কিশোরগঞ্জের হাওরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি
উজানের পাহাড়ি ঢল আর টানা বৃষ্টিতে কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে কয়েক লাখ মানুষ। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়ছে জেলার হাওর উপজেলা হিসাবে পরিচিত মধ্যে ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, করিমগঞ্জ, তাড়াইল ও নিকলী উপজেলার মানুষ।
গতকাল রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলাগুলোর কয়েক বসতবাড়ি, বাজার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। এসব এলাকার বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির নিচে চলে যাওয়ায় অনেক মৎস খামারের মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া বন্যায় তলিয়ে যাওয়ার কারণে গো খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে অনেকে গবাদিপশুসহ মালামাল সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন কেউ কেউ। ইতিমধ্যেই অনেক বন্যার্ত মানুষ গবাদি পশুসহ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, শনিবার থেকে কিশোরগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এ পর্যন্ত জেলার আটটি উপজেলার ৫০টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের সহায়তায় এ পর্যন্ত ১৪০ মেট্রিক টন রিলিফের চাউল, নগদ আড়াই লাখ টাকা সহায়তাসহ শুকনো খাবার প্রদান করা হয়েছে। এর বাইরে অতিরিক্ত আরও দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা দেয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। বন্যার্তদের সহায়তায় জেলার সবকটি আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করা রাখা হয়েছে।
ইতিমধ্যেই চার হাজার ৮৯৬ জন বন্যার্ত আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন। তাদেরকে শুকনো খাবার প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া ২৬৫টি গবাদি পশু আশ্রয় কেন্দ্রে আছে। সব মিলিয়ে এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান জানান, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কিশোরগঞ্জের হাওরের সব জায়গায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। হাওরের ওপর প্রবাহিত বিভিন্ন নদ-নদীর পানি গত শনিবার রাতে তিন ফুট বাড়লেও গতকাল পানিবৃদ্ধির হার ছিল কম। তবে, পানি বেড়ে যাওয়া অব্যাহত থাকলে অবস্থার আরও অবনতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
ইটনা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাফিসা আক্তার বলেন, ‘ইটনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। ইটনা বাজারেও পানি উঠেছে। সেখানকার লোকজন ইটনা সদরে অবস্থিত রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সরকারি কলেজসহ অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্রে এসে উঠেছেন।’
অষ্টগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতিতে অষ্টগ্রামের অবস্থা হাওরের অন্যান্য উপজেলার তুলনায় এখনো ভালো। তবে, অনেক নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। সদর ইউনিয়নের ৪০ থেকে ৫০টি বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। অন্যান্য ইউনিয়নে এখনও পানি ঢোকেনি।’
নিকলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু হাসান বলেন, ‘ইতোমধ্যেই উপজেলার কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ছাতিরচর, সিংপুর, দামপাড়া ইউনিয়ন বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, এভাবে বৃষ্টি হলে নিকলী উপজেলার অনেক এলাকাতেও বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।’
মিঠামইন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এই উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই কিছু এলাকা কম-বেশি তলিয়ে গেছে। উপজেলার ৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র বন্যার্তদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৬০০ বন্যার্ত আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছেন।’