বরখাকে দীপিকা
চাইতাম যেন আমার ঘুম কখনোই না ভাঙে
‘গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের কথা। একদিন সকালে আমি ঘুম থেকে উঠলাম। আশপাশে চোখ বুলিয়ে দেখছি সবকিছু, আমার অ্যাওয়ার্ডের ক্রেস্ট, বিভিন্ন সংবর্ধনা, পুরস্কার, ছবি- আর হঠাৎ করেই মাথা পুরো খালি হয়ে গেল। আমার সবকিছুই মনে হলো যেন- ফাঁকা! আমার মনে হলো আমার কিচ্ছু নেই, আমার সবকিছুই অর্থহীন, মূল্যহীন! আমি বুঝতেও পারছিলাম না যে আমি কোথায় যাবো, কি করব। আসলেই, কী করার আছে আমার? আমি কাঁদতে শুরু করলাম। একটানা। সেই থেকে শুরু। দিনের পর দিন গেছে যখন আমি চাইতাম যেন আমার ঘুম কখনোই না ভাঙে, কখনোই বিছানা থেকে উঠতে না হয়। পুরো বিষয়টা ছিল, কী বলব; একটা তীব্র আতঙ্কের মতো ...’
এর বেশি আর বলতে পারলেন না। সাক্ষাৎকার চলার সময়েই ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন বলিউডের এ সময়ের সফলতম অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন। কঠিন হৃদয়ের অধিকারী, ভারতের প্রভাবশালী সাংবাদিক বরখা দত্তকেও সম্ভবত স্পর্শ করল এই আবেগ। পেশাদার সাংবাদিক, পেশাদার অভিনেত্রী; তবুও কখনো কখনো কিছু কথা ‘প্রফেশনাল’ সীমারেখাকে পেরিয়ে যায়। এনডিটিভির বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে দীপিকা পাড়ুকোন এবং বরখা দত্তের আলাপচারিতায় তেমনটাই দেখলেন দর্শক।
সাক্ষাৎকারের শুরুতেই বরখা দত্তের ভাষ্যে জানা যায়, পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি হতাশায় ভোগে ভারতের মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, পৃথিবীর সবচেয়ে ‘হতাশ’ এই দেশটির প্রায় ৩৬ শতাংশ মানুষ মানসিক অবসাদ বা স্নায়ুবৈকল্যে ভোগেন। প্রতিবছর প্রায় এক লাখ লোক ভারতে আত্মহত্যা করে; যার প্রধান কারণ নিশ্চয় বলার অপেক্ষা রাখে না। স্বাভাবিকভাবেই, এই হতাশায় ভোগা মানুষদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যাই বেশি। এই সমস্যা নিয়ে কেউ প্রকাশ্যে কোনো কথাও বলতে চায় না, লুকিয়ে রাখতে চায় পুরো বিষয়টি। এতে দিন দিন এই সমস্যা প্রকটা হয়ে উঠেছে। দীপিকা পাড়ুকোনের মতো একজন তারকা এই নীরবতা ভেঙে সমস্যাটি নিয়ে সরাসরি কথা বলায় তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান বরখা দত্ত। অনুষ্ঠানে দীপিকার মা ও তাঁর পরামর্শদাতা চিকিৎসক ও পরামর্শদাতারাও উপস্থিত ছিলেন।
এই নীরবতা ভেঙে কথা বলে ওঠার পেছনে দীপিকার একটি উদ্দেশ্যই কাজ করেছে। তা হলো যারা এই সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তারা যেন বিশ্বাস করতে পারে যে এর সমাধান আছে। ‘আমার এই বিষয়টি প্রকাশ করার কারণে যদি একজন মানুষের জীবন প্রভাবিত হয়, তাতেও আমি খুশি। আমি চাই, যে কেউ জানুক যে আমি কোন অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি এবং কিভাবে সবার সহায়তায় এই পরিস্থিতি থেকে সামলে উঠেছি।’
বলিউড অভিনেত্রীদের তীব্র মানসিক অবসাদে ভোগার বিষয়টি নতুন নয়। মানসিক অবসাদে ভুগতে ভুগতে পারভিন ববির মতো অভিনেত্রী আত্মহত্যা করেছিলেন। তাঁকে পাগল হিসেবেও অনেকে সাব্যস্ত করেছিল সে সময়। কিন্তু এই বিষয় নিয়ে সব সময়ই চুপচাপ ছিল বলিউড। এই নীরবতা ভেঙেছেন দীপিকা পাড়ুকোন, সরাসরি গণমাধ্যমে বলেছেন তাঁর তীব্র মানসিক অবসাদে ভোগার কথা। এরপর শুধু সেখানেই থেমে থাকেননি। মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যার জন্য একটি বিশেষ ফাউন্ডেশনও খুলেছেন। এর নাম ‘বাঁচো হাসো ভালোবাসো’ বা ‘লিভ লাফ লাভ’।
গত বছর সবাইকে চমকে দিয়ে নিজের বিষণ্ণতা এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যার কথা অকপটে স্বীকার করেন দীপিকা। সেই সময় থেকেই এই সমস্যা মোকাবিলায় একটি সংগঠন তৈরির জন্য কাজ শুরু করেন বলিউডের এই সফল অভিনেত্রী।