বিশ্বসেরা ১০০ বই
নাগিব মাহফুজের ‘চিলড্রেন অব গেবেলোই’
মিসরীয় কথাসাহিত্যিক নাগিব মাহফুজের উপন্যাস ‘চিলড্রেন অব গেবেলোই’। ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত হয় মূল উপন্যাসটি। আরবিতে লেখা এই উপন্যাসের নাম ‘আওলাদ হারেতনা’ (Awlad Haretna)। দৈনিক আল-আহরাম পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় উপন্যাসটি।
নাগিব মাহফুজের আরো অনেক উপন্যাসই আল-আহরাম পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। তবে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জোর সমালোচনার মুখে পড়ে উপন্যাসটি। মিসরে বই আকারে বইটির বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়। বাধার মুখে মিসর থেকে বইটি প্রকাশ করা যায়নি। ১৯৬৭ সালে লেবানন থেকে প্রথম বই আকারে প্রকাশিত হয় উপন্যাসটি। ১৯৮১ সালে আরবি থেকে ইংরেজিতে উপন্যাসটি অনুবাদ করেন ফিলিপ স্টুয়ার্ট।
১৯৮৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান নাগিব মাহফুজ। ‘চিলড্রেন অব গেবেলোই’ উপন্যাসটি লেখার কারণে ১৯৮৯ সালে নাগিব মাহফুজের তীব্র নিন্দা করেন ধর্মীয় নেতা ওমর আবদেল-রহমান। ১৯৯৪ সালে মিসরের রাজধানী কায়রোতে নিজের বাড়ির সামনে দুজন মৌলবাদীর আক্রমণের শিকার হন নাগিব। মৌলবাদীরা তাঁকে কুপিয়ে আহত করে। প্রাণে বেঁচে গেলেও ওই আক্রমণের কারণে আমৃত্যু শারীরিক যন্ত্রণা সইতে হয়েছে তাঁকে।
কাহিনী সংক্ষেপ
বিশ্বাস এবং কার্যকারণের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব, সেটা এই উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। গেবেলোইয়ের সন্তান, উত্তরাধিকার ও শত্রুদের মধ্যকার যে সম্পর্ক ও ঘটনাপ্রবাহ, তা-ই তুলে ধরা হয়েছে উপন্যাসটিতে। গেবেলোই একই সঙ্গে ধনাঢ্য ও ক্ষমতাশালী একজন ব্যক্তি, যিনি অসৎ উপায়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন।
নিজের লোকজন ও পাঁচ পুত্রসন্তানের ওপর তিনি সব সময় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে ও কর্তৃত্ব করতে পছন্দ করেন। পাঁচ ছেলের মধ্যে সম্পদ দেখভালের দায়িত্ব দেন সবচেয়ে ছোট ছেলে আধহামকে। সম্পত্তির জন্য পরবর্তী সময়ে বড় ভাই ও বউয়ের দ্বারা প্রতারিত হন আধহাম। তবে সবকিছুর ওপরই গেবেলোইয়ের কর্তৃত্ব বজায় থাকে।
লেখক পরিচিতি
১৯১১ সালের ১১ ডিসেম্বর মিসরের রাজধানী কায়রোতে জন্ম নাগিব মাহফুজের। ১৯৮৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। আরবি সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ নিয়ে যাঁরা লেখালেখি শুরু করেন, নাগিব তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য। সাত দশকের দীর্ঘ লেখকজীবনে নাগিব মাহফুজ ৩৪টি উপন্যাস, সাড়ে তিন শতাধিক ছোটগল্প, এক ডজন চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য ও পাঁচটি মঞ্চনাটক লিখেছেন। তাঁর লেখা উপন্যাস অনূদিত হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায়।
কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে লেখাপড়া করেন নাগিব মাহফুজ। ১৯৩৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ করে মিসরীয় সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন তিনি। ১৯৭১ সালে অবসরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত মিসরীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
নাগিব মাহফুজের অন্যতম বিখ্যাত কাজ ‘দ্য কায়রো ট্রিলোজি’। প্যালেস ওয়াক (১৯৫৬), প্যালেস অব ডেজায়ার (১৯৫৭) ও সুগার স্ট্রিট (১৯৫৭)—এ তিনটি উপন্যাসকে একসঙ্গে বলা হয় কায়রো ট্রিলোজি। কায়রোর ভিন্ন ভিন্ন পরিবারের তিন প্রজন্মের কাহিনী বর্ণনা করেছেন তিনি এই ট্রিলোজিতে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকে ১৯৫২ সালে কায়রোর সামরিক অভ্যুত্থানের সময়কালে লেখা তিনটি উপন্যাসের প্রেক্ষাপট কায়রো শহর। ১৯৫২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিসরের রাজা ফারুককে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।
৪৩ বছর বয়স পর্যন্ত বিয়ে করেননি নাগিব মাহফুজ। তাঁর আশঙ্কা ছিল, বিয়ে করে সংসারে থিতু হলে তাঁর লেখালেখির ক্ষতি হবে। নিজের এই ভয়ের ব্যাপারে নাগিব মাহফুজ বলেন, ‘বিয়ে নিয়ে আমি খুব ভয়ের মধ্যে ছিলাম। বিশেষ করে যখন আমার ভাইবোনদের দেখতাম বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সময় দেওয়ার জন্য তাদের কত ব্যস্ত থাকতে হয়। দাওয়াতে যেতে হয়, আবার দাওয়াত করে খাওয়াতেও হয়। বিবাহিত জীবন সম্পর্কে আমার ধারণা, এটা আমার সব সময় নষ্ট করবে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবে, কোনো স্বাধীনতা নেই।’
তবে ১৯৫৪ সালে আতিয়াতাল্লাহ ইব্রাহিম নামের আলেক্সান্দ্রিয়ার এক নারীকে বিয়ে করেন নাগিব মাহফুজ। তাঁদের ঘরে দুই কন্যাসন্তান রয়েছে। তবে নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সব সময়ই খুব অন্তর্মুখী স্বভাবের ছিলেন নাগিব।
১৯৮৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান নাগিব মাহফুজ। এখন পর্যন্ত সাহিত্যে নোবেলজয়ী একমাত্র আরব নাগরিক তিনি।
** বিশ্বসেরা ১০০ বইয়ের তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে ব্রিটিশ পত্রিকা ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত তালিকা অবলম্বনে। এ তালিকা তৈরি করেছে ‘নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস’। বিশ্বের ৫৪টি দেশের ১০০ লেখকের কাছে তাঁদের চোখে সেরা ১০টি বই ও লেখকের নাম চেয়েছিল নরওয়েজিয়ান বুক ক্লাবস। ১০০ জন লেখকের দেওয়া সেই তালিকার ভিত্তিতেই যাচাই-বাছাই করে তৈরি করা হয়েছে এ তালিকা।
আরো পড়ুন...
১৬.কাফকার ‘দ্য ক্যাসেল’
১৫. জেফ্রি চসারের ‘দ্য ক্যান্টারবেরি টেলস’
১৪. টমাস মানের ‘বাডেনব্রুকস’
১৩.ফিওদোর দস্তয়েভস্কির ‘দ্য ব্রাদার্স কারামজোভ’
১২.বুক অব জব
১১.ফার্নান্দো পেসোয়ার ‘দ্য বুক অব ডিসকোয়ায়েট’
১০. হোসে সারামাগোর ব্লাইন্ডনেস
৯. আলফ্রেড ডোবলিনের বার্লিন আলেক্সান্দারপ্লাটজ
৮. টনি মরিসনের ‘বিলাভড’
৭. তলস্তয়ের ‘আন্না কারেনিনা’
৬. ভার্জিলের ঈনিড
৫. মার্ক টোয়েনের ‘দি অ্যাডভেঞ্চার্স অব হাকেলবেরি ফিন’
৪. উইলিয়াম ফকনারের ‘আবসালোম, আবসালোম!’
৩. গুস্তাভ ফ্লোবার্টের ‘সেন্টিমেন্টাল এডুকেশন’
২. হেনরিক ইবসেনের ‘এ ডলস হাউস’
১. জর্জ অরওয়েলের ‘নাইনটিন এইট্টি ফোর’