বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রবন্ধ সম্পাদনার কমিটিতে বিএনপিপন্থি শিক্ষক
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রবন্ধ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার গোস্বামীকে প্রধান সম্পাদক করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫তম একাডেমিক কাউন্সিলে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এদিকে, কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই অনুমোদন দেন একাডেমিক কাউন্সিল।
জানা যায়, প্রবন্ধ রচনা কমিটির সহযোগী সম্পাদক বিএনপিপন্থি সাদা দলের শিক্ষক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মেজবাহ-উল-আজম সওদাগর। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮ জন বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
অধ্যাপক অরুণ কুমার গোস্বামী বলেন, ‘অনুষদের অন্তর্ভুক্ত বিভাগের চেয়ারম্যানদের অনুমোদন সাপেক্ষে তাকে কমিটিতে রাখা হয়।’
অধ্যাপক মো. মেজবাহ-উল-আজম সওদাগরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘প্রধান সম্পাদককে কমিটি থেকে আমার নাম বাদ দিতে বলেছি।’
একাডেমিক কাউন্সিলের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, গত ১০ মার্চ সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগসমূহের চেয়ারম্যানদের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে একটি মানসম্পন্ন প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশনার জন্য এডিটোরিয়াল বোর্ড গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
কমিটিতে প্রধান সম্পাদক হিসেবে আছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার গোস্বামী, সহযোগী সম্পাদক হিসেবে আছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারজানা জামান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মেজবাহ-উল-আজম সওদাগর এবং সদস্য হিসেবে আছেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম, সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শিপ্রা সরকার ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ড. শাহ মো. নিসতার জাহান কবির।
এমন বিব্রতকর বিষয়টি নিয়ে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের মধ্যে এরই মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। একজন বিএনপিপন্থি শিক্ষক কীভাবে বঙ্গবন্ধুর প্রবন্ধ সম্পাদনায় যুক্ত হতে পারে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, কোনো তৃতীয় পক্ষ এর মধ্য দিয়ে ফায়দা নিতে চাচ্ছেন কিনা। মদদ দাতাদের চিহ্নিত করতে হবে।
এ বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাদা দলের অনেক শিক্ষক থাকলেও এখন তাঁদের খুঁজে পাওয়া দুস্কর। এখন সবাই দল ভারি করার জন্য সাদা দলের শিক্ষকদের দলে টানছেন। নীলদলের বিভাজনকে তাঁরা ব্যবহার করছেন। সাদা দলের শিক্ষকরাও নীলদলে যোগ দিচ্ছেন। এভাবে উভয়পক্ষ সুবিধাও নিচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘এ ঘটনায় আমরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেছি। একজন সিনিয়র শিক্ষক কীভাবে এত বড় ভুল করেন। একাডেমিক কাউন্সিলে পাশ করার আগে কোনো চিন্তা করেননি। তিনি জেনেও এমন ভুল করেছেন, এটা বড় দুঃখের। শুনেছি সেই শিক্ষকের নাম বাদ দিবেন। এর বেশি কিছু জানি না।’
এ বিষয় নিয়ে অরুণ কুমার গোস্বামীকে প্রশ্ন করলে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আমি তো কিছুই জানি না তুমি জানলা কেমনে? তোমরা কি এই কাজই করো? অন্য কাজ নাই তোমাদের? এরপর তিনি এই বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে অন্য প্রসঙ্গ তুলে আনেন।’
অরুণ কুমার গোস্বামী আরও বলেন, ‘জগন্নাথ ইউনিভার্সিটির কে কোন দলে করে এই লিস্ট আমার কাছে আনো আমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিব।’
ইউজিসির পোস্ট ডক রিসার্চ ফেলো ও বঙ্গবন্ধু গবেষক অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘এতজন শিক্ষকের সামনে এত বড় একটা বিষয় একাডেমিক কাউন্সিলে পাশ হয়ে গেল, এটা বিস্ময়কর। আড়ালে কোনো পক্ষ স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।’
এ বিষয় নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, ‘একাডেমিক কাউন্সিলে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে একটি মানসম্পন্ন প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশনার জন্য সিদ্ধান্ত পাস হয়েছিল। সবার সম্মতিতে পাশ হয়েছিল। তখন কেউ এই বিষয়ে কথা বলেননি। যখন আমি বিষয়টি জেনেছি তখন তাঁর নাম বাদ দিয়েছি।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘এই প্রস্তাব ডিন অফিস থেকেই যাচাই-বাছাই হয়ে এসেছে। আমরা যখন এই প্রস্তাব একাডেমিক কাউন্সিলে তুলি তখন কোনো শিক্ষক এই বিষয়ে অবগত করে নাই। পরে এই বিষয় অবগত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সাথেই তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।’