বইয়ের কথা
‘নিতু বলছি’ বইটির কথক পঞ্চদশী কন্যা
‘নিতু বলছি’ উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে অনন্যা। লেখক তৌহিদুর রহমান। প্রচ্ছদ করেছেন নিয়াজ চৌধুরী তুলি। বর্তমান সময়ের উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের আবেগময় প্রেম ভালোবাসা, প্রতারণা, রিভেঞ্জ ও অসমপ্রেম সম্পর্কিত এই উপন্যাস।
লেখক এই বইটিতে নিতু নামক এক কিশোরী মেয়ের অতিশয় আবেগের মধ্য দিয়ে বর্তমানের সব কিশোর-কিশোরীর ভুল সিদ্ধান্তগ্রহণ, তার প্রভাব ও ভয়ানক ফলাফল সম্পর্কে অতি নিঁখুতভাবে তুলে ধরেছেন। তৌহিদুর রহমান সবসময়ই তার লেখার মাঝে আধুনিকতার স্পর্শ রাখেন।
‘নিতু বলছি’ বইটির কথক পঞ্চদশী কন্যা নিতু। তাই নিতুর ভাষায় অর্থাৎ পঞ্চদশী মেয়ের ভাষা আদৌ যেমনটা হয় লেখক এখানে নিঁখুতভাবে এই দিকটি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন তা বইটির প্রতিটি পৃষ্ঠাই প্রমাণ বহন করছে। অনেক পাঠক হয়তো বিব্রত হতেই পারে যে লেখক এমন কথাও লিখতে পারলেন? কিন্তু পাঠককে অবশ্যই এ ক্ষেত্রে ভাবতে হবে উপন্যাসটির কথক পঞ্চদশী মেয়ে নিতু নিজে, লেখক নন। তাই আমি মনে করি লেখক এই মেয়ের কথায় উপন্যাস লিখতে গিয়ে বর্তমান সময়ের তরুণ-তরুণীদের মানসিকতা, কথোপকথন ও আচরণবিধি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। যার কারণে অবশ্যই লেখক প্রশংসার দাবিদার। উঠতি বয়সে একজন মেয়ে যে পরিবারে আপন চাচা-মামা সম্পর্কের মানুষটির কাছেও নিরাপদ নয়,নির্যাতনের সম্মুখীন হয় প্রতিনিয়ত, সেই দিকটি তুলে ধরেছেন খুব চমৎকারভাবে। উপন্যাসে এক জায়গাতে পেয়েছি গভীর ঘৃণাকর দৃষ্টির কারণে রিভেঞ্জ নিতে যায় নিতু, যার শিকার হন নিরীহ প্রিন্সিপাল রেজা স্যার।
দেখা যায় মধ্যবিত্ত পরিবারের নানা প্রতিবন্ধকতা ও উচ্চবিত্তদের উদারতা। দেখা যায় স্টুডেন্টদের প্রতি ফিল্মমেকারের বা ফিল্ম প্রডিউসারের যৌন হয়রানি। আবার কোথাও বা দেখা যায় নিতু-রাফিয়ার মতো কিশোরী বয়সের নানারকম ভুল কিংবা অপরাধ।
উপন্যাসটির বর্ণনা দেওয়ার মতো ভাষা আমার নেই, কারণ আমি লেখকের প্রতিটি উপন্যাসের কিংবা বইয়ের মতোই এই উপন্যাসেও নতুন কিছু জ্ঞানার্জন করতে পেরেছি। এর ব্যাখ্যা হলো লেখক যে বিশাল জ্ঞানের অধিকারী তা তার বই পড়লেই বলার আর অপেক্ষা রাখে না। তার বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়েই তার জ্ঞানের জ্বলন্ত প্রমাণ। আর যারা তার লেখার পাঠক তাদের অবশ্যই জানা আছে তার জ্ঞানের মাত্রা। সবচেয়ে আকর্ষণ এই উপন্যাসে যেটা সেটা হলো অসম প্রেম। যা অনেকের কাছেই আপাত দৃষ্টিতে ব্যাপারটা অন্যরকম মনে হবে। কিন্তু কবিতায় আছে ‘সেই সত্য, যা রচিবে তুমি, ঘটে যা, তা সব সত্য নহে। কবি তবে মনোভূমি, রামের জন্মস্থান অযোধ্যার চেয়ে সত্য জেনো।’