চলমান আন্দোলন বিজয়ের সিংহদুয়ার অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে : রিজভী
বিএনপির চলমান আন্দোলন বিজয়ের সিংহদুয়ার অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
আজ মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, সম্প্রতি শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণের ১ দাবিতে সারা দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে। জেগে উঠেছে মানুষ। হারানো ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য জনগণের সম্মিলিত মিছিল রাজপথকে প্রকম্পিত করছে।
রিজভী বলেন, বিএনপির সভা—সমাবেশ—মিছিল—মিটিং—স্লোগানে চারিদিক থেকে জনগণের মিলিত স্রোতে দেখে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছে ক্ষমতালোভী আওয়ামী লীগ সরকার। বাক—স্বাধীনতা প্রয়োগের জন্য অনেক মানুষ জেল—জুলুম—হামলা—মামলার শিকার হয়েও রাজপথে তাদের সরব উপস্থিতির কোন কমতি হয়নি। শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলনের গতি—প্রকৃতির পরিবর্তন হবে না, তা আরও তীব্রতর হবে। মাত্রাছাড়া আওয়ামী সন্ত্রাস ও পুলিশি আক্রমণের মুখেও গণতন্ত্রকামী মানুষ গণতন্ত্র ফেরানোর প্রচেষ্টায় অক্লান্ত রয়েছে। তাই অত্যাচারী ও অনাচারী আওয়ামী সরকার ও তাদের দোসররা বিএনপির সভা—সমাবেশ নিয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্র—চক্রান্ত ও অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। আগামীকাল বেলা দুটায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি (ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ) এর উদ্যোগে জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি আহুত এই জনসমাবেশ সম্পর্কে বিভ্রান্ত ছড়ানোর জন্য সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু তাতে কোন কাজ হবে না। জনগণ কিন্তু গভীর নিদ্রায় অচেতন নয়। নতুন যুগের জয়যাত্রার পথে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সৌধ ভেঙে জনগণ প্রতিষ্ঠা করবে নিজেদের মালিকানা, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। চলমান আন্দোলন বিজয়ের সিংহদুয়ার অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছে।
বিএনপির এই শীর্ষনেতা ঢাকাবাসীসহ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী, সমর্থকদের সরকারি চক্রান্ত ও অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে আগামীকাল বুধবার অনুষ্ঠিতব্য জনসমাবেশকে সার্থক ও সফল করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান।
রিজভী বলেন, মিথ্যার আতুর ঘরে জন্ম আওয়ামী নেতাদের। অসত্য মিথ্যাচার, অপপ্রচারে বিভ্রান্ত ছড়ানোই যেন আওয়ামী নেতাদের সহজাত প্রবৃত্তি। এরা ডাকাতিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে। ব্যাংক ডাকাতি, অন্যের জমি—জিরাত ডাকাতি, মানুষের নাগরিক অধিকার ডাকাতি, ব্যালট বাক্স ডাকাতিসহ সমগ্র নির্বাচন পদ্ধতিকে ডাকাতি করা ছাড়া তাদের রাজনীতিতে কোন নীতি ও আদর্শ নেই। শেখ হাসিনা প্রতিহিংসা ও আক্রোশবশত তৈরি করেছেন নিষ্ঠুর ধ্বংসের পথ। এক ভয়ানক অবিচার আর অনাচারের রাজত্ব কায়েম করে অপপ্রচারের উপরই টিকে থাকতে হয় অবৈধ ক্ষমতাসীনদের। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, নির্বাচনি ব্যবস্থাকে কলুষিত করে জবাবদিহিহীন ও অসীম ক্ষমতাশালী সরকার কায়েম হয়েছে জনগণের ক্ষমতাকে হরণ করে। আর এ কারণেই দেশের সম্পদ লুণ্ঠন ও অর্থপাচারে পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা অর্জন করেছে আওয়ামী সরকার। এদিকে সরকারি ব্যর্থতায় খাদ্যপণ্যের চরম মূল্যস্ফীতিতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন কাটছে অনাহারে—অর্ধাহারে, রোগে শোকে কাহিল সাধারণ মানুষ। এ বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর পিরামিড জমেছে, কিন্তু এ বিষয়ে সরকার ভ্রুক্ষেপহীন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, এখন চরম সংকট বিরাজ করছে জাতীয় জীবনে। এই ক্রান্তিকালে এ দেশে মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আশা—আকাঙ্খাকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীই বলেছেন—বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে দিবো। এই হুমকি জনগণের বিরুদ্ধে, জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের বিরুদ্ধে। অত্যন্ত বিপজ্জনক ও অন্যায্য উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের হুমকি দিয়েছেন। আর সেই কারণেই অপপ্রচার আর বানোয়াট বক্তব্য ছড়াচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা।
এসময় রিজভী সারা দেশে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা, মামলা ও গ্রেপ্তারের বিবরণ তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান মিন্টু, ফজলুর রহমান খোকন, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী (দপ্তরে সংযুক্ত) প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।