চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেরা পাঁচ ম্যাচ
আর কয়েকদিন পরই শুরু হতে যাচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রতিযোগিতা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। গতবারের মতো এবারও ইংল্যান্ডে বসছে বিশ্বকাপের পর ৫০ ওভারের ক্রিকেটে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই আসরটি। আসুন দেখে নিই আসরের সেরা পাঁচটি ম্যাচের চুম্বক অংশ।
ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা, কলম্বো, ২০০২
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে সবচেয়ে জমজমাট ম্যাচটি হয়েছিল ২০০২ সালে কলম্বোতে। ম্যাচটি মূলত স্মরণীয় হয়ে আছে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং-ধসের কারণে। সেবারই তাদের সঙ্গে চোকার্স তকমাটি ভালোভাবে সেঁটে যায়। সেবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম সেমিফাইনাল ছিল সেটা। টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। যুবরাজ সিংয়ের ৬২ ও শেবাগের ৫৯ রানে ভর করে ৫০ ওভারে ২৬১ রান তোলে ভারত। কলম্বোর টার্নিং উইকেটে সবাইকে অবাক করে দিয়ে এক উইকেটে ১৯২ রান তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। এই অবস্থায় ফাইনালে ওঠাটা প্রোটিয়াদের জন্য কেবল সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। জয়ের জন্য ৬৮ বলে দরকার ৭১ রান। তবে ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে হার্শেল গিবস মাঠ ছাড়ার পরই বদলে যায় ম্যাচের অবস্থা। উইকেটে এসেই ফিরে যান জন্টি রোডস। সেই ওভারে বোয়েটা ডিপেনারকেও ফেরান হরভজন। এরপর বল হাতে বীরেন্দর শেবাগ হয়ে ওঠেন রহস্যময় বোলার। ভারতীয় স্পিনারদের সামনে অসহায় হয়ে পড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটনম্যানরা। শেষ পর্যন্ত ১০ রানে ম্যাচটি জিতে নেয় ভারত। গিবস ১২৬ ও ক্যালিস করেন ৯৭ রান।
ভারত-শ্রীলঙ্কা, প্রেমাদাসা, ২০০২
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেই আসরে চমকের বাকি ছিল আরো। প্রতিযোগিতার ফাইনালে ওঠে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। প্রেমাদাসায় অনুষ্ঠিত ফাইনালে জয়সুরিয়ার ৭৪ ও সাঙ্গাকারার ৫৪ রানে ভর করে ২৪৪ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। ভারত ২ ওভারে ১৪ রান তুলতেই শুরু হয় বৃষ্টি। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি না থামায় পরদিন আবার নতুন করে ম্যাচ হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তাতেও প্রথমে ব্যাটিং করে স্বাগতিকরা। এবার তারা তোলে ২২২ রান। ৮ ওভারে ভারত এক উইকেটে ৩৮ রান তুলতেই আবার শুরু হয় বৃষ্টি। শেষ পর্যন্ত মাঠ খেলার উপযোগী না হওয়ায় দুই দলকেই শিরোপা ভাগাভাগি করে দেওয়া হয়।
ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ওভাল, ২০০৪
টুর্নামেন্টের সবচেয়ে আকর্ষণ ফাইনাল ম্যাচটি হয়েছিল ২০০৪ সালে। স্বাগতিক ইংল্যান্ড সেবার দাপটের সঙ্গেই উঠে যায় ফাইনালে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজও উঠে আসে প্রতিযোগিতার ফাইনালে। ফাইনালে ইংল্যান্ডকে প্রাথমিকভাবে ফেভারিট ধরা হলেও এখানেও বিশ্লেষকদের অবাক করে দিয়ে স্বাগতিকদের মাত্র ২১৭ রানে অলআউট করে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এক প্রান্ত আগলে ধরে রেখে মার্কাস ট্রেসকথিক করেন ১০৪ রান। দারুণ জবাব দিচ্ছিলেন ইংল্যান্ডের পেসাররাও। একপর্যায়ে ১৪৭ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৮ উইকেট তুলে নেয় তারা। তবে নবম উইকেট জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ইয়ান ব্র্যাডশ ও কোটর্নি ব্রাউন। এই দুজনের ৭১ রানের জুটিতে অসাধারণ এক জয় ছিনিয়ে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৯৭৯ সালের পর এই প্রথম আইসিসির কোনো আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ইংল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা, সেঞ্চুরিয়ন, ২০০৯
আবার দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০০৩ সালের বিশ্বকাপের পর আবার বৈশ্বিক আসরে ব্যর্থ প্রোটিয়া শিবির। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ওয়াইজ শাহর ৯৮ ও পল কলিংউডের ৮২ রানে ভর করে ৩২৩ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। জবাবে ব্যাটিং করতে নেমে ঝড় তোলেন প্রোটিয়া অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ। তবে সতীর্থরা কেইউ যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি অধিনায়ককে। শেষ পর্যন্ত ২২ রানে হার মানতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। স্মিথ ১৩৪ বলে ১৪১ রান করেও আরেকবার চোকার্স অপবাদ মেনে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া, সেঞ্চুরিয়ন, ২০০৯
২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম সেমিফাইনালটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে রিকি পন্টিং ও শেন ওয়াটসনের ব্যাটিং ঝড়ের কারণে। টস জিতে ব্যাটিং করতে নামা ইংল্যান্ডের ব্যাটনসম্যানরা অবশ্য ব্যর্থই হয়েছিলেন সেদিন। শেষ পর্যন্ত টিম ব্রেসনানেন ৮০ রানের দারুণ ইনিংসে ভর করে ২৫৭ রানের ভালো স্কোর দাঁড় করায় ইংল্যান্ড। জবাবে শুরুতেই টিম পেইনের উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে শেন ওয়াটসনের সঙ্গে ২৫২ রানের জুটি গেড় দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন অধিনায়ক রিকি পন্টিং। ওয়াট্টো ১৩২ বলে ১৩৬ ও পন্টিং ১১৫ বলে ১১১ রান করেন। সেবার দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জেতে অস্ট্রেলিয়া।