দিনাজপুরে লাম্পি স্কিনে মারা যাচ্ছে গরু-বাছুর, দুশ্চিন্তায় খামারিরা
এমনিতেই সারা দেশে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। তার ওপর যোগ হয়েছে লাম্পি স্কিন রোগ। দিনাজপুরে গবাদি পশু গরু ও মহিষের গায়ে লাম্পি নামে একটি চর্মরোগ দেখা দেওয়ায় বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা। মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়াচ্ছে এই রোগ। জেলার সদর, বোচাগঞ্জ ও খানসামা উপজেলায় এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিয়েছে। নতুন এই রোগের কারণে বেশ কিছু গরুর মৃত্যু হয়েছে।
তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এটি খুব সাধারণ একটি রোগ। সঠিক চিকিৎসা দিলে এই রোগ থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
দিনাজপুর প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে ফুটকা বা পক্সের মতো ওঠে, ধীরে ধীরে এটি বড় বড় ঘায়ে পরিণত হয়। এর পর গরুর জ্বর আসে। বিশেষ করে ছোট বাছুর এতে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। মশা-মাছির দ্বারা এই রোগ ছড়ায়।
বোচাগঞ্জের খামারি ও দিনাজপুর খামারি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ জানান, তাঁর খামারে আড়াইশর বেশি গাভি রয়েছে। খামারে ১২টি গাভি লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শে ১০টি গাভি সুস্থ হয়েছে। এখন দুটি গাভি অসুস্থ রয়েছে। প্যারাসিটামলসহ বেশ কিছু ওষুধ রয়েছে, যা প্রয়োগ করলে এই রোগ থেকে ভালো হওয়া যায়।
মাসখানেক আগে দিনাজপুর জেলায় এই রোগের প্রথম আবির্ভাব হয়। আক্রান্ত গরুকে আলাদা করে রাখলে অন্য গরুদের মধ্যে এ রোগ ছড়ায় না।
দিনাজপুর প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুরে নিবন্ধিত এবং অনিবন্ধিত খামার রয়েছে প্রায় দুই হাজার। এতে গরু রয়েছে প্রায় ১৭ লাখ। এই রোগটি বিশ্বে পুরাতন হলেও গত বছর বাংলাদেশে এই রোগ দেখা দেয়। তবে এ জেলায় রোগটি চলতি মাসের জুনের শুরুর দিকে সদর, বোচাগঞ্জ ও খানসামা উপজেলায় বেশ কিছু গরুর গায়ে দেখা দেয়। গরুর গায়ে প্রথমে পক্সের মতো বের হয়ে ছড়িয়ে পড়ে পুরো গায়ে। এরই মধ্যে বেশ কিছু গরুর মৃত্যু ঘটেছে। নতুন এই রোগটি নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন খামারিসহ গৃহস্থরা।
সদর উপজেলার বালুবাড়ী এলাকার তুহিন ডেইরি ফার্মের খামারি তুহিন বলছেন, সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা নেওয়ার কারণে খামারের গরু রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। তবে তাঁরা নিয়মিত প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন। তিনি বলেন, অধিক তাপমাত্রার কারণে এই রোগের আবির্ভাব। তবে এই চর্মরোগ বড় গরুর চেয়ে বাছুর গরুতে বেশি আক্রমণ করে। জেলায় এখন পর্যন্ত ৫০টি গরু মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
দিনাজপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শাহিনুর আলম বলেন, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ করলে পুরোপুরি সুস্থ করানো সম্ভব। তিনি বলেন, দিনাজপুর জেলায় ১৬ লাখ ২১৪টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ৮০ হাজার গরুকে টিকা প্রদান করা হয়েছে। যার কারণে এরই মধ্যে সেসব গরু সেরে উঠেছে। মশা-মাছির মাধ্যমে এই রোগটি ছড়ায় এবং জ্বর হয়।
ডা. শাহিনুর আলম আরো বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে খামারগুলো পরিদর্শন করে খামারিদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই রোগ যাতে মহামারি আকার ধারণ না করে, সে জন্য আক্রান্ত তিনটি উপজেলায় ২২টি ভেটেরিনারি টিম গঠন করা হয়েছে। তবে জনবল সংকটের কারণে মাঠপর্যায়ে কাজ করতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে।’ এ জন্য তিনি সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অফিসের উপপরিচালক ডা. হাবিবুল হক বলেন, প্রাণিসম্পদ অফিস ইউনিয়ন পর্যায়ে তদারকি করছে, খামারিদের পরামর্শ দিচ্ছে। আতঙ্কিত বা উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এটি নিরাময়যোগ্য রোগ।
এদিকে সামনে কোরবানির ঈদ হওয়ায় খামারিরা গরুর দাম পাবেন কি না এই শঙ্কাও রয়েছে তাঁদের। খামারিরা জানান, গরু মোটাতাজা করে, বিশেষ করে পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় সে মোতাবেক দাম পাবেন কি না এই সংশয় তাদের মধ্যে রয়েছে। কোরবানির ঈদে দিনাজপুর জেলায় প্রায় সোয়া লাখ গরু কেনাবেচা হয়, যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণ করে থাকে। এ ছাড়া প্রায় এক লাখ পরিবার এই গরু লালন-পালনের ওপর নির্ভরশীল। দিনাজপুরে দুধের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ অন্য জেলায় দুধ সরবরাহ করে থাকে।