মাল্টা চাষে রাসেলের সাফল্য
ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ রসালো ফল মাল্টা। মাল্টা ফলের রয়েছে বিভিন্ন ঔষধি গুণ। মাল্টা ফলটি মূলত পাহাড়ি অঞ্চলে চাষ হলেও বর্তমানে চিরিরবন্দরের সমতল ভূমিতে চাষ হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সহযোগিতায় ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে বারি-১ জাতের মাল্টা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তিন থেকে চার বছর ধরে চাষ করছে কৃষকরা।
মাল্টা চাষ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে প্রথমে কিছুটা হতাশা কাজ করলেও ফলন ভালো হওয়ায় তাদের হতাশা কেটে গেছে। দূর-দূরান্ত থেকে মাল্টা বাগান ও গাছ দেখতে ছুটে আসছে মানুষ। এসব মাল্টা গাছ ও বাগান অনেককেই অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাগানে দৃষ্টিনন্দন মাল্টা ধরেছে। গাছে গাছে সবুজ পাতার আড়ালে ও ডালে ডালে ঝুলছে থোকায় থোকায় মাল্টা। বাতাসে মাল্টার টক-মিষ্টির গন্ধ।
২০১৭ সালে চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা মাল্টা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার কাজ শুরু করেন। দ্বিতীয় শস্য বহুমুখি প্রকল্পের আওতায় কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে বারি-১ জাতের মাল্টা গাছ সরবরাহ করা হয়। উপজেলার নশরতপুর ইউনিয়নের উত্তর নশরতপুর গ্রামের কৃষক আহসান হাবিব ওরফে রাসেল মাল্টার বাগান করে সফলতাও পেয়েছেন। তিনি ৩৩ শতক জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন। এতে ৭০টি গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছে এখন ঝুলছে মাল্টা। কদিন পরেই মাল্টা বাজারজাত করা হবে। প্রতিটি গাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ কেজি মাল্টা পাওয়া যায়। যা স্থানীয় বাজারে প্রতিকেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাল্টা চাষি সফল আহসান হাবিব রাসেল বলেন, ‘আমি আশা করছি এ বছর অন্তত ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি হবে।’
রাসেলের সাফল্য দেখে অনেকেই মাল্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। তাঁর দেখানো পথ ধরে মাল্টা চাষ করেছেন একই গ্রামের ফিরোজ আহম্মেদ। তিনি ২৫ শতক জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন। তাঁর গাছেও ফল ধরেছে।
এ ছাড়া উপজেলার ঈসবপুর ইউনিয়নের ব্যাঙ্গেরকাদো গ্রামের মো. মাজেদুল ইসলাম এবং ফতেজংপুর ইউনিয়নে মো. আব্দুল জলিল মাল্টা চাষ করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মাল্টা বারি-১ একটি উচ্চ ফলনশীল সুস্বাদু ফল। সাধারণত জুন থেকে জুলাই মাসে চারা রোপণ করতে হয়। মাল্টা গাছ রোপণের দুই বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। মাল্টা গাছে সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে ফল ধরে এবং এটি পরিপক্ব হয়ে কমলা রং ধারণ করে সেপ্টেম্বর মাসের দিকে। ফুল আসা থেকে শুরু করে ফল পাকতে সময় লাগে অন্তত ছয় মাস। প্রথম মৌসুমে ফলন একটু কম হয়। প্রতিটি গাছ থেকে বছরে গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মাল্টা পাওয়া যায়। উপজেলায় চারটি মাল্টার প্রদর্শনী প্লট এবং কৃষকরা নিজেরাই উদ্বুদ্ধ হয়ে আরো চারটি প্লট তৈরি করে মাল্টার চাষ করছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘মাল্টা একটি অর্থকরী ফসল। এটি চাষে এলাকার পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। মাল্টা চাষে আগ্রহীদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।’