প্রশ্ন আসার পর আমরা বিষয়টাতে সজাগ হয়েছি। মন্ত্রণালয়কে চেপে ধরেছি, মহাপরিচালককে চেপে ধরেছি। তাঁদের উত্তর আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে।’
আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘এ ছাড়া এটি আদালতে আছে। সেই ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনার পর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কমিটির বৈঠকে বর্তমান মৌসুমে ধান ও গম সংগ্রহ, গম আমদানি এবং খাদ্য গুদাম নির্মাণ অগ্রগতি সংক্রান্ত আলোচনা করা হয়। কমিটি নির্মাণাধীন খাদ্য গুদাম প্রকল্পের কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য সুপারিশ করে।
বৈঠকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় দেশের কৃষকদের কাছ থেকে ধান ও গম সংগ্রহের পরামর্শ প্রদান করা হয়। তা ছাড়া সরকারি সিদ্ধান্ত অবশ্যই সুষ্ঠুভাবে ও সততার সঙ্গে সম্পাদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ প্রদান করা হয়। বৈঠকে আমাদানিকৃত গমের সমর্থনে ছাড়পত্র এবং বিভিন্ন পরীক্ষাগারে পরীক্ষার প্রতিবেদন পরবর্তী কমিটিতে উপস্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বৈঠকে কমিটি সদস্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. কামরুল ইসলাম, মো. আবদুল মালেক, খন্দকার আবদুল বাতেন, শেখ মো. নূরুল হক ও শিরিন নাঈম অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।