বিষাদ উড়িয়ে রিশাদ!
অফ স্পিনারের স্বর্গরাজ্য বাংলাদেশ ক্রিকেটে বহুদিন ধরে হাহাকার ছিল লেগ-স্পিনারের। মাঝে একজন এসেছিলেন, যদিও অল্প সময়ের মধ্যে হারিয়ে যান কালের গর্ভে। ফের হাহাকার। এবার এলেন রিশাদ হোসেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকে খুব ভালো করতে না পারলেও বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সিরিজে যে ঝড়ো সুর তিনি তুলেছেন, তাতে মন্ত্রমুগ্ধ সবাই।
রিশাদের বয়স সবে ২১। বাংলাদেশ দল ধীরে ধীরে তারুণ্যনির্ভর হচ্ছে। বইছে পরিবর্তনের হাওয়া। এমন এক সময়ে দলে নিয়মিত হলেন তিনি।
ছয়জন ব্যাটার নিয়ে বাংলাদেশ সবসময় খেলতে নামে। লোয়ার অর্ডারে প্রয়োজন এমন একজনকে, যিনি ব্যাট হাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবেন। যেমনটা অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইংল্যান্ডের একাদশে দেখা যায়। আমাদের সেখানে কমতি ছিল। রিশাদের আগমনে সেই কমতি কেটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাকে মনে করা হচ্ছে—সম্প্রতি বাংলার ক্রিকেটের অন্যতম সেরা আবিষ্কার।
রিশাদ টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডেতেও লঙ্কান বোলারদের ওপর যেভাবে ঝড় তুললেন, দেখালেন ব্যাটিং নৈপুণ্য; তাতে হতবাক তারা। যদিও দলে তার মূল ভূমিকা লেগ স্পিনার। কিন্তু ধুন্ধুমার ব্যাটিং প্রদর্শনীতে প্রায় সব বলের ঠিকানা গড়েছেন বাউন্ডারিতে। সর্বশেষ ম্যাচে গতকাল সোমবার (১৮ মার্চ) ১৮ বলে ৪৮ রানের ৪৬ রানই এসেছে বাউন্ডারি থেকে। অপরাজিত থেকে এই রান সংগ্রহ করেছেন পাঁচ ছক্কা ও চারটি চারের মাধ্যমে। এর আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও খেলেছিলেন ৩০ বলে ৫৩ রানের দুরন্ত এক ইনিংস। ইদানিং লাল-সবুজের জার্সিতে এমন হার্ডহিটিং খুব একটা দেখা যায়নি।
রিশাদ এবারের বিপিএলে খেলেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে। বল হাতে নজর কেড়েছেন সবার। তিন ইনিংস বোলিং করে নিয়েছেন ছয় উইকেট। উইকেট নেওয়ার চেয়ে রান আটকানোতে তার দক্ষতা বেশি। তাকে নিয়ে চর্চা হচ্ছে সর্বত্র। প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন কোচ, অধিনায়ক থেকে শুরু করে দলের সবাই।
যত্ন করলে দেশের সম্পদে পরিণত হবে রিশাদ, এমনটাই মত দেশের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজের। তার ভাষ্যমতে, ‘বাংলাদেশ দল অনেকদিন ধরে একজন লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার খুঁজছিল। রিশাদের ভেতরে সেই প্রতিভা আছে। তার ক্যারিয়ার সবে শুরু হয়েছে। অনেক কিছু দেওয়ার আছে দলকে। যত বেশি ম্যাচ খেলবে, তত বেশি শিখবে। দিন দিন সে উন্নতি করছে। ওকে যদি ঠিকভাবে যত্ন করা হয়, সে একদিন দেশের সম্পদ হবে।’
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত রিশাদকে দেখছেন বাড়তি পাওনা হিসেবে। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি অনুযায়ী রিশাদ খুব ভালো বোলিং করে। ওর বলে সুইং আছে, অ্যাকশনও ভিন্ন। আর যেভাবে ব্যাটিং করে সেটি আমাদের জন্য বাড়তি পাওয়া। দরকার আছে এটি। কারণ, আমরা এখন ছয়জন ব্যাটার নিয়ে খেলি। একজন বাড়তি অলরাউন্ডার যদি গড়ে ওঠে, তাহলে তা দলের জন্য ইতিবাচক।’
বয়সভিত্তিক দল, ‘এ’ দলে খেলার অভিজ্ঞতালব্ধ রিশাদের মধ্যে আগামীর তারকা হওয়ার যে গুণ আছে, তা এখন অনস্বীকার্য। দরকার শুধু চর্চা আর পরিশ্রম। এতেই তিনি হয়ে উঠতে পারেন গেমচেঞ্জার।
সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। চলতি বছর ব্যস্ত শিডিউল বাংলাদেশের। এমন এক বছরে রিশাদ হতে পারেন অধিনায়কের ট্রাম্প কার্ড।