‘ছাত্র আন্দোলনে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন অর্ধসহস্রাধিক’
কোটা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই মাঠে নেমেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছিলেন। একপর্যায়ে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার ‘রাজাকারের বাচ্চা’ উচ্চারিত উসকানিমূলক বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলেন। শুরু হয় তাদের ওপর দমন-পীড়ন, গুলি। ১৬ জুলাই পুলিশের গুলির সামনে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ। এরপর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জ্বলে ওঠে আন্দোলনের বাতি।
নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সেই আন্দোলনে নিহতদের ‘জামায়াত-শিবির’, ‘ড্রাগ অ্যাডিকটেড’ ইত্যাদি তকমা লেপে দেওয়ার চেষ্টা করে হাসিনা সরকারের অনুচররা। তাতেও প্রতিরোধ থামাতে না পেরে পেটুয়া পুলিশবাহিনী দিয়ে প্রকাশ্যে চালায় গুলি, চলে গুপ্ত হত্যা, ধরপাকড়।
অবশেষে আন্দোলন রূপ নেয় ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবে। এরপর আসে ৫ আগস্ট। গণবিপ্লবের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তার আগেই ‘এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত ও ৪০০-এর বেশি ছাত্র-জনতা দৃষ্টিশক্তি হারান’। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম সম্প্রতি এই হতাহতের তথ্য জানান।
আজ শুক্রবার (৩০ আহস্ট) ইউএনবির প্রতিবেদন বলছে, গত বুধবার বিকেলে রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ছাত্র আন্দোলনে আহতদের সঙ্গে দেখা করতে যান নূরজাহান। সেখানে গিয়ে তিনি হতাহতের তথ্য জানান।
ইউএনবির প্রতিবেদন আরও বলছে, পরিদর্শনের সময় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হাসপাতালে সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন আহত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের খোঁজখবর নেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ এবং ডাক্তারদের সঙ্গে চিকিৎসাসেবা নিয়ে কথা বলেন।
পরিদর্শন শেষে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ছাত্র আন্দোলনে অনেকে আহত হয়েছেন। পুলিশের অনেক আহত সদস্যও চিকিৎসাধীন আছেন। অনেকে পায়ে আবার অনেকে মাথায় আঘাত পেয়েছেন। তাদের চিকিৎসা চলছে। তিনি আরও বলেন, ‘সরকার থেকে বলা হয়েছে, যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের দায়িত্ব সরকার নেবে এবং যারা আহত হয়েছেন, তাদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে। এ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, এক হাজারের ওপর নিহত হয়েছেন এবং ৪০০-এর ওপর ছাত্র জনতা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।’
নূরজাহান বেগম বলেন, ‘অনেকের এক চোখ অন্ধ হয়ে গেছে, অনেকে দুচোখেরই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। যাদের চোখ অন্ধ হয়ে গেছে বা চোখে সমস্যা দেখা দিয়েছে, আমেরিকার সেবা ফাউন্ডেশনকে তাদের তালিকা পাঠিয়েছি।’ যত শিগগিরই সম্ভব সেবা ফাউন্ডেশন চিকিৎসার জন্য দেশে ডাক্তার নিয়ে আসবে বলে জানান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও দিনাজপুরে তাদের চিকিৎসা হবে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘অনেকে পায়ে আঘাত পেয়েছেন, অনেকের পা কেটে ফেলতে হয়েছে। আমরা বিভিন্ন দাতাসংস্থার সঙ্গে কথা বলছি, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গেও কথা হয়েছে, যাতে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে ডাক্তারদের টিম নিয়ে আসা যায়। সেটা নিয়ে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’