কাব্যিক গদ্যে ‘আতঙ্কের পৃথিবীতে একচক্কর’
‘আতঙ্কের পৃথিবীতে এক চক্কর’ মিলু শামসের এ বছর বইমেলায় প্রকাশিত চমৎকার একটি পাঠ-পুস্তক প্রকাশ করেছে রবীন আহসান, শ্রাবণ প্রকাশনী। বইটি হাতে পেয়ে যখন ফ্ল্যাপের লেখার ওপর চোখ বুলালাম এবং পড়ে ফেললাম মাত্র কয়েকটি শব্দ তখনই মন বলে উঠল পড়ো পড়ো অনেক পড়বার আছে। আমি পড়ছি, মুগ্ধ হচ্ছি এবং একটির পর একটি প্রতিবেদন নতুন করে ভাববার, বুঝবার ও অনুধাবন করার তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্ত হচ্ছি। আর ঘণ্টা তিন সাড়ে তিনের মধ্যে যখন বইটি পড়ে শেষ করতে পারলাম তখন একটা অনুভব তৃপ্তি হয়ে বলতে চাইল চমৎকার। ভালো বই, ভালো প্রকাশনা।
মিলু শামস সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। যা কিছু দেখা তা তিনি দেখেছেন যুক্তিতর্কের তুল্য-মূল্যের বিচারে। গ্রহণ করেছেন বর্জন করেছেন সবই তার প্রাসঙ্গিক পাঠ ও নিজ অভিজ্ঞতার আলোকে। একজন দক্ষ সাংবাদিকের মতো পরিপার্শ্বকে কেবল ভ্রমণের আনন্দে হাস্যরস-তামাশায় বা তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে অবলোকন করেননি, করেছেন নিজ দৃষ্টিভঙ্গির উজ্জ্বল দিকগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে। সেখানে সাদৃশ্য-বৈশাদৃশ্য হয়ে উঠেছে প্রাণবন্ত গ্রহণের মাত্রায় স্বাভাবিক কিন্তু অসাধারণ।
বইটিতে রয়েছে ৩১টি সংবাদ, তার বেশির অংশ ভ্রমণ থেকে এবং কয়েকটা মাত্র অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়কে নিয়ে প্রজ্ঞাপূর্ণ প্রতিবেদন। এই লেখাগুলো বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় প্রকাশিত। প্রত্যেকটি প্রতিবেদন আলাদা আলাদা শরীর ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাব্যিক গদ্য সুষমার ভাষাবন্ধনে উৎকর্ষতা পেয়েছে কেবল ভাষার অটুট সম্মোহণে নয় বরং তার নিজ দৃষ্টিভঙ্গির বিশ্লেষণাত্মক মৌলিকতার কারণে। যদিও দার্শনিক কান্ট বলেছিলেন, প্রত্যেকটি প্রকাশে সম্মোহন থাকতে হয়, নইলে শ্রোতা, পাঠক তা দ্বারা আবেগজাত উপলব্ধিতে পৌঁছে গ্রহণের মাত্রাকে সক্রিয় করতে পারে না, এখানে মিলুর প্রতিবেদনগুলো কেবল সে কারণে একজন পাঠককে মুগ্ধ করবে না বরং তাকে আরো বেশি ঘনিষ্ঠ করবে পাঠে, কারণ এর ভেতর একটা বিশ্লেষণী দৃকভঙ্গি আছে এবং তা বিজ্ঞানপ্রযুক্ত। ‘মার্কেস এবং তাঁর লাতিন আমেরিকা’ লেখাটি বেশি বড় নয়, কোনো লেখাই হয়তো ১২০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫০০ শব্দের বেশিতে নেই, দু-একটা থাকলেও দোষ নেই কারণ এমন লেখা একটু বেশি হলেও পাঠক আনন্দেই থাকবে পাঠে, একঘেঁয়েমির ঘূণ সবেগে উত্থিত হবে না বলেই আমার বিশ্বাস। আর তাতে রয়েছে স্বল্পপরিসরে লাতিনের সাহিত্যের গৌরব, বিকাশ ও বিস্তৃতি। তিনি সের্ভান্তেসের ‘দন কিহোতে’-এর যাত্রা দিয়ে মার্কেজের সারা জাগানো উপন্যাস ‘এক শ’, বছরের নিঃসঙ্গতার উল্লেখ করে সুদীর্ঘ সময় ধরে এই মহাদেশটি ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ পীড়নে যে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে তারও দলিল উপস্থাপন করে প্রতিবেদনটিকে হৃদয়গ্রাহী, তথ্যপ্রাপ্তির সুযোগ বড় আকারের না হলেও প্রয়োজনীয় করে দিয়েছেন। আর সুদীর্ঘ সময়ের এই অত্যাচার এই নিপীড়ন মানুষকে নিয়তির মধ্যে বেঁধে ফেলেছিল, ফলে অশিক্ষা, কুসংস্কার, ভবিষ্যতহীনতা লাতিনের জনগণের সভ্যতার দরজায় পৌঁছে যাওয়ার পথগুলো হয়ে উঠেছিল কর্দমাক্ত।
তুকতাক, তন্ত্রমন্ত্র, ফ্যাটিসিজম ও মোল্লা পাদরীদের আধিপত্যের বিস্তারিত থাবায় ছিন্নভিন্ন রক্তাক্ত। এ থেকেই জাদু বিশ্বাসের উদ্ভব। এই নির্মমতা এমনই ভয়ঙ্কর যে মানুষ স্বভাবগতভাবে মানুষ আর ছিল না, ছিল দাস মনোবৃত্তির কতগুলো পুতুল আর বিশ্বাসে গড়ে উঠেছিল প্রতারক সংস্কার, যার মধ্য দিয়ে ঔপনিবেশিক শক্তি দেশটিকে কয়েক শ বছর পদানত করে লুটেছে তাদের সম্পদ আর জাতিগুলোকে ঠেলে দিয়েছে দারিদ্র্য, যুদ্ধ, নিপীড়নের মধ্যে। তারাই হয়েছে হয়েছে ওই মানুষগুলোর লিখিত ও নির্ধারিত ভাগ্য। কত মানুষ যে নিঃশেষ হয়ে গেছে, কত কবি লেখক যে মাটির তলায় চাপা পড়েছে, এবং বাহিরের লোক প্লান্টেড করে মূল জনস্রোতকে বিলুপ্ত করেছে তার খতিয়ান ইতিহাসে, মিলু খুব অল্প কথায় অল্প পরিসরে এসব বলতে পেরেছেন তার পাঠককে, মার্কেজের ১০০ বছরের নিঃসঙ্গতা ৩০০ বছরের ব্যবধান হলেও লাতিনের জেগে ওঠা, তার উত্থানের সাহিত্য-বিজয় কিন্তু সেখানেই প্রাণ ভোমরার মতো।
বলা যায় এটা কেবল সাহিত্যজগতই নয় বরং লাতিনের জাগরণে এই সাহিত্য একজন রাজনীতিবিদের চেয়েও দক্ষ অভিজ্ঞ ন্যায়-অনুসন্ধানীর মতো কাজ করেছে। তাই লাতিন বিশ্ব আজ সাম্রাজ্যবাদকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছে, দাঁড়াতে পেরেছে এবং অপশক্তির মোকাবিলা করার সাহস পেয়েছে। মিলুর এই লেখা থেকে সচেতন পাঠক যে মূল সূত্রটি পেয়ে যান তা কিন্তু মিলুর নিজস্ব শিক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতা ও বিশ্লেষণ যোগ্যতার কারণে।
সার্ত্রে, মোদিয়ানো ও অন্যান্য লেখায় মিলু ভারতের কৈলাশ সত্যার্থী ও পাকিস্তানি মালালা ইউসুফ জাই প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছেন, এ বিষয়ে একটা কথা তিনি চমৎকার উল্লেখ করেছেন যে ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে শিক্ষার জন্য ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শামিল হয়েছে একজন মুসলমান ও একজন হিন্দু। তারা যদি অভিন্ন লক্ষ্যের জন্য কাজ করে থাকেন তা হলে হিন্দু-মুসলিম উল্লেখের প্রয়োজন কি? খুবই যৌক্তিক অনুসন্ধান, কারণ এর পেছনেও গুপ্ত একটি উদ্দেশ্য আছে, যা থাকে পুঁজিবাদের পরিকল্পনায় অনেক দূরের ইশারার মতো। মিলুর দৃষ্টিভঙ্গির প্রখরতা এখানেই।
২.
একটা সময়ে পৃথিবীটা মানুষের কাছে আতঙ্কই ছিল। প্রাকৃতিক পরিবেশ, হিংস্র জন্তু-জানোয়ার আর দুর্গমতার কারণে। মানুষের কাছে একটা গোষ্ঠীর বিচরণ ভূমিই সমগ্র পৃথিবী বলে পরিগণিত হয়েছে। মানুষ একে একে পৃথিবীটাকে জয় করতে পেরেছে তার উদ্যম অদম্য স্পৃহা আর সীমাহীন দৃঢ় মনোবলের কারণে। মানুষ বদলাতে পেরেছে প্রকৃতির খেয়াল, আয়ত্তে আনতে পেরেছে বৈরী পরিবেশের, জন্তু-জানোয়ার অধীন হয়েছে মানুষের আর দুর্গম আর দুর্গম নেই, মানুষের পদচারণায় মুখর হয়েছে অজানা-অচেনা পৃথিবী। এখন প্রকৃতি কেবল প্রকৃতি নয়, মানবিক প্রকৃতি বলেছেন মার্কস। কেবল মানুষ জয় করতে পারেনি মানুষকে, একশ্রেণির পিশাচকে, তাদের লোভের থাবাকে তাদের হিংস্রতাকে এবং তাদের ভেতরের অমানুষকে। এ জন্য মানুষকে লড়াই করতে হয়েছে সেই কাল থেকে এই কালে এবং করতে হবে আগামী সব সূর্যোদয়ে একটি নতুন সূর্যের প্রার্থনায়। নানা তত্ত্ব, নানা চেষ্টা, নানা সংগ্রাম কেবল বেঁচে থাকবার- বেশি নয় সামান্যের তবু সেইটুকু মিলছে না। কত ধংস, কত হত্যা, কত বিনাশ, কত লুট, কত রক্ত সবই যেন অকারণ অহেতুক হয়ে গেছে, যায়। মিলু শামসের দেখার বিষয়টা ঘুরে ফিরে সেখানেই আলো ফেলে।
‘আতঙ্কের পৃথিবীতে একচক্কর’ নিগৃহীত মানবিক আত্মার ক্রনন্দনধ্বনি উচ্চকণ্ঠ। এত ভ্রমণ, এত কিছু দেখা, কিন্তু কোনো দেখা দিকহীন আবেগে ভেসে যায়নি। সে দৃঢ় থেকেছে এবং উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছে সত্যকে। অনুসন্ধান করেছে বাস্তবকে, সত্য কোথায়, কেমন আছে জীবনের সত্যগুলো কেমন হবে। একজন সংবাদকর্মী একজন লেখক একজন সংবেদনশীল মানুষ প্রতিবেদনগুলোতে ‘ভালগার’ প্রবণতায় বোধবুদ্ধিহীন চলমান সময়ের লেখকদের মতো, সংবাদ-গ্রাহকের মতো অর্থহীন করে তোলেননি।
লেখক ‘নিষিদ্ধতার যত কথা’য় ভলতেয়ারের পরিণতির কথা উল্লেখ করেছেন এবং এতবড় একজন দার্শনিক, লেখকের জীবন অবসানে তার কবর হয়েছে পতিতাদের সমাধিক্ষেত্রে উল্লেখ করে যখন বলেন ‘যে সমাজ ব্যবস্থা পতিতাবৃত্তিকে টিকিয়ে রাখে সেখানে তারাই নিকৃষ্টতম জীব’ এই ভাষ্য থেকে পুরো সময়ের সমাজচিত্রটি এবং মিলুর মনোজগতের পরিচ্ছন্নতার উপস্থিতি সচেতন পাঠক সহজেই চিনে নিতে পারবেন। ফ্ল্যাপের লেখায় রয়েছে কীভাবে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা মানুষকে মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং কীভাবে তাকে পণ্যের অধীন করে- মানুষকে পরজাগতিক নির্ভরতার দিকে ঠেলে দিয়ে লণ্ঠন করে এবং সংঘশক্তিহীন করে, আর মানুষ অপেক্ষা করে একদিন ত্রাণকর্তা আসবে তাকে মুক্ত করবে, তার মুক্তি হবে, কিন্তু তা আর হয় না। এ হলো এক ভয়ঙ্কর প্রতারণা কৌশল মিলু শামস তাঁর প্রত্যেকটি লেখায় এই সত্যকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার যুক্তিতর্ক-ইতিহাসের উপাত্ত এবং নিজ চিন্তার পরিমাপককে যুক্ত করে তার দেখা, তার উপলব্ধিকে বারবার মিলিয়ে আমাদের বলার চেষ্টা করেছেন, বলেছেন এবং লৌহ বেষ্টনীতে আলো ফেলে ফেলে দেখাতে চেয়েছেন রাষ্ট্র ব্যবস্থাটির পরিবর্তন না হলে, মানুষের আর কোনো মুক্তি নেই। সেই ব্যবস্থাটা কেমন হবে, কেমন করে হবে, হয়েছিল বলে বলা হলেও তার কিছু সুফল পাওয়া গেলেও তাও যে চিন্তিত নিষ্ঠ এবং সময়ের পরীক্ষায় টিকে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না, তাতেও যে খুঁত ছিল, যার মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যবাদ তাদের দেশীয় দোসর, মানুষের চিরকালের অধিকারহরণশক্তি প্রবেশ করে বৈপরীত্য তৈরি করে দেয়। মানুষকে, মানুষের স্বাধীনতাকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে, তাকে তার শোষণের শাসনের পুতুল করে দাসত্ব চাপিয়ে দেয় এবং সে বুঝতেই পারে না সেও মানুষ, বেঁচে থাকায় তার রয়েছে সমান অধিকার এই সত্যগুলো নানা দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচিত হয়েছে।
কৃষক জানে লড়াই, ঐতিহ্যবাহী লড়াইয়ের জীবন তাদের, হেরে যায়, খুন হয় তবু ধারাবাহিক লড়াইটা তাদের উত্তরাধিকারিত্বে পাওয়া, কিন্তু তারা রাষ্ট্রকে চেনে না, এর শক্তিকে পরিমাপ করার রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় তারা প্রজ্ঞাবান হতে পারে শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে। কারণ শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ ও কৃষক পরিবার থেকেই উদ্ভূত সেই লড়াইটা যখন ব্যর্থ হয়ে গেছে সোভিয়েতের পতন ঘটেছে তখন মিলু তার ভ্রমণে মিলিয়ে দেখতে চেষ্টা করেছেন ভুলগুলো কেমন, কোথায় ছিল।
বর্তমান সময়ে কেবল নয় সেই কাল থেকে মার্কসবাদ নিয়ে প্রচণ্ড বিরোধিতা বিজ্ঞ-প্রাজ্ঞ দার্শনিকরাও করেছেন, করেছেন পুঁজিবাদের উপাসকদের ভাড়ায় খেটে। আজও তা চলছে, গ্রামসি, আলথুসার, দেরিদা, লাকাঁ, ফুকো প্রমুখ কথিত আধুনিক দার্শনিকরা যারা প্রকারান্তে মার্কসবাদের বিরোধিতা নিয়ে হাজির ছিলেন কিছুদিন আগে, তারাও এক সময় মার্কসবাদীই ছিলেন এবং তারা কিন্তু নতুন সমাজ নির্মাণে কোনো দর্শন হাজির করতে পারেননি, বরং মানুষের অন্ধকার দিকগুলোকেই আরো উসকে দিয়ে ভোগে, উপভোগে পুঁজিবাদের সমর্থনই জুগিয়ে গেছেন। মানতে দ্বিধা নেই যে মার্কসবাদ অনড়, অচল ধর্মগ্রন্থবাণী নয়, পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে তার বিকাশে নতুন সংযোজন প্রয়োজন হতে পারে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেকালের পরিস্থিতির আলোকে তাঁদের ভাবনায় অনুসন্ধানে সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে, কিন্তু বিভ্রান্তি যে ছিল না তা ইতিহাস প্রমাণ করবে। কারণ এই সমাজ বিশ্লেষণ গতায়মান এবং তাঁর কালের ইতিহাসের উপাদান থেকে নেওয়া, আর আজকে সমাজ যতখানি বদলেছে তার ইঙ্গিত মার্কসবাদে আছে। সে প্রসঙ্গ আলোচনা দীর্ঘ।
নানা সময়ের ভ্রমণে লেখক পেষাগত বিলাস থেকে প্রতিবেদনগুলো তৈরি করেননি; করেছেন অন্তরবিশ্বাস ও ন্যায়ের পক্ষে একজন বোধসম্পন্ন সাংবাদিকের মতো। তাঁর এই বইয়ে রয়েছে ক্যাস্ট্রো এবং কমিউনিস্ট আন্দোলন, রয়েছে দেয়ালের শহর, দেয়ালের শহর পেরিয়ে, প্রতিধ্বনি শুনি আজও, মেশিনগানের গণতন্ত্র, শ্লীলতার সীমা, ‘মনে রাখতে হবে তাকে’ মিলু উল্লেখ করেছেন এমন কতকগুলো সত্য যা রাজনীতিবিদরাও এত চমৎকার করে এবং এতটা মোহমুক্ত অবলোকনে বলতে পারেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ জাগে।
‘পুঁজিবাদী তাত্ত্বিকরা ‘অ্যান্ড অব হিস্ট্রি’ জাতীয় তত্ত্ব দিয়ে নিজেরা শ্লাঘা বোধ করলেও মার্কসের তত্ত্বও তাদের আয়ত্তে। তারা জানেন বিকাশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেই নিজের বৃত্তে আটকাবে’... প্যারি কমিউনের শ্রমিকদের সামনে বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি ছিল না। রাজনৈতিকভাবেও তারা তেমন পরিশীলিত ছিলেন না, তাদের বড় দুর্বলতা ছিল নিজেদের রাজনৈতিক পার্টি না থাকা... এর সব আত্মস্থ করেছিল বলশেভিকরা, ৭২ দিন নয় বাহাত্তর বছর এই রাষ্ট্রটিকে ছিল টিকেছিল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সব অপচেষ্টা, দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে। বহু বিষয়ে তর্ক থাকতেই পারে, হোক না তর্ক, হোক কর্ম, মানবজাগরণে। মিলু দ্বিধাহীন বলছেন ‘কেউ কি নিশ্চিত করে বলতে পারে অক্টোবর বিপ্লবোত্তর রাষ্ট্র ব্যবস্থা থেকে অন্য কেউ শিক্ষা নিচ্ছেন না?’ এটাই হলো আশাবাদ। কারণ মানুষের জীবনে সংগ্রামই সত্য, উত্তরণও তার ঘটবে, ঘটবেই, এটাই হলো হতাশার বিরুদ্ধে মানুষের সাহস।
মিলুর এই বইয়ে কত বিষয়ে যে আলোকপাত ঘটেছে তা এই আলোচনার সীমিত ক্যানভাসে বিস্তৃত করা সম্ভব নয়, চলমান পাঠেও নয়, দরকার হবে আরো একটু আন্তরিক পাঠ, সে বিষয়ে আগামী কোনো একদিন যদি উদ্যোগী হতে পারি। তবে সত্য এই, বইটির লেখাগুলো যে পাঠককে সমৃদ্ধ করবে, কাজে লাগবে ভাবনায়, তাতে আমার কোনো শঙ্কা নেই।