দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ছাগল চুরির অপবাদে শারীরিক প্রতিবন্ধী তরুণ ও এক কিশোরসহ তিনজনকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার দুপুরে ফুলবাড়ী উপজেলার ৭ নম্বর শিবনগর ইউনিয়নের রামভদ্রপুর বুদ্ধিজীবীর মোড়ে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

নির্যাতনের শিকার ওই তিনজন হলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী সৈয়দ শামীম হোসেন (১৮), রাকিবুল ইসলাম (১৯) ও এক কিশোর (১৪)।

এ ঘটনায় গতকাল রোববার দুপুরে রামভদ্রপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোস্তাকিম সরকার বাবু মাস্টারসহ আটজনের বিরুদ্ধে ফুলবাড়ী থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ করা হয়েছে।

থানায় করা অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শারীরিক প্রতিবন্ধী শামীম, রাকিবুল ইসলাম ও ওই কিশোরকে নিজবাড়ি থেকে গত শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কৌশলে ডেকে নেয়। তাদের রামভদ্রপুর গ্রামের বুদ্ধিজীবী মোড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর গ্রামের রূপচাঁদের ছাগল চুরির অপবাদ দিয়ে শিক্ষক মোস্তাকিম সরকার বাবু মাস্টার, শাকিব, শিপন, রেজাউল, আফজাল হোসেন, শুভ, হৃদয় ও নূরনবী ওই গ্রামের আরও বেশ কয়েকজন তিন কিশোরকে গাছের সঙ্গে বেঁধে লাঠিসোঁটা দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। চুরির স্বীকারোক্তি নিতে তিন কিশোরকে নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এদিকে, এই বর্বরোচিত নির্যাতনের ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণও করেছেন গ্রামের বেশ কয়েকজন যুবক।

জানা গেছে মারপিট শেষে বাবু মাস্টারসহ তাঁর সহযোগীরা আহত তিনজনকে ছাগল চোর আখ্যা দিয়ে শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদে হাজির করে। পরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই তিনজন অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই তিন পরিবারের লোকজন চিকিৎসার জন্য তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। একইসঙ্গে নির্যাতনের শিকার ওই কিশোর তার নিজ বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় কাতরাচ্ছে। এছাড়া গ্রামের মাতব্বরদের নির্যাতনের ভয়ে নিখোঁজ রয়েছে আরও দুই কিশোর।

নির্যাতনের শিকার শারীরিক প্রতিবন্ধী সৈয়দ শামীম হোসেন ও অন্য যুবক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ করেই বাবু মাস্টারসহ তাদের লোকজন আমাদের মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। পরে ছাগল চুরির অপবাদে পৈশাচিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতন সইতে না পেরে বাধ্য হয়ে চুরির অপবাদ স্বীকার করতে হয়েছে জীবন বাঁচাতে।’

কিন্তু তারা চুরি সম্পর্কে কিছুই জানে না বলে দাবি করেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ চৌধুরী বিপ্লব বলেন, ‘তার নির্দেশে বাদল মেম্বার ইউনিয়ন পরিষদে সোপর্দ করা দুই যুবককে নিজ নিজ অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’

ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফখরুল ইসলাম অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলেই দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’