আগৈলঝাড়ায় নির্বাচনি সহিংসতায় আহত একজনের মৃত্যু, গ্রেপ্তার ৩
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আহত এক ভ্যানচালক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত ভ্যানচালক ওই গ্রামের মৃত সফিজউদ্দিন মিয়ার ছেলে। তার লাশ আজ সোমবার সকালে বরিশাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যান রইচ সেরনিয়াবাত, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হাশেম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ মো. লিটন সেরনিয়াবাত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
নিহত ভ্যানচালকের ছেলে উজ্জ্বল মিয়া বলেন, ‘১১ নভেম্বর বাগধা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মেম্বর পদে বিজয়ী হন আপেল প্রতীকের প্রার্থী শামীম মিয়া ওরফে লিকচান। ১৩ নভেম্বর সকালে ভ্যানযোগে মেম্বার শামীম খাজুরিয়া থেকে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সৌজন্য দেখা করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পরপরই পরাজিত মেম্বার প্রার্থী ইউনুস মিয়ার (টিউবওয়েল) নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৩৫ জনের সমর্থকের একটি দল লাঠিসোটা নিয়ে ওই ভ্যানে থাকা লোকজনের ওপর হামলা চালায়। হামলায় সাত থেকে আটজন আহত হয়। এ সময় ভ্যানচালক মোকলেসকে বেদম মারধর করা হয়। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার সকাল ৫টা ২০ মিনিটে চিকিৎসক ডা. সৈকত জয়ধর ভ্যানচালক মোকলেসকে মৃত ঘোষণা করেন।
ছেলে উজ্জল মিয়া আরও বলেন, ‘আমার দরিদ্র বাবা ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। বাবার একমাত্র উপার্জনই ছিল আমাদের পরিবারের ভরসা। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পরেও দুইপক্ষের সংঘর্ষে আমার বাবা বিনা কারণে মারধরের শিকার হয়ে মারা গেলেন।’
উজ্জ্বল আরও বলেন, ‘টিউবয়েল মার্কার মেম্বার প্রার্থী ইউনুস মিয়ার কর্মীসমর্থক খাজুরিয়া গ্রামের রিপন ফকির, স্বপন ফকির, হাফিজুল ফকির, হাসান ফকির, মামুন ফকির, বায়জীদ ফকির ও ছরোয়ার ফকিরসহ ২৫ থেকে ৩০ জন মিলে আমার বাবাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।’
মোকলেস মিয়ার স্ত্রী খাদিজা বেগম ও মেয়ে সালমা বেগম জানান, দুইপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে মারামারির ঘটনায় মোকলেস মিয়াকে বিনা অপরাধে মারধর করে হত্যা করা হলো। আমরা ঘাতকদের উপযুক্ত বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির দাবি জানাই।’
আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, টিউবয়েল মার্কার পরাজিত মেম্বার প্রার্থী ইউনুস মিয়ার কর্মী সমর্থকরা নির্বাচনের তৃতীয় দিন খাজুরিয়া গ্রামের আপেল মার্কার প্রার্থী মো. শামীম মিয়া লিকচানের সমর্থক দরিদ্র ভ্যানচালক মোকলেস মিয়া (৬৫) ভ্যান নিয়ে যাওয়ার সময় তার ওপর হামলা করে।
হামলার ঘটনায় গত শনিবার ২৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করে লিকচানের সমর্থক ইলিয়াস মিয়া বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।
ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মিলটন মণ্ডল অভিযান চালিয়ে গত শনিবার রাতে খাজুরিয়া গ্রামের তানভীর ইসলাম রাছেল (২৪), এনামুল হাওলাদার (২৬) ও গতকাল রোববার রাতে রফিক মিয়াকে (২৪) নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে বরিশাল আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম ছরোয়ার জানান, আজ সোমবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মোকলেস মিয়ার লাশ পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।