ইউএনও হত্যাচেষ্টা মামলায় রিমান্ড শেষে আদালতে রবিউল
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তাঁর বাবা ওমর আলী শেখকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি রবিউল ইসলামকে আদালতে হাজির করা হয়েছে।
ছয় দিনের রিমান্ড শেষে আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রবিউলকে দিনাজপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আনজুমান আরার আদালতে তোলা হয়। পরে তাঁকে বিচারকের খাস কামরায় নেওয়া হয়। সেখানে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া শুরু করেন।
এদিকে আদালতপাড়ায় আজ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
দিনাজপুর কোর্ট পরিদর্শক ইসরাইল হোসেন জানান, ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তাঁর বাবাকে হত্যার চেষ্টায় হামলাকারী মূল আসামি রবিউল ইসলাম আদালতে জবানবন্দি দিচ্ছেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত মই বেয়ে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে তাঁকে হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। এ সময় ইউএনওর চিৎকার শুনে পাশের কক্ষে থাকা তাঁর বাবা ছুটে এসে মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে দুর্বৃত্তরা তাঁকেও জখম করে। পরে কোয়ার্টারের অন্য বাসিন্দারা তাঁদের চিৎকার শুনে পুলিশকে খবর দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ওয়াহিদা খানমকে ঢাকায় আনা হয়। রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। ধীরে ধীরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন।
এ ঘটনায় ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বড় ভাই শেখ আরিফ হোসেন বাদী হয়ে গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে ঘোড়াঘাট থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।
এ মামলায় এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হলো মোট চারজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে আসামি নবিরুল ইসলাম ও সান্টু কুমারকে সাত দিনের রিমান্ড শেষে গত ১১ সেপ্টেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়। পরদিন ১২ সেপ্টেম্বর রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয় উপজেলা যুবলীগের সদস্য ও মামলার প্রধান আসামি আসাদুল হককে।
এর আগে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রবিউল জানিয়েছেন, এ ঘটনার তিনিই একমাত্র পরিকল্পনাকারী ও হামলাকারী। আক্রোশ থেকেই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। তাঁর দেওয়া তথ্যমতে হামলায় ব্যবহৃত হাতুড়ি, লাঠি, মই, চাবিসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁর পরনের প্যান্ট, হাতের ছাপসহ মোবাইলের লোকেশনের তথ্য আলামত হিসেবে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এসব আলামত বিচারকাজে সহায়ক হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর রবিউলকে নিজ বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দোষ স্বীকার করেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর এ বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) দেবদাস ভট্টাচার্য। তিনি জানিয়েছিলেন, রবিউল দায় স্বীকার করে জানিয়েছেন এ ঘটনায় প্রধান পরিকল্পনাকারী এবং একমাত্র হামলাকারী তিনি নিজে। পরে তাঁকে ওই দিনই আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ড চায় পুলিশ। আদালতের বিচারক তাঁকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রবিউল ইউএনও ওয়াহিদার কার্যালয়ে মালি হিসেবে কাজ করতেন। ইউএনওর ব্যাগ থেকে টাকা চুরির অভিযোগে গত জানুয়ারি মাসে তিনি বরখাস্ত হন।