টিকার কথা বলে ডেকে প্রবাসীর স্ত্রীকে ‘ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা’, দেবর আটক
করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার কথা বলে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণ ও পরে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গৃহবধূর দেবরসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার উত্তরবাখর নগর ইউনিয়নের লোচনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পরে রাত ৩টার দিকে দগ্ধ গৃহবধূ পারভীন বেগমকে (৩০) রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, এ ঘটনায় গৃহবধূর দেবর আলী হোসেন ও ননদের ছেলে শাহরিয়ারকে আটক করা হয়েছে। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সূত্র জানায়, এক যুগ আগে উপজেলার মরজাল এলাকার প্রবাসী জাকির হোসেন বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের সোবানপুর গ্রামের দানা মিয়ার মেয়ে পারভীনকে বিয়ে করেন। তাদের ১০ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।
পারভীনের পরিবারের অভিযোগ, স্বামী প্রবাসের থাকায় প্রায় সময়ই শ্বশুরবাড়ির লোকজন পারভীন ও তাঁর সন্তানের ওপর কারণে-অকারণে নির্যাতন করত। বছরখানেক আগে দেবর আলী হোসেন পারভীনের মেয়ের পায়ে দা দিয়ে কোপ দেন। এ ঘটনায় পারভীনের বাবা দানা মিয়া থানায় একটি মামলা করেন। এরপর থেকে পারভীনের শ্বশুরবাড়ির লোকজন মামলা তুলে নিতে চাপ দিয়ে আসছিল। এতে রাজি না হওয়ায় নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। পরে তিনি স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়ি সোবানপুরে গিয়ে উঠতে বাধ্য হন।
এরই মধ্যে গতকাল শনিবার টিকা দেওয়ার নাম করে পারভীনকে বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে ডেকে আনা হয় বলেও অভিযোগ করেন পরিবারের লোকজন। তারা আরও বলেন, বিকেলে টিকা দেওয়ার কথা বলে দেবর আলী হোসেন, ননদের ছেলে শাহরিয়ার, ননদ তাসলিমা বেগম ও জা রহিমা বেগম পারভীনকে নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হন।
দগ্ধ পারভীন অভিযোগ করেন, অটোরিকশায় উঠার কিছুক্ষণ পর তাঁর চোখ-মুখ বেঁধে ফেলা হয়। নির্জন স্থানে নিয়ে আলী হোসেন তাঁকে ধর্ষণ করেন। এরপর আবার তাঁকে অটোরিকশায় উঠিয়ে এদিক-সেদিক ঘুরতে থাকে। পরে রায়পুরা-বারৈচা সড়কের পাশে লোচনপুর এলাকার একটি বাঁশঝাড়ের পাশে নিয়ে যায়। সেখানে আলী হোসেন তাঁর শরীরে তরল জাতীয় কিছু ঢেলে দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।
এ সময় পারভীনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাঁকে উদ্ধার করে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাত ৩টার দিকে তাঁকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. এ কে এম রেজাউল ইসলাম খান জানান, পারভীনের গলা থেকে পা পর্যন্ত প্রায় ৮০ ভাগ পুড়ে গেছে। এ অবস্থায় তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।