ফুলবাড়ীতে পানিতে তলিয়ে গেছে বোরো ধান, দিশেহারা কৃষক
দিনাপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় জলাবদ্ধতার কারণে কয়েকশ বিঘা জমির ধান এখন পানির নিচে আছে। ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় কৃষকের এখন দুর্বিষহ অবস্থা। টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পানিতে তলিয়ে গেছে ধান। সেইসঙ্গে শ্রমিক সংকটে চিন্তার ভাঁজ কৃষকদের কপালে। ফলে ফসল ঘরে তোলা নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা।
কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে উপজেলার খয়েরবাড়ী ও দৌলতপুর ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় কয়েকশ বিঘা জমির বোরো ধান তলিয়ে রয়েছে।
জানা গেছে, খয়েরবাড়ী ও দৌলতপুরের বেশ কিছু এলাকায় ধানের জমি পানির নিচে। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পাকা ধান দিয়ে শিকড় বের হচ্ছে। কৃষকরা কোমর পানিতে নেমে ধান কাটছে। আবার কেউ কেউ নৌকা ও কলার ভেলায় করে ধান কেটে সড়কে নিয়ে এসে মাড়াই করছেন। আবার যেসব কৃষকের ধান পুরোপুরি তলিয়ে গেছে তারা ফসলের আশা ছেড়ে দিয়েছে। সোনার ফসল হারিয়ে তারা এখন দিশেহারা। অনেক কৃষক পুজিঁ হারানোর হতাশায় কাঁদছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় কৃষকরা পড়েছে সর্বনাশের মুখে। ওই এলাকায় উজান থেকে বয়ে আসা বৃষ্টির পানি স্বাভাবিকভাবে খাল দিয়ে পাশের ছোটো যমুনা নদীতে প্রবাহিত হয়। কিন্তু গত দুই বছর ধরে এলাকায় একটি প্রভাবশালী চক্র পানি নিষ্কাশনের পথ রোধ করে পুকুর খনন করেছে। এতে পানি নেমে যেতে পারছে না। ফলে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের মহদীপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় ভারি বর্ষণে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে তাঁর পাঁচ বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। একইভাবে তলিয়ে গেছে তাঁর ভাই হাফিজুর রহমান ও সিরাজুলের ধানও।
বারাইপাড়া গ্রামের বাচ্চু মিয়া জানান, তাঁর দেড় বিঘা জমি তলিয়ে গেছে। একইভাবে তলিয়ে গেছে মহদীপুর গ্রামের রুহুল আমিন, আলম মিয়াসহ লালপুর, মহেশপুর, পূর্ব নারায়ণপুর, কিসমত লালপুর গ্রামের প্রায় ১৫০ জন কৃষকের ধান।
কৃষকরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ৩০ মণ করে বোরো ধান উৎপাদন হলেও পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ৩০ ভাগ ধানও তারা ঘরে তুলতে পারছেন না। পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার কারণে ধান কাটার শ্রমিকও পাওয়া যাচ্ছে না। এই কারণে প্রতি বিঘা জমির ধান কাটতে তাদেরকে তিন হাজারের বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এতে করে তাদের মাথায় হাত পড়েছে।
খয়েরবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু তাহের মণ্ডল বলেন, গত কয়েক বছর থেকে পানি নিষ্কাশনের পথ রোধ করে ঘোনাপাড়া মৌজায় পুকুর খনন করায় খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব নারায়ণপুর, লালপুর, মহদীপুর, মহেশপুর, কিসমত লালপুর ও উত্তর লক্ষ্মীপুর এবং দৌলতপুর ইউনিয়নের গড়পিংলাই ও বারাইপাড়া মৌজার প্রায় দুই হাজার ২০০ বিঘা জমির ফসল বিনষ্ট হচ্ছে। এই জমির মধ্যে বর্তমানের ৬০ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে, বাকি ৪০ ভাগ জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এই জন্য তিনি পানি নিষ্কাশনের পথ সৃষ্টি করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ টি এম হামিম আশরাফ বলেন বর্তমানে অনেক জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। ওই এলাকায় ২০ ভাগ জমির ধান তলিয়ে গেছে। এতে ১০ ভাগ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।