ফুলবাড়িতে লকডাউন উপেক্ষা করে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ
আসামি গ্রেপ্তারের দাবিতে দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলায় সর্বাত্মক লকডাউন উপেক্ষা করে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবোরোধ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় উপজেলা দলীয় কার্যালয় থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে স্থানীয় নিমতলা মোড়ে এসে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে। এ সময় অবরোধকারীরা ফুলবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহারের দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
জানা গেছে, পৌর এলাকার পশ্চিম গৌরীপাড়ার আজিজার রহমান শাহর সঙ্গে একই এলাকার সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফার জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এই বিরোধের জেরে গতকাল বুধবার সকাল ১১টায় পৌর শহরের পার্বতীপুর বাসস্ট্যান্ডে আজিজার রহমানের পক্ষে থাকা ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ চৌধুরীর সঙ্গে গোলাম মোস্তফার পক্ষে থাকা একই ওয়ার্ডের পৌর নির্বাচনে কাউন্সিলরের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে শাহেদ ইসলামের বাকবিতণ্ডা শুরু হয়।
এ সময় উভয় পক্ষের লোকজন জড়ো হলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের ছয়জন আহত হয়। এদের মধ্যে গোলাম মোস্তফা, আসলাম ও মমিনুলের অবস্থা গুরুতর। পরে গোলাম মোস্তফাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ এবং আসলাম ও মমিনুলকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, আহতরা গতকাল সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে চিকিৎসা নিতে আসে। এ সময় তাদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর বিকেল সাড়ে ৪টায় পৌর কাউন্সিলর মামুনুর রশিদ চৌধুরীসহ চারজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজিজার রহমান শাহ বাদী হয়ে গতকাল বুধবার রাতে গোলাম মোস্তফা, শাহেদ ইসলামসহ ১০ জনকে আসামি করে ফুলবাড়ি থানায় একটি মামলা করেন। কিন্তু রাতেই গোলাম মোস্তফাসহ আসামিদের গ্রেপ্তার না করায় আজ বৃহস্পতিবার সকালে পৌর কাউন্সিলর মামুনুর রশিদ চৌধুরী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ করেন।
অবরোধ চলাকালে বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বেতদীঘি ইউপি চেয়ারম্যান উপাধ্যক্ষ আব্দুল কুদ্দুস শাহ, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নীরু সামসুন্নাহার, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার লিয়াকত আলী, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার এছার উদ্দিন, পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সাত্তারসহ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ফুলবাড়ি সার্কেল) আসাদুজ্জামান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রিয়াজ উদ্দিন ও উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন ঘটনাস্থলে গিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তারের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়।
সরকার ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউন অমান্য করার বিষয়ে কথা বলার জন্য পৌর কাউন্সিলর মামুনুর রশিদ চৌধুরীকে বার বার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ফুলবাড়ি থানার ওসি ফখরুল ইসলামকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, আন্দোলনকারীদের সতর্ক করা হয়েছে, এর পরও তারা লকডাউন ভঙ্গ করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, সর্বাত্মক লকডাউন অমান্য করে এমন বিক্ষোভ ও অবরোধ মেনে নেওয়া যায় না। তাদের সতর্ক করা হয়েছে। প্রয়োজনে সব অপরাধীর বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।