প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঘর পাচ্ছেন দিনাজপুরের প্রতিবন্ধী রুবিনা
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের মধ্যমপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল ওয়াহেদের মেয়ে রুবিনা বেগম (৩৬)। মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় এলাকায় ‘রুবি পাগলি’ নামেই পরিচিত তিনি।
পনেরো বছর আগে বিয়ে হয়েছিল রুবিনার। কিন্তু বিয়ের দেড় বছরের মাথায় রুবিনাকে ফেলে তাঁর স্বামী বিদেশ চলে যান। সেই থেকে গরিব বাবার সংসারে থাকেন রুবিনা। বেশ কয়েক মাস আগে বাবাকেও হারান রুবিনা। মা-বাবাহারা অসহায় রুবিনার ছোট ভাই আশরাফুল আলমও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী।
ছোট ভাইকে নিয়ে বাবার রেখে যাওয়া জরাজীর্ণ মাটির ঘরে থাকেন রুবিনা। বর্ষার পানিতে ধুয়ে গেছে মাটির ঘরের দেয়াল। কিছুদিন আগে রান্নাঘরটিও ভেঙে গেছে। বৃষ্টির দিনে ভাঙা টিনের চাল দিয়ে পানি পড়ে ঝুঁকিপূর্ণ ওই ঘরে।
বসবাসের অযোগ্য ঘরটি মেরামত করা বা নতুন ঘর বানানোর অর্থ নেই রুবিনা-আশরাফুলের। গ্রামে নতুন মানুষ দেখলেই তাঁদের কাছে যান রুবিনা। সম্প্রতি এক সাংবাদিককে দেখে রুবিনা বলেন, ‘তোরা কি সরকারি লোক বাহে? তোরা কি এটা (একটা) বাড়ি দিবার পারো হামাক? এ জগতে মোর কেউ নাই। সরকারেক কইয়্যা মোক এটা বাড়ি দে বাহে।’
রুবিনার দুর্দশার কথা গণমাধ্যমে উঠে আসে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে এলে দুস্থ ও দরিদ্র মানুষকে ঘর নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে তাৎক্ষণিক মানসিক প্রতিবন্ধী রুবিনার জন্য ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করা হয়।
সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ‘আবাসিক ভবন নির্মাণ’ খাতের আওতায় রুবিনা বেগম ও আশরাফুল আলমকে একটি সেমিপাকা ঘর নির্মাণে অর্থও বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে গুণগত মান বজায় রেখে নির্ধারিত নকশা অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে বাড়িটি নির্মাণ করে দিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়নে মুজিববর্ষের মধ্যে সব গৃহহীনের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার মানসিক প্রতিবন্ধী রুবিনা বেগমের জন্যও ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একটি সেমিপাকা ঘর নির্মাণে এরই মধ্যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। দ্রুততম সময়ে তাঁর জন্য ঘরটি নির্মাণ করে দেওয়া হবে।
‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’—এ স্লোগানে মুজিববর্ষের মধ্যে দেশের প্রত্যেক মানুষের জন্য নিরাপদ আবাসন নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।
এরই মধ্যে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই হাজার ৯৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ঘর নির্মাণ করে এক লাখ ৯২ হাজার ৩৩৬টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
১৯৯৭ সাল থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত তিন হাজার ৮৪০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই লাখ ৯৮ হাজার ২৪৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন-অসহায়-ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
দেশের সব মানুষের জন্য নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়ে এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে আমাদের লক্ষ্য বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। প্রতিটি এলাকা থেকে গৃহহীনদের খুঁজে বের করে ঘর করে দেওয়া হচ্ছে।’