দুর্দান্ত জয়ে সুপার এইটের আশা বাঁচাল বাংলাদেশ
বিশ্বকাপে নিজেদের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে নেদারল্যান্ডসকে হারাতেই হতো বাংলাদেশকে। একই সমীকরণের সামনে ছিল ডাচরাও। এমন ম্যাচে সুযোগ হাতছাড়া করেনি বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং নৈপুন্যের পর বোলারদের দাপটে ডাচদের বিপক্ষে দারুণ জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। ২৫ রানের জয়ে বিশ্বকাপের সুপার এইটে যাওয়ার পথে এগিয়ে রইল নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
এই নিয়ে দুই জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুইয়ে বাংলাদেশ। এই গ্রুপ থেকে এরই মধ্যে পরের ধাপ নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার দ্বিতীয় দল হিসেবে বাংলাদেশও তাদের অবস্থান জানান দিল।
সেইন্ট ভিসেন্টে লক্ষ্যটা ১৬০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বেশ সতর্ক শুরু করে নেদারল্যান্ডস। প্রথম চার ওভারে ডাচদের ওপেনিং জুটি ভাঙতে পারেনি বাংলাদেশ। পঞ্চম ওভারে এসে অবশেষে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন তাসকিন আহমেদ। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারি উড়িয়ে মারতে গিয়ে পয়েন্টে তাওহিদ হৃদয়ের হাতে সহজ ক্যাচ দেন ডাচ ওপেনার মাইকেল লেভিট। ১৮ রানে ভাঙে তার প্রতিরোধ, ২২ রানে প্রথম উইকেট হারায় নেদারল্যান্ডস।
পরের ওভারে ডাচদের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন তানজিম সাকিব। ম্যাক্স ও’ডাউডকে কট এন্ড বোল্ড করে ১২ রানে নিজের শিকার বানান তানজিম। পাওয়ার প্লেতে এই দুটি উইকেট হারিয়ে নেদারল্যান্ডস তোলে ৩৬ রান।
এরপর অবশ্য প্রতিরোধ গড়ে তোলেন সাইব্রান্ড এঙ্গেলব্রেশট ও ভিক্রাম সিং। দশম ওভারে এসে এই জুটি ভাঙেন মাহমুদউল্লাহ। অভিজ্ঞ এই স্পিনারের বল বাইরে এসে খেলতে গিয়ে কিপার লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দেন ভিক্রাম। ১৬ বলে তিন ছক্কায় ২৬ রান করে ফিরে যান ডাচ ব্যাটার।
চতুর্থ উইকেটে আবারও ভয় জাগায় নেদারল্যান্ডস। এবার স্কট এডওয়ার্ডস ও এঙ্গেলব্রেশটের ৪২ রানে জুটিতে বাংলাদেশকে হুঙ্কার জানায় নেদারল্যান্ডস। ১৫তম ওভারে রিশাদ এসে থামান এই জুটিকে। তিনি ফিরিয়ে দেন এঙ্গেলব্রেশটকে। ২২ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলা এই ব্যাটারকে ফিরিয়েই মূলত খেলায় ফেরে বাংলাদেশ।
পরের প্রেক্ষাপট পুরোই বাংলাদেশের। মুস্তাফিজ-রিশাদ মিলে ধরিসে দেন ডাচদের লোয়ার অর্ডার। একের পর এক উইকেট হারানোর মাঝে জয়ের দুয়ারে আর যেতে পারেনি নেদারল্যান্ডস। শেষ পর্যন্ত ১৩৪ রানে থামে তাদের ইনিংস।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে ৩৩ রান দিয়ে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন রিশাদ হোসেন। ৩০ রান খরচায় তাসকিন আহমেদের শিকার দুটি। একটি করে নেন মাহমুদউল্লাহ, তানজিম ও মুস্তাফিজ।
এর আগে আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান তোলে বাংলাদেশ।
কিংসটাউনের আর্নোস ভেল স্টেডিয়ামে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠান ডাচ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস। বিশ্বকাপের যুক্তরাষ্ট্র পর্বে রান তুলতে ব্যাটাররা খাবি খেলেও, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পিচ ব্যাটিং সহায়ক। তাতে অবশ্য বদলায় বাংলাদেশের টপ অর্ডারের চিত্র।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশকে বিপদে ফেলে তিন বলে মাত্র এক রান করে ফিরে যান তিনি। আরিয়ান দত্তের ডেলিভারিতে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে স্লিপে শান্ত ধরা পড়েন বিক্রমজিৎ সিংয়ের হাতে। বাংলাদেশের রান তখন সবে তিন! ওয়ানডাউনে নামা লিটন দাস এদিনও ব্যর্থ ব্যাট হাতে। দুই বলে এক রান করে তিনিও দত্তের শিকার হন। অনেকটা পথ দৌড়ে এসে চমৎকার এক ক্যাচ নেন সাইব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখট।
২৩ রানে দুই উইকেট তুলে বাংলাদেশকে চাপে ফেলে নেদারল্যান্ডস। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন সাকিব আল হাসান ও তানজিদ তামিম জুটি। দুজন মিলে যোগ করেন ৪৮ রান। দলীয় ৭১ রানে বিদায় নেন তামিম। তাকে ফেরান ফন মিকেরেন। ২৬ বলে পাঁচটি চার ও একটি ছয়ে ৩৫ করেন তামিম। তাওহিদ হৃদয় ব্যর্থ হলেন তৃতীয় ম্যাচে এসে। ১৫ বলে কোনো বাউন্ডারি ছাড়া ৯ রান করে বিদায় নেন। তাকে বোল্ড করেন টিম প্রিঙ্গল।
এর পরের পথটুকু সাকিবের সঙ্গে এগিয়ে নেন মাহমুদউল্লাহ। তবে, বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। দুটি করে চার ও ছক্কার মারে ২১ বলে ২৫ করে শিকার হন মিকেরেনের। বাউন্ডারি লাইনে দারুণ এক ক্যাচ নেন সাইব্র্যান্ড। মাহমুদউল্লাহ ফিরে গেলেও ঢাল হয়ে ছিলেন সাকিব। তিনি কেন সেরা সেটি প্রমাণ করলেন আরেকবার।
৩৮ বলে তুলে নেন অর্ধশতক। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে ১৩তম এবং বিশ্বকাপে এটি তার চতুর্থ অর্ধশতক। শেষ পর্যন্ত সাকিব অপরাজিত থাকেন ৪৬ বলে ৬৪ রানে। নিজের ইনিংসটি সাজান ৯টি চারের মারে।
ডাচদের পক্ষে চার ওভারে ১৭ রানে দত্ত দুই উইকেট পান। চার ওভারে ১৫ রান দিয়ে মিকেরেনও নেন দুই উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫৯/৫ (তানজিদ ৩৫, শান্ত ১, লিটন ১, সাকিব ৬৪*, হৃদয় ৯, মাহমুদউল্লাহ ২৫, জাকের ১৪*; কিংমা ২-০-২০-০, আরিয়ান ৪-০-১৭-২, মেকেরেন ৪-০-১৫-২, ফন বিক ৪-০-৪৩-০, ডে লেডে ৩-০-৩১-০, প্রিঙ্গল ৩-০-২৬-১)।
নেদারল্যান্ডস: ২০ ওভারে ১৩৪/৮ (লেভিট ১৮, ও'ডাওড ১২, ভিক্রাম ২৬, এঙ্গেলব্রেশট৩৩, এডওয়ার্ডস ২৫, ডে লেডে ০, ফন বিক ২, প্রিঙ্গল ১, আরিয়ান ১৫*; মুস্তাফিজ ৪-০-১২-১, তানজিম ৩-০-২৩-১, তাসকিন ৪-০-৩০-২, সাকিব ৪-০-২৯-০, রিশাদ ৪-০-৩৩-৩, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৬-১)।
ফল: বাংলাদেশ ২৫ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: সাকিব আল হাসান।