মেজর জিয়া চ্যাপ্টারও অচিরেই শেষ হবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
জঙ্গি তামিম চৌধুরীর মতো মেজর জিয়ার চ্যাপ্টারও অচিরেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
আজ শনিবার বিকেলে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ নিউমার্কেটে স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তামিমের চ্যাপ্টার শনিবার শেষ হয়েছে। অচিরেই জিয়ার চ্যাপ্টারও শেষ হবে। প্রশাসন তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’
‘দেশের মানুষ এখন জঙ্গিদের খাবার ও আশ্রয় দিচ্ছে না। অচিরেই তাঁরা নিশ্চিহ্ন হবে’, যোগ করেন আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরী ও ব্লগার হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নেতা চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হককে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ। অনেক দিন ধরেই তাঁদের খুঁজছে পুলিশ।
এর আগে আজ সকালে নারায়ণগঞ্জ সদরের পাইকপাড়ায় দেওয়ানবাড়িতে অভিযানে যান পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াতের সদস্যরা। এতে রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া হামলার ‘পরিকল্পনাকারী ও জোগানদাতা’ তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিন জঙ্গি নিহত হন। অন্য দুই জঙ্গি হলেন মানিক (২৫) ও ইকবাল (৩৫)। ঢাকার কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানের পর পালিয়ে যান এই ইকবাল।
নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় আজকের অভিযান সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে গেলে তাঁরা (জঙ্গিরা) পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ও বোমা হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ তাঁদের আত্মসমর্পণের জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু তাঁরা না শুনে উল্টো পুলিশের ওপর আক্রমণ করেন। পুলিশ তখন পাল্টা-আক্রমণ করে।
সমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, জামায়াত-শিবির বিভিন্ন নামে দেশে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাচ্ছে। আগে যারা জামায়াত-শিবির করত এখন তারাই আইএস, হুজি, জেএমবির সঙ্গে জড়িত। এসব নামে এখন তারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনা করছে। বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার জঙ্গিদের দেওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
জঙ্গিবাদের উত্থানের পেছনে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা বাংলাদেশকে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান বানাতে চায়। তবে বাংলাদেশে তারা সফল হবে না। দেশের মানুষ এখন সচেতন হয়েছে। তাঁদের জায়গা বাংলার মাটিতে হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ আজ জেগে উঠেছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যে জনযুদ্ধ শুরু হয়েছে বিজয়ের মধ্য দিয়েই তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একসময় রক্তাক্ত জনপদখ্যাত এই বাগমারা অঞ্চলেই জঙ্গিবাদের উত্থান হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বাগমারা এখন শান্তি ও উন্নয়নের জনপদে পরিণত হয়েছে। মানুষ এখন নিরাপদে ও শান্তিতে ঘুমাতে পারে।
‘সাম্প্রতিককালে যে জঙ্গি তৎপরতা শুরু হয়েছে তা বাংলাদেশের একার সমস্যা নয়। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এখন বৈশ্বিক সমস্যা। তাই এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার থাকতে হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যের মাধ্যমে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে এভাবেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে’, যোগ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাগমারা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আখতার জাহান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা, সহসভাপতি অনিল কুমার সরকার, উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু, রাজশাহী জেলা জজ আদালতের পিপি ইব্রাহিম হোসেন। এ ছাড়া জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা সভায় বক্তব্য দেন। পরে সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বাগমারায় আগমন উপলক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভবানীগঞ্জ হেলিপ্যাডে অবতরণ করার পর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর কমপ্লেক্স পরিদর্শন করতে চানপাড়ায় যান।
আলোচনা সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাগমারার শিকদারীতে নবনির্মিত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন এবং হাটগাঙ্গোপাড়া ও যোগীপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন।