সিলেটের বিস্ফোরণ, আইএসের দায় স্বীকার
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির ‘জঙ্গি আস্তানা’ ‘আতিয়া মহল’ থেকে একটু দূরে পরপর দুটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। সংগঠনটির বার্তা সংস্থা হিসেবে পরিচিত ‘আমাক’ এই খবর দিয়েছে বলে জানিয়েছে অনলাইনে জঙ্গিদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ।
শনিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ‘আমাক’ এর বরাত দিয়ে সাইটের ইন্টেলিজেন্সের টুইটারে এই কথা জানানো হয়।
এদিকে বোমা বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬ জন হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা ও রাতে ওই এলাকায় পরপর দুই দফা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের দুইজন পুলিশ কর্মকর্তা। এছাড়া স্থানীয় এক শিক্ষার্থীসহ আরো চারজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৪০ জন। তাদের মধ্যে তিনজন পুলিশ ও দুজন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) দুই সদস্য রয়েছে।
শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কন্ট্রোলরুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক (এসআই) মো. নুরুজ্জামান জানান, বিস্ফোরণের ঘটনায় জালালাবাদ থানার ওসি (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জান্নাতুল ফাহিম মারা গেছেন। এরা দুইজনই ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এর আগে আজ শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে অতিরিক্ত উপকমিশনার জেদান আল মুসা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘অভিযান চলাকালে ঘটনাস্থলের বাইরে বোমা বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হয়েছেন। এঁরা হলেন পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী মোহাম্মদ কায়সার, স্থানীয় যুবক ওয়াহিদুল ইসলাম অপু (২৪) এবং শহীদুল (৩০)। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
হাসপাতালে ভর্তি করার পর আহত অজ্ঞাতনামা একজন রাতে মারা যায় বলে সিলেট পুলিশের উপ-কমিশনার রেজাউল করিম জানান।
হাসপাতালে একটি লাশের পাশে থাকা এক যুবক নিজেকে নিহত যুবক অপুর ফুপাতো ভাই বলে দাবি করেন। তাঁর নাম আবদুল্লাহ আল সোহাগ।
আবদুল্লাহ আল সোহাগ দাবি করেন, অপুর বাড়ি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার জালুপাড়া চান্দিঘাট এলাকায়। তাঁর বাবার নাম আওলাদ হোসেন। অপু সিলেট মদনমোহন কলেজে অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
রাত পৌনে ৯টার দিকে হাসপাতালে সোহাগ এনটিভি অনলাইনের কাছে আরো দাবি করেন, ‘সকালে অভিযান দেখতে বাসা থেকে বের হন। পরিবার তখন তাঁকে বাধা দেয়। কিন্তু পরিবারের কথা না শুনে তিনি শিববাড়ি এলাকায় আসেন। সন্ধ্যায় তাঁর আহত হওয়ার খবর পেয়ে আমি হাসপাতালে এসে লাশ পাই।’
নিহত শহীদুলের গ্রামের বাড়ি মযমনসিংহ জেলার ভালুকাতে বলে জানা গেছে। তিনি সিলেটের দারিয়াপাড়াতে থাকতেন।
হাসপাতালে এনটিভি প্রতিনিধি মারুফ আহমেদ বোমা বিস্ফোরণে আহত অন্তত ১৫ জনকে ভর্তি হতে দেখেছেন। এঁদের মধ্যে দুজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যও রয়েছেন।
পুলিশ জানায়, সন্ধ্যার দিকে ‘আতিয়া মহল’ থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে মূল সড়কের কাছের একটি জায়গায় প্রথম বোমার বিস্ফোরণটি ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজনকে আহত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে কিছুক্ষণ পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে আসেন।
এরপর রাত পৌনে ৮টার দিকে কাছাকাছি স্থানে আরেকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে।
ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিকরা জানান, যেখানে প্রথম বোমার বিস্ফোরণটি ঘটে তার কাছেই সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে অভিযান সম্পর্কে ব্রিফ করেন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান।
সকাল ৯টায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অপারেশন টোয়াইলাইট শুরুর প্রায় নয় ঘণ্টা পর আনুষ্ঠানিকভাবে এই ব্রিফিং করা হলো।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ডো দল কয়েকটি গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে দলটি সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক বন্ধ করে দেয়। এ ছাড়া শিববাড়ি এলাকার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর জনসাধারণ ও সংবাদকর্মীদের ওই এলাকা থেকে এক কিলোমিটার দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি গাড়ি ও পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স, সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও কর্মীরা রয়েছেন।
সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জেদান আল মুসা জানান, অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালের তিনটি অ্যাম্বুলেন্স রাখা হয়েছে ঘটনাস্থলে।
সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ডো দল বাড়িটির তিন দিকে অবস্থান নিয়ে অভিযান শুরু করেছে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে সেনাবাহিনীর আট সদস্যের একটি প্যারাকমান্ডো দল ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়। এর আগে অভিযানে অংশ নিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশের বিশেষ বাহিনী সোয়াট।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটা থেকে ‘আতিয়া মহল’ নামের পাঁচতলা বাড়িটি ঘিরে রাখে পুলিশ। বাড়ির নিচতলার ফ্ল্যাটে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা অবস্থান করছে বলে ধারণা পুলিশের।
স্থানীয় লোকজন জানায়, বাড়িটির দোতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত ২৯টি ইউনিটে ২৯টি পরিবার রয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রামের অভিযানের পর আটক জঙ্গিদের দেওয়া তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শিববাড়ি এলাকার পাঁচতলা বাড়িটি ঘিরে রাখেন সিলেটের স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ঢাকা থেকে যাওয়া কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা।