নওগাঁয় ইজিবাইকচালককে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ২
নওগাঁর মহাদেবপুরে নেশার টাকার জন্য ইজিবাইকচালক হাসান আলীকে গলাকেটে হত্যা করেন এখলাছ হোসেন ও তাঁর সহযোগী। পরে তাঁরা তাঁর ইজিবাইকটি ছিনতাই করে সেটি বিক্রির জন্য ওই চক্রের অপর সদস্য উপজেলার বনগ্রাম হঠাৎপাড়ার ময়নুল ইসলামকে দেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নওগাঁর পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুল মান্নান মিয়া তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান।
হাসান আলী হত্যার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল সোমবার বিকেলে নওগাঁর মান্দা উপজেলার মদনচক গ্রাম থেকে এখলাছ হোসেনকে (২১) আটক করে। এর আগে গতকাল দুপুরে ছিনতাই হওয়া ইজিবাইক বিক্রির কাজে সহযোগিতার অভিযোগে মহাদেবপুর উপজেলার ছাইতলতলী বাজার এলাকা থেকে উপজেলার বনগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা ভ্যানচালক ময়নুল ইসলামকে (৩০) গ্রেপ্তার করে। এখলাছ হোসেনের বাড়ি উপজেলার সফাপুর পূর্বপাড়ায়। হাসান আলীর (১৭) বাড়ি উপজেলার খোদ্দকালনা গ্রামে।
গত শনিবার দুপুরে ভাড়ার উদ্দেশে ইজিবাইক নিয়ে বের হয়ে হাসান আলী নিখোঁজ হন। পরের দিন সকাল ৬টার দিকে উপজেলার গোফানগর শাবইল এলাকার একটি ধানক্ষেত থেকে হাসান আলীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন হাসানের বাবা আহাদ আলী বাদী হয়ে মহাদেবপুর থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলার পর ঘটনার তদন্তে নামে মহাদেবপুর থানা পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, হাসান হত্যা মামলার তদন্তে নামার পর গতকাল দুপুরে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে মহাদেবপুর থানা পুলিশ জানতে পারে, উপজেলার ছাইতনতলী বাজারে রক্তমাখা একটি ইজিবাইকসহ একজন ব্যক্তিকে দেখা গেছে। তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে হাসানের ছিনতাই হওয়া ইজিবাইকসহ ময়নুল ইসলামকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ময়নুল পুলিশকে জানান, উপজেলার সফাপুর পূর্বপাড়ার এখলাছ হোসেন নামে তাঁর পরিচিত এক তরুণ গত শনিবার রাত ৯টার দিকে ইজিবাইকটি তাঁর কাছে নিয়ে আসেন এবং সেটি বিক্রি করে দিতে বলেন। ইজিবাইকটি বিক্রির জন্য গত রোববার তিনি ছাইতনতলী বাজারে নিয়ে এসেছিলেন। ময়নুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মান্দা উপজেলার মদকচক গ্রাম থেকে হাসান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এখলাস হোসেনকে গত রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আটক করে মহাদেবপুর থানা পুলিশ। আটক এখলাছ হোসেন ও ময়নুল ইসলামকে হাসান হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাঁদের আজ বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়।
পুলিশ সুপার আরও জানান, ১৬১ ধারায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হাসান আলী হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রধান আসামি এখলাছ হোসেন হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। এখলাছ হোসেন একজন মাদকসেবী। তাঁর মাদক সেবনের সঙ্গী অপর এক তরুণকে সঙ্গে নিয়ে ইজিবাইক ছিনতাই করে সেটি বিক্রি করে নেশার টাকা জোগাড়ের পরিকল্পনা করেন। ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশে গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মহাদেবপুরের কুঞ্জবন মোড় থেকে খাজুর বাজারে যাওয়ার কথা বলে হাসানের ইজিবাইক ভাড়া করেন এখলাছ হোসেন ও তাঁর সহযোগী। খাজুর বাজারে যাওয়ার পর তাঁরা চালককে বলেন ছাইতনতলী হাটে নামিয়ে দেওয়ার জন্য। ছাইতনতলী যাওয়ার পর তাঁরা বলেন শাবইল মোড়ে পর্যন্ত দিয়ে আসতে। শাবইল মোড়ে পৌঁছানোর পরই এখলাছ হোসেন পেছন থেকে হাসান আলীর গলায় ছুড়ি চালিয়ে হত্যা করেন। পরে তাঁরা হাসান আলীর লাশ রাস্তার পাশে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে ইজিবাইকটি নিয়ে চলে যান।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাবিনা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ টি এম মাইনুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার সুরাইয়া হোসেন, মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ, নওগাঁ সদর থানার (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিকেল ৩টার দিকে মহাদেবপুর থানার ওসি আজম উদ্দিন বলেন, বিকেলে গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামিকে আদালতে নেওয়া হয়েছে। আদালতে আসামিরা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলে তথ্য-প্রমাণ উদ্ধারের জন্য তাঁদের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হবে।