তুমব্রু সীমান্তে আতঙ্ক, ঘর ছাড়ছেন মানুষ
মিয়ানমারে বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ব্যাপক গোলাগুলিতে উত্তাল বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্ত। বাংলাদেশেও ঢুকে পড়ছে তাদের গুলি, মর্টারশেল। এরই মধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে কেউ বের হচ্ছেন না। অনেকে নিরাপদ এলাকা খুঁজে ছাড়ছেন ঘর। নিরাপত্তাজনিত কারণে এরইমধ্যে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ, শফিকুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন বলেন, জলপাইতলী এলাকায় সীমান্তবর্তী ধানক্ষেতে কাজ শেষে ক্ষেতের পাশেই বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন তারা। এ সময় মিয়ানমারের ওপার থেকে ছোড়া মর্টারশেলের বিষ্ফোরিত অংশ জলপাইতলী এলাকায় এসে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন বাংলাদেশি নারী আসমা খাতুন (৫৫)। তিনি জলপাইতলী গ্রামের বাসিন্দার বাদশা মিয়া সওদারগরের স্ত্রী। এ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় একজন পুরুষ শ্রমিককে উদ্ধার করে কক্সবাজারের এমএসএফ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহতের নাম পরিচয় জানা যায়নি। সীমান্তবাসীরা চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। আতঙ্কে আছি আমরা নিজেরাও।
তুমব্রু বাজারের স্থানীয় ব্যবসায়ী সৈয়দ আলম বলেন, দুপুরের দিকে আমার চোখের সামনেই কয়েকটি গুলি এসে পড়েছিল বাড়ির আঙ্গিনায়। নিরাপত্তাহীনতায় পরিবারকে কক্সবাজারে আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। নিজেও ইটের দেয়ালের একপ্রান্তে ভয়ে বসে আছি। সীমান্ত পরিস্থিতি কয়েকদিনের চেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে।
ইউপি সদস্য দিল মোহাম্মদ বলেন, তুমব্রু সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রাম মানুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। গবাদি পশু, পোষা পাখি ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছে মানুষজন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নেওয়াদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টারশেলের আঘাতে এক বাংলাদেশি নারী ও এক রোহিঙ্গা শ্রমিক নিহত হয়েছেন।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন গতকাল জানিয়েছিলেন, পরিস্থিতি বিবোচনায় সীমান্তবর্তী পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যানবাহন এবং জনচলাচল সীমিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। সীমান্তে বিজিবি টহল এবং নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সতর্কবস্থায় রয়েছে।