ফেলানী হত্যার ১৪ বছর, বিচার পায়নি পরিবার
১৪ বছর আগের ঠিক এই দিনটিতে বিশ্ব সাক্ষী হয়েছিল এক নারকীয় হত্যাকাণ্ডের। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারির ভোরে কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেলানীর বাবা ঢুকতে পারলেও পারেনি সে। বিএসএফের গুলিতে প্রাণ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তের কাঁটাতারে বিঁধে ঝুলে ছিল দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘণ্টা। বয়স আর কতো হবে, ১৬ কি ১৭। এই কিশোরীর মরদেহ ঝুলে থাকার ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল সেদিন। কেঁদে উঠেছিল বিশ্ব মানবতা। সোচ্চার হয়েছিল গণমাধ্যম। যদিও এরপর কেটে গেছে ১৪ বছর। বিচার পায়নি ফেলানীর পরিবার।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারির ঘটনায় গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলাের তীব্র সমালােচনার মুখে পড়ে ভারত। পরে বিএসএফের বিশেষ কাের্ট দুই দফায় বিচারিক রায়ে খালাস দেওয়া হয় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘােষকে। এ রায় প্রত্যাক্ষাণ করে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মাসুম এর সহযাগিতায় ভারতীয় সুপ্রিম কাের্টে রিট আবেদন করে ফেলানীর পরিবার।
শেষ তথ্যে জানা গেছে, ফেলানী হত্যার বিচার ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে বিবেচনাধীন রয়েছে। কিন্তু, এখনো তা বিচারকার্য তালিকায় উঠেনি। অন্যদিকে, ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় হতাশা নিয়ে দিন গুনছে ফেলানীর পরিবার।
আরও পড়ুন : ‘ফেলানী হত্যার বিচার লোকদেখানো’
জানা যায়, পেটের তাগিদে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলােনীটারী গ্রামের দরিদ্র নূরুল ইসলাম পাড়ি জমিয়েছিলেন ভারতে। পরিবার নিয়ে থাকতেন বঙ্গাইগাও এলাকায়। নূরুল ইসলামর বড় মেয়ে নিহত ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। বিয়ের উদ্দেশে ২০১১ সালে নিজ দেশে আসার জন্য ওই বছরের ৭ জানুয়ারি ভোর ৬টার দিকে ভারতের কাঁটাতার বেয়ে আসতে থাকে সে।
দালালের মাধ্যমে ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্তে মই বেয়ে কাঁটাতার টপকে পার হয় ফেলানীর বাবা। পরে ফেলানী কাঁটাতার পার হওয়ার সময় বিএসএফর গুলিতে বিদ্ধ হয় সে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আধা ঘণ্টা ধরে কাঁটাতারের ওপরই ছটফট করতে থাকে ফেলানী। পরে সেখানে ঝুলন্ত অবস্থাতেই নির্মমভাবে মৃত্যু হয় এই কিশােরীর।
এরপর সকাল পৌনে ৭টা থেকে দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘণ্টা ফেলানীর নিথর দেহ কাঁটাতারে ঝুলে থাকে। এ ঘটনায় বিশ্বব্যাপী তােলপাড় শুরু হলে ২০১৩ সালর ১৩ আগস্ট ভারতের কােচবিহার জেনারেল সিকিউরিটি ফাের্সেস কাের্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফ এর এ কাের্টে স্বাক্ষী দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ।
ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘােষকে খালাস দেয় বিএসএফের বিশেষ আদালত। পরে রায় প্রত্যাখ্যান করে ফের বিচারের দাবি জানায় ফেলানীর বাবা। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আবারও বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
২০১৫ সালের ২ জুলাই এ আদালত পুনরায় আত্মস্বীকৃত আসামি অমিয় ঘােষকে খালাস দেয়। রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কাের্টে একটি রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টােবর রিট শুনানির তালিকা ভুক্ত হয়। কিন্তু ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০২০ সালর ১৮ মার্চ করােনা মহামারি শুরুর আগে শুনানির জন্য দিন ধার্য হলেও শুনানি হয়নি আজ পর্যন্ত।