কষ্ট করে ছেলেকে চীনে পড়তে পাঠিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় মা-বাবা
নতুন করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ধারণ করায় চীনে আটকেপড়া বাংলাদেশি ছাত্র আল মুরাদ (২৭) দেশে ফিরতে চাইলেও চার দেয়ালের ভেতর থেকে বের হতে পারছেন না। সুস্থ অবস্থায় বাড়িতে ফিরবেন কিনা, তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে মুরাদের পরিবার। দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েছেন মুরাদের মা-বাবাসহ পুরো পরিবার।
আল মুরাদ দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় ইউনিয়নের মখুরিয়া গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে। চার বছর আগে মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য চীনে যান মুরাদ।
আল মুরাদের বাবা লুৎফর রহমান বলেন, ‘গ্রামের খাট্টাউছনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে মুরাদ। এরপর সে নওগাঁ পলিটেকনিক কলেজে ভর্তি হয়। সেখান থেকে ২০১৬ সালে চীনে উচ্চতর পড়াশোনা করতে যায়। সম্প্রতি চীনে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় কয়েকশ আক্রান্ত মানুষ মারা যাওয়ায় ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ি।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিদিন ছেলের সঙ্গে ফোনে, ফেসবুকে ও ইমোতে কথা হচ্ছে। আমরা পরিবারের লোকজন ছেলের জন্য উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছি। আমি কৃষিকাজ করি। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে চীনে লেখাপড়া করার জন্য পাঠিয়েছি। সুস্থ থাকা অবস্থায় আমার ছেলে দেশে ফিরে আসুক। আমি সরকারের প্রতি এই অনুরোধ করছি।’
মুরাদের মা মোসাম্মৎ পিয়ারা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পর আল্লাহর কাছে ছেলের জন্য দোয়া করি। তিনি যেন আমার একমাত্র ছেলেকে সুস্থ অবস্থায় আমাদের কাছে ফিরে দেন।’
বোয়ালদাড় ইউনিয়নের সদস্য নুর ইসলাম জানান, লুৎফর রহমানের পাঁচ সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে মুরাদ। বোনদের সবার বিয়ে হয়ে গেছে।
এদিকে ফেসবুকের মেসেঞ্জারে আল মুরাদ বলেন, ‘আমি ২০১৬ সাল থেকে চীনের জেজিয়াং প্রদেশের হুজো সিটিতে হুজো বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছি। চলতি বছরের জুনে পড়াশোনা শেষ হবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে লাস্ট সেমিস্টার অফ হয়ে গেছে। আমাদের পাশের সিটিতে করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব কম হলেও হুবেই প্রদেশ বিপজ্জনক অবস্থায় আছে।’
মুরাদ আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও চীনের জেজিয়াং প্রাদেশিক সরকার আমাদের নিরাপত্তার বিষয়ে যথেষ্ট খোঁজখবর নিচ্ছে। দুই বেলা ফ্রি খাবার দিচ্ছে। তবে ক্যাম্পাসের বাইরে বের হতে দিচ্ছে না। দুই বেলা শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। এরপরও অনেক বিদেশি ছাত্রছাত্রী চীন ত্যাগ করেছে। আমরা এখানে দেড়শ বাংলাদেশি আছি। আমি সুস্থ আছি। (বাংলাদেশ) সরকারের কাছে আবেদন জানাই, নিরাপদে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করা হোক। প্রতিনিয়ত আমি হতাশা ও দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছি। পরিবারের কথা খুব মনে পড়ছে।’
এদিকে, গত ৩১ জানুয়ারি চীনের ইউনান প্রদেশ থেকে ভারতে আসেন বাংলাদেশি ছাত্র আবু রায়হান (২৩)। এরপর তিনি দিনাজপুরের হিলি চেকপোস্ট ব্যবহার করে দেশে ফেরেন। তিনি ইউনান প্রদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। তাঁর বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুর পৌরশহরের থানাপাড়ায়। তবে আবু রায়হানের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় করোনাভাইরাসের আলামত পাওয়া যায়নি। তারপরও তাঁকে বাড়িতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।