গ্রন্থালোচনা
গৌতম বুদ্ধের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
[এই নিবন্ধটি১ লেখা হইয়াছে আবুল খায়ের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান অনূদিত ‘বুদ্ধের হৃদয়’ নামক একটি উপদেশগ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে। বলিয়া রাখা ভাল, এই দীন রচনাটি ঐ গ্রন্থের পরিশিষ্ট অংশে ছাপা হইবার গৌরব লাভ করিয়াছে।]
আমার বন্ধু আবুল খায়ের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান ‘বুদ্ধের হৃদয়’ নাম দিয়া কতকগুলি সহৃদয় হৃদয়নিঃসৃত বুদ্ধবচন এক জায়গায় করিয়াছেন। তাঁহার দাবি যদি অসত্য না হয়, তবে এইগুলি ইংরেজি হইতে তর্জমা করিয়াছেন তিনি। ইহাদের কতটা ইতিহাস সমর্থিত আর কতটাই বা হৃদয় হইতে নিঃসৃত তাহা বিচার করিবার মতন বিদ্যা কিংবা অনুসন্ধান করিবার মতন অবসর আমার হয় নাই। এই সুসমাচার তিনি ভালবাসিয়া তর্জমা করিয়াছেন। ইহাই আসল।
এই সংগ্রহের প্রথম প্রকাশোপলক্ষে তিনি আমাকে একপ্রস্ত রিবিয়ু বা ‘পুনর্দৃষ্টি’ লিখিতে বাধ্য করিয়াছেন। না করিলে আমি হয়ত এই লেখায় হাত দিতে পারিতাম না। গৌতম বুদ্ধের মতন বড় মানুষের কথা লিখিতে হইলে বড় সাধনার প্রয়োজন আছে। দুর্ভাগ্যক্রমে আমার সেই সাধনার দুঃসাহস হয় নাই। তবে আতিকুজ্জামান যে সত্যসাহস দেখাইয়াছেন তাহাতে আমার সায় আছে—এ কথা অস্বীকার করিব না। কেননা ‘বুদ্ধের হৃদয়’ নামক সুসমাচার হইতে ধরিলাম ভগবান বুদ্ধ বলিয়াছেন :
অজ্ঞতা হইতে আসে অহমিকা
অহমিকা হইতে স্বার্থপরতা
স্বার্থপরতা হইতে বিরক্তি
বিরক্তি হইতে রাগ
রাগ হইতে ঘৃণা
ঘৃণা হইতে ধ্বংস।
১
গৌতম বুদ্ধ যে মগধদেশে জন্মিয়াছিলেন সে দেশের সহিত বর্তমান বাংলাদেশের একটা আত্মীয়তা আছে। মহান পণ্ডিত দীনেশচন্দ্র সেন একদা দাবি করিয়াছিলেন, ‘এক সময়ে মগধই সমস্ত পূর্ব্ব-ভারতের একমাত্র লক্ষ্য ছিল। বঙ্গদেশের শিক্ষাদীক্ষার মূল প্রস্রবণ—এই গঙ্গার আদি-উৎস হরিদ্বার-স্বরূপ—মগধ-কেন্দ্রস্থলে বিরাজিত ছিল; মগধের উচ্চশিক্ষা, মগধের শিল্পকলা সমস্তই উত্তরকালে পূর্ব্বদিক্ আশ্রয় করিয়া গৌড়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছিল, মগধকে বাদ দিয়া বাঙ্গলার ইতিহাস রচনা করা চলে না। রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁহার বাঙ্গলার ইতিহাসে মগধকে বাদ দেন নাই।’ (সেন ২০০৬ : ১৯)
মাত্র এইটুকু লিখিয়া দীনেশবাবু তৃপ্ত হইতে পারেন নাই। পাদটীকা আকারে তিনি আরো দুই কথার যোগাড়যন্ত্র করিয়াছিলেন : ‘দ্বিজেন্দ্রলাল [রায়] তাঁহার সুপ্রসিদ্ধ “বঙ্গ আমার, জননী আমার, ধাত্রী আমার, আমার দেশ” গানটিতে বুদ্ধ, অশোক, বিজয় প্রভৃতি সকলকে বঙ্গবাসী বলিয়া উল্লেখ করিয়াছিলেন। সে সময় বিহার জেলাটা বঙ্গের একাংশ ছিল। কবি কালিদাস রায় লিখিয়াছেন, “এই গানে ডি. এল্. রায় ‘বঙ্গ আমার’ লিখিয়াছিলেন,—দিলীপবাবু পুনর্মুদ্রণ-কালে ‘বঙ্গ’ উঠাইয়া দিয়া ‘ভারত’ করিয়াছেন।”’ (সেন ২০০৬ : ১৯)
দীনেশচন্দ্র সেনের দাবি অনুসারে, ভগবান বুদ্ধ ছিলেন শেষ বিচারে সহি বড় বঙ্গদেশের খাস লোক। কেহ কেহ মন্তব্য করিয়া থাকেন মহাত্মা গৌতম বুদ্ধের মাতৃভূমি ‘মগধ’ বলিয়াই তাঁহার অনুগামীগণ পরকালে ‘মগ’ বলিয়া গণিত হইয়াছেন।২ এই মন্তব্যের সমর্থনে তাঁহারা নজির দেখাইতেছেন, পয়গম্বর হজরত ইসা আলায়হেসসালাম ফিলিস্তিন দেশের নাসারত নামক গ্রামে জন্মিয়াছিলেন, তাই তাঁহার অনুসারীগণ ‘নাসারা’ বলিয়া কথিত।
দীনেশবাবু মনে করেন খ্রিস্টপূর্ব এবং খ্রিস্টোত্তর কিছু কালের মগধ বৃহৎ বঙ্গের অঙ্গীকৃত ছিল। কথাটি এইদিকে উপেক্ষা করার জিনিশ নয়। অন্যদিকে মহারাষ্ট্রদেশীয় খ্যাতনামা পণ্ডিত ধর্মানন্দ কোসম্বী লিখিতেছেন, ‘মগধের রাজধানী রাজগৃহ। এই স্থান বর্তমান বিহারের তেলয়্যা নামক স্টেশন হইতে ষোলো মাইলের ভিতর অবস্থিত। চারিদিকে পাহাড়, আর তাহারই মধ্যভাগে এই শহর গড়িয়া উঠিয়াছিল। শহরে যাইবার জন্য, পাহাড়ের ভিতর দিয়া, শুধু দুইটি রাস্তা থাকায় শত্রুর আক্রমণ হইতে সহজে নগরের সংরক্ষণ করা যাইবে মনে করায়, এখানে এই শহরটি নির্মিত হইয়া থাকিবে। কিন্তু অজাতশত্রুর ক্ষমতা এত বাড়িয়া গিয়াছিল যে, নিজের সংরক্ষণের জন্য এই গিরিগোশালায় (গিরিব্রজে) থাকা তাঁহার আবশ্যক মনে হয় নাই। বুদ্ধের পরিনির্বাণের পূর্বেই এই রাজা পাটলিপুত্রে এক নূতন শহর নির্মাণ করিতেছিলেন, আর হয়তো পরে সেখানেই তিনি নিজের রাজধানী উঠাইয়া লইয়াছিলেন।’৩ (কোসম্বী ২০০১ : ১৩)
এই দুই পণ্ডিতের কথা এক জায়গায় আনিলে মনে হয় ভগবান গৌতম বুদ্ধ বড় বাংলাদেশেই জন্মিয়াছিলেন। বাংলাদেশ মানে আজিকার ছাপ্পান্ন হাজার (ও যোগবিয়োগ কয়েক) বর্গমাইল মাত্র নহে। ভূতের আলোকে বর্তমান দেখিলে এই সত্যে সন্দেহ থাকিবে না।
দুঃখের মধ্যে, বুদ্ধ কোন ভাষায় কথা বলিতেন তাহা আমরা আজও বিশদ জানিতে পারি নাই। তিনি যে ভাষায় বাক্য রচনা করিতেন—নাম যাহাই হৌক না—তাহার সহিত আজ আমরা যে ভাষায় এই ভূমিকা রচনা করিতেছি তাহারও আত্মীয়-সম্পর্ক রহিয়াছে। সে ভাষাকে আমরা পুরানা বাংলারও পুরানা বাংলা বলিতে পারি। আবুল খায়ের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান গৌতম বুদ্ধের বাক্য ইংরেজির শরণ হইতে একালের নবীন বাংলায় আমদানি করিয়াছেন। ইহা বীরের কাজ বৈকি। তাঁহাকে অভিবাদন।
আতিকুজ্জামান গৌতম বুদ্ধের দেশনা যেখান সেখান হইতে কুড়াইয়া আনেন নাই। আড়াই হাজার বছরেরও বেশি কাল ঘুরিয়া চিনদেশের এক জায়গা হইতে তিনি এইগুলি লইয়াছেন। এইসব বচন একান্তই দেহবাদী। দেহ মানে দেশ—এইটুকু মনে রাখিলেই চলিবে। দেশের জোড় যদি কাল হইয়া থাকে, তো এই বচনগুলিকে কালবাদীও বলা চলিবে। আমার মনে হয় দেশে আর কালে কোথায় যেন একটা অবিয়োগ আছে। গৌতম বুদ্ধের নামে আতিকুজ্জামান এই উপদেশ চালাইয়াছেন :
অতীতে ডুবিয়া থাকিও না
ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনিও না
বর্তমান মুহূর্তে মন দাও।
তাহার পরও আমি দুইটা অতীতের কথা বলিতে চাহিব। কেহ কেহ বলেন বুদ্ধের উপদিষ্ট অহিংসা ধর্মের দ্বারা ভারতবর্ষের জনসমাজ ভীতু ও দুর্বল হইয়াছে এবং তজ্জন্যই বিদেশি লোকেরা ভারতবর্ষ জয় করিতে পারিয়াছে। এই নালিশের জবাবে ধর্মানন্দ কোসম্বী কহিতেছেন, বুদ্ধের চরিত্রের সহিত উক্ত মতের কিছুমাত্র সম্বন্ধ নাই। তাঁহার পেশ করা নানা প্রমাণের মধ্যে একটি প্রমাণ এইরকম : ‘জাপান হাজার-বারোশত বৎসর যাবৎ আজ পর্যন্ত বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। ১৮৫৩ সালে তাহাদের দিকে কমোডোর পেরী যখন কামান রাখিয়া তাহা দাগাইবার জন্য প্রস্তুত হইল, তখন তাহারা সজাগ হইয়া কেমন করিয়া একতাবদ্ধ হইল? বৌদ্ধধর্ম তাহাদিগকে দুর্বল ও ভীরু বানাইতে পারিল না কেন?’ (কোসম্বী ২০০১ : ঝ)
২
সম্প্রতি কেহ কেহ বলিতেছেন, ২০১২ সালের মাঝামাঝি মিয়ানমার বা ব্রহ্মদেশে যাঁহারা সংখ্যায় দুইশতের মত রোহিঙ্গা বা আরাকানি মুসলমান হত্যা করিয়াছিলেন আর লাখখানেক মানুষকে দেশছাড়া করিয়াছিলেন তাঁহারা নাকি গৌতম বুদ্ধের অনুসারী। ভগবান বুদ্ধের নাম ভাঙ্গাইয়াই নাকি তাঁহারা এই কাণ্ড করিয়াছিলেন। (হগ ২০১৩ : ১০; কোকলানিস ২০১৩ : ২৮-২৯)
লোকের এহেন দাবি নিতান্তই হাস্যকর। ইহাতে মহান বুদ্ধের অবমাননা বৈ কিছু হয় না। একই যুক্তিতে কেহ কেহ বলেন, আজ হইতে নয়-দশ বছর আগে শ্রীলঙ্কার ২৬ বছর দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ শেষ হইবার পরপরই সেই দেশের মুসলমানদের দোকানপাট যাঁহারা পোড়াইয়াছিলেন আর মুসলমানদের লঙ্কাছাড়া করিবার দাবি তুলিয়াছিলেন তাঁহারাও নাকি বৌদ্ধ। অথচ গৃহযুদ্ধের সময় তামিলভাষী হিন্দুদের অভিযোগ ছিল, শ্রীলঙ্কার সংখ্যালঘু মুসলমানেরা বৌদ্ধদের সহযোগিতা করিতেছেন। আর সেই অপরাধেই ‘তামিল এলমের স্বাধীন বাঘের দল’ (এলটিটিই) তাঁহাদেরই প্রতিবেশী তামিলভাষী মুসলমানদের হাজার হাজার সংখ্যায় জাফনা-ছাঁটা করিয়াছিলেন। (হগ ২০১৩ : ১০)
২০১২ সালের পর ব্রহ্মদেশের বিখ্যাত নবীন ধর্মপ্রচারক অশিন বিরাতু সম্পর্কে কিছু কথা শোনা যাইতেছে। তাঁহার দল প্রবর্তিত ‘৯৬৯ আন্দোলন’ নাকি আহ্বান জানাইয়াছে, ব্রহ্মদেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা যেন কদাচ মুসলমান মালিকানাধীন দোকানপাটে সওদাপাতি কেনাকাটা না করেন। অধিক কি এক ধর্মাবলম্বী যেন আর ধর্মাবলম্বীর সহিত বিবাহবন্ধনেও আটকা না পড়েন। (হগ ২০১৩ : ১০)
অশিন বিরাতু মহোদয় এইসব কথা একপাশে ঠেলিয়া দাবি করিয়াছেন, তাঁহার উদ্দেশ্য অসৎ নহে। তিনি মাত্র চাহিতেছেন, মহাত্মা গৌতম বুদ্ধের অনুসারীগণ যেন আরো বেশি বেশি মাত্রায় তথাগতের ধর্মে মনোনিবেশ করেন। তাঁহার মতে এসলামধর্মের জাগরণ বা প্রসার ঠেকাইতে হইলে ব্রহ্মদেশে বৌদ্ধগণের আপন ধর্মের শ্রীবৃদ্ধি করা ছাড়া উপায় নাই। (হগ ২০১৩ : ১০)
অথচ মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষ এই ভদ্রলোককেই মাত্র কিছুদিন আগে মুসলমানবিরোধী উস্কানির দায়ে আট বছর কারাগারে বন্দি রাখিয়াছিলেন। (কোকলানিস ২০১৩ : ২৮)
তাহা হইলে কোথাও একটা সমস্যা আছে বৈকি। স্বর্গের পথ শুনিয়াছি সদুদ্দেশ্যের পাথর দিয়া বাঁধান। একই যুক্তিতে আমরা বলিব, ২০১২ সালের ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর যাঁহারা (সম্ভবত একই ধরনের ‘সদুদ্দেশ্যে’) দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশে রামু, উখিয়া প্রভৃতি অঞ্চলের বৌদ্ধমন্দিরে হামলা চালাইয়াছিলেন তাঁহাদিগকে এসলাম ধর্মপথিক বলারও কোন অর্থ হয় না। তাঁহাদের জন্যও ‘বুদ্ধের হৃদয়’ খোলা রহিয়াছে। ইচ্ছা হয় তাঁহারাও বুদ্ধবচন স্মরণ করেন আর আপন হৃদয়ের কালিমা শৌচ করেন।
অপরের রূঢ় আচরণে কিংবা
তাহারা কি করিয়াছে বা
কি ফেলিয়া রাখিয়াছে
তাহাতে মন দিও না
খোদ তুমি কি করিয়াছ
আর কি কর নাই
তাহাতে মন দাও।
৩
আবুল খায়ের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান এমন এক পরিবারে জন্মিয়াছেন, যাহাকে নির্দ্বিধায় এসলামপথিক বলা চলে। তিনি কতটুকু স্বীকার করিবেন জানি না, এই দুনিয়ায় ধর্মের সহিত ধর্মের কোন বিরোধ নাই। বিরোধ যদি থাকে তো তাহা কেবল লোকের সহিত লোকের। এই বিরোধ স্বার্থের সহিত স্বার্থের—পরমার্থের সহিত পরমার্থের মোটেও নহে।
বিগত সতের-আঠার বৎসরে বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকায় অনেক তরুণ মনস্বীর সহিত আমার পরিচয় ঘটিয়াছে। তাঁহাদের পাঁচজনের মধ্যে একজন আবুল খায়ের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান। তাঁহার এই তর্জমাধর্ম—ধর্মানন্দ কোসম্বীর কথা উদ্ধার করিয়া বলিব—‘জনসমাজে প্রসিদ্ধ হইবার জন্য করা হয় নাই, শুদ্ধ সত্য অন্বেষণের উদ্দেশ্যেই ইহা কৃত হইয়াছে।’ লোকমুখে এই তর্জমার খ্যাতি কতদিনে জুটিবে বলিতে পারিব না, তবে আমি নিজের মুখে ইহার যে স্বাদবিন্দু পাইয়াছি তাহাতে সিন্ধু আছে, বিষাদ নাই। প্রার্থনা করি ইহার প্রবাহ বঙ্গোপসাগরের মতন জাতিধর্ম নির্বিশেষে মানবজাতির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করুক—জগতের সকল প্রাণী সুখী হৌক। আর সদা সত্য হৌক এই বাক্য :
শারীরিক বল দিয়া
ঘৃণা দিয়া কিংবা
যুদ্ধ দিয়া
আমাদের সমস্যা সমাধান হয় না।
আমাদের সমস্যা সমাধান হয়
মমতা দিয়া
বিনয় দিয়া
আনন্দ দিয়া।
এই যদি সত্য তবে কর্তব্য কি দাঁড়ায়? সত্যের অধীন আবুল খায়ের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামানের হৃদয়বুদ্ধও সেই কর্তব্যই উপদেশ করিতেছেন :
আপনকার দোষত্রুটি খুঁজিয়া লও
গভীর অনুশোচনায় পোড়
তারপর ভুলত্রুটি শোধরাইয়া লও।
বোধিনী
১. পুনর্দৃষ্টি : ‘বুদ্ধের হৃদয়,’ আবুল খায়ের মোহাম্মদ আতিকুজ্জামান কর্তৃক অনূদিত (ঢাকা : আগামী প্রকাশনী ও মধুপোক প্রকাশনা, ২০১৭)।
২. আমাদের ভাষায় ‘লক্ষণা’ বলিয়া একটা অলঙ্কার আছে। সেই অলঙ্কারের সম্মানে বলিতে হয়, বর্তমানে গৌতম বুদ্ধের সকল অনুসারী অধিক মগ গণ্য হয়েন না, কিছু কিছু মাত্র হইয়া থাকেন। তাঁহাদের হালফিল বাসভূমির নাম ব্রহ্মদেশের অন্তর্গত রাখাইন বা আরাকান রাজ্য, কিছু পরিমাণে বর্তমান বাংলাদেশের দুই চট্টগ্রাম এবং তিন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা। মনে রাখিতে হইবে, লক্ষণার নিয়মেই ‘মগের মুল্লুক’ কথাটা আসিয়াছে। ইহা এখন নিন্দার্থেই বেশি ব্যবহৃত হইয়া থাকে। ইংরেজি ‘মাগিং’ (mugging) কথাটাও একইভাবে ‘মগ’ শব্দ হইতে ব্যুৎপন্ন।
৩. কোসম্বীর মতানুসারে, ভগবান বুদ্ধ পরিনির্বাণ লাভ করিয়াছিলেন খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দে। (কোসম্বী ২০০১ : ঝ) অন্যদিকে দীনেশচন্দ্র সেনের হিশাব মোতাবেক, বুদ্ধদেব ‘অনন্তধামে প্রয়াণ করেন’ খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৩ সনে। (সেন ২০০৬ : ১১৫)
দোহাই
১. ধর্মানন্দ কোসম্বী, ভগবান বুদ্ধ, চন্দ্রোদয় ভট্টাচার্য অনূদিত, ৩য় মুদ্রণ (নতুন দিল্লি: সাহিত্য অকাদেমি, ২০০১)।
২. দীনেশচন্দ্র সেন, বৃহৎ বঙ্গ: সুপ্রাচীন কাল হইতে পলাশীর যুদ্ধ পর্য্যন্ত, ১ম খণ্ড, ৩য় মুদ্রণ (কলকাতা : দে’জ পাবলিশিং, ২০০৬)।
৩. Peter A. Coclanis, ‘Terror in Burma: Buddhists vs. Muslims,’ World Affairs 176.4 (November-December 2013) : 25-33.
৪. Charu Lata Hogg, ‘When Buddhists turn nasty,’ The World Today 69.4 (August-September 2013) : 10.